হঠাৎ করেই নেই হয়ে গেলেন অপু বিশ্বাস। নির্মাতারা হন্যে হয়ে খুঁজছেন তাকে। নতুন ছবির প্রস্তাব নিয়ে তার দরজায় দীর্ঘ অপেক্ষা। তারপর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে প্রস্থান। কারণ অপুর সাড়া পাওয়া যায়নি। মিডিয়ার মানুষেরাও পই পই করে খুঁজে ফিরছেন তাকে। না কোথাও নেই হেমন্তের আকাশে পেঁজা পেঁজা মেঘের ভেলা ভাসানো মেয়ে সরলতা কন্যা অবন্তি বিশ্বাস অপু। মানে অপু বিশ্বাস। অপু যে এ দেশের দর্শকের কাছে কতটা জনপ্রিয় তার প্রমাণ পাওয়া গেল নতুন করে। মার্চ থেকেই তার দেখা নেই। অজানা কারণে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছেন তিনি। আর এ খবর যখনই মিডিয়ায় আসছে তখনই তার দর্শক ভক্তদের হা-পিত্যেশ বাড়ছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনে অপুর আড়াল হওয়ার খবর প্রকাশ হলেই ফোনের ঝড় ওঠে। সবাই উৎকণ্ঠিত হয়ে জানতে চায় অপুর খবর। কেন অন্তরালে, কোথায় আছেন তিনি ইত্যাদি ইত্যাদি। কেন অপুকে নিয়ে সবার এত আগ্রহ আর ভাবনা। কারণ সঙ্গত। এমন একজন মেধাবী শিল্পী আর সুন্দর মনের মানুষকে হারাতে চায় না কেউ।
২০০৪ সাল। মুক্তি পেল খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ছবি ‘কাল সকালে’। শাবনূরের বান্ধবী হিসেবে ছোট একটি চরিত্র অপুর। এই চরিত্রেই জ্বলে উঠলেন তিনি। নির্মাতারা নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দে উল্লসিত হলেন। সময়ের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা এফআই মানিক অপুকে নিয়ে নির্মাণ করলেন ‘কোটি টাকার কাবিন’। এই নির্মাতার হিসাব-নিকাশ সত্যি হলো। ২০০৬ সালে যখন ছবিটি নির্মাণ করছেন তিনি তখন ঢালিউডে শাবনূর, পূর্ণিমা, মৌসুমী, পপির রাজত্ব। এফআই মানিক নতুন মুখ অপুর মধ্যে অসামান্য সম্ভাবনা দেখলেন। শাকিবের বিপরীতে অপুকেই নিলেন। মেধাবী অপু মুখ রাখলেন নির্মাতার। এরপর তো অপু মানেই ঢালিউডের ইতিহাস। একনাগাড়ে মুক্তি পেল তার অভিনীত চাচ্চু, পিতার আসন, দাদীমা, মায়ের হাতে বেহেশতের চাবি, জন্ম তোমার জন্যসহ অনেক ছবি। সবই পরম মমতায় লুফে নিলেন দর্শক। ঢালিউডে রীতিমতো অপু-ঝড় শুরু হয়ে গেল। নির্মাতা আর দর্শকের পছন্দের নায়িকা মানেই অপু বিশ্বাস। বছরে ৮০ ভাগ ছবির নায়িকাই অপু। আর সবই হিট। বর্তমান সময়ের আরেক আলোচিত নির্মাতা বদিউল আলম খোকন বলেন, মেয়েটি যেন জাত শিল্পী। তিনি যে অভিনয় শিখে বড় পর্দায় আসেননি তা তার কাজ দেখে বোঝার উপায় নেই। পর্দায় নিজেকে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করে চরিত্রে মিশে যাওয়ার অসামান্য গুণ রয়েছে তার মধ্যে। তাই ক্যারিয়ারের শুরুতেই জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছেন তিনি। প্রখ্যাত নির্মাতা আমজাদ হোসেন অপুর প্রশংসা করে বলেন, তাকে প্রথম দেখেই মনে হয়েছিল নায়িকা হিসেবে যোগ্যতা দেখানোর মতো গুণ রয়েছে তার মধ্যে। ইচ্ছা ছিল তাকে নিয়ে একটি ছবি নির্মাণ করব। কিন্তু ছবির ব্যবসা খারাপ হওয়ায় আর ছবি নির্মাণ করতে পারলাম না আমি। কিন্তু আমার ধারণাই সঠিক হলো। ঢালিউডের ইতিহাসে অল্প সময়ে অসম্ভব জনপ্রিয় একজন নায়িকা হয়ে উঠলেন অপু। তার জন্য আমার শুভ কামনা রইল।
২০০৬ থেকে ২০১১। মানে টানা ছয় বছর নিঃশ্বাস ফেলার সময় ছিল না অপুর। দিনেরাতে সমানতালে বিরাম-বিশ্রামহীনভাবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো তার। মানসম্মত ছবি আর উন্নত চরিত্র দিয়ে ঢাকার ছবিকে দিলেন নতুন এক উপমা। মানে অপুময় ঢালিউড। অপুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ চারদিক।২০১২ সালের প্রথমভাগে এসে বিরতি দিলেন অপু। তখনো সবার মনে চরম হা-পিত্যেশ। কেন বড় পর্দায় নেই অপু। মাত্র ৬ মাসের বিরতি শেষে আবার উদ্ভাসিত অপু বিশ্বাস। ওই বছরের ঈদে ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবিটি নিয়ে বড় পর্দায় হাজির হন তিনি। আগের চেয়েও বেশি আকর্ষণীয়। নজরকাড়া রূপের আগুনে পুড়ল দর্শক-ভক্তের চোখ। মোহনীয় অপুকে নিয়ে সবার মনে ভালোবাসার ঝড়। সবার প্রশ্ন, এমন রূপের বন্যা কোথায় পেলেন অপু। মুচকি হেসে প্রিয়দর্শিনী অপু বলেন, অনেক সাধনার পর সবার মন রাঙাতে এলাম আবার। দিনক্ষণ না মেনে কাজের ভিড়ে কখন যে শরীরে শ্যাওলা জমে উঠেছে টের পাইনি। যখন বুঝতে পারলাম তখনই আপাতত বিরতি। মেদ ঝাড়ার কসরত করলাম। সফল হলাম। তারপর নতুন রূপে ফিরে এলাম। যুগ যুগ ধরে দর্শক হৃদয়ে এভাবেই বেঁচে থাকতে চাই। তাকে আবার কাছে পেয়ে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। পরম মমতায় মনের গভীরে ঠাঁই দিলেন। এখন অপুর দর্শক-ভক্তের একটিই প্রশ্ন— আবারও কি নতুন রূপে ফিরে আসার জন্য তার এই আড়াল হওয়া। আরও মোহনীয় এক অপুকে খুঁজে পাবেন তারা তাদের চারপাশে। নতুন অপুকে ফিরে পাওয়ার প্রতীক্ষায় আছেন এখন তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা। তাদের এক কথা— ‘গুঞ্জনের মুখে ছাই দিয়ে হেমন্ত কিংবা বসন্তের সুন্দর সকালে আমাদের হৃদয়ে ফিরে আসবেন আমাদেরই চির ভালোবাসার অপু বিশ্বাস। আবারও হেঁটে যাবেন তিনি ঢালিউডের অনন্ত পথ ধরে...।