শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বড় পর্দায় রবীন্দ্রনাথ

কবিগুরুর রচনা নিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চাষী নজরুল ইসলাম ‘শাস্তি’ ও ‘সুভা’ এবং কাজী হায়াৎ নির্মাণ করেছেন ‘কাবুলীওয়ালা’। তিনটি চলচ্চিত্রের গল্পই কালোত্তীর্ণ, দেশ, কাল, জাতিভেদের গণ্ডিমুক্ত। দর্শক বোদ্ধারা চলচ্চিত্রগুলো গ্রহণ করেছেন, প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে

শোবিজ প্রতিবেদক

বড় পর্দায় রবীন্দ্রনাথ

চোখের বালি - শাস্তি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বকবি। তার রচনা নিয়ে এ দেশে যদিও সংখ্যা অনুপাতে চলচ্চিত্র নির্মাণের হার খুবই কম, তবে কিছুটা হলেও হয়েছে। কবিগুরুর রচনা নিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। এর মধ্যে চাষী নজরুল ইসলাম ‘শাস্তি’ ও ‘সুভা’ এবং কাজী হায়াৎ নির্মাণ করেছেন ‘কাবুলীওয়ালা’। তিনটি চলচ্চিত্রের গল্পই কালোত্তীর্ণ, দেশ, কাল, জাতিভেদের গণ্ডিমুক্ত। দর্শক বোদ্ধারা চলচ্চিত্রগুলো গ্রহণ করেছেন, প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। পাশাপাশি নার্গিস আক্তার কবিগুরুর ‘সমাপ্তি’ গল্প অবলম্বনে নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র ‘অবুঝ বউ’। বরীন্দ্র রচনা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ নিসর্গ ও নান্দনিকতার কবি। সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথকে জানতে হলে শতবর্ষ পরেও বাংলাদেশে আসতে হবে। সত্যিই তিনি যথার্থ বলেছেন। তার কথা আমার শিরোধার্য। কারণ বাঙালি শব্দের সঙ্গে কোনো বিশেষণ যোগ করতে হলে বাঙালির শ্রেষ্ঠ সম্পদ রবীন্দ্রনাথের কথাই চলে আসে। আমাদের দুর্ভাগ্য। এ দেশের চলচ্চিত্রের বয়স পঞ্চাশ পেরুলেও রবীন্দ্রসাহিত্য নিয়ে কেউ চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে আসেনি।’ কাজী হায়াৎ বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি জাতির শিল্প-সংস্কৃতির ধারক-বাহক। তাকে বাদ দিয়ে বাংলা নয়। তার রচনা, শিল্প-সত্তা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে বিশ্ব দরবারে বাঙালি জাতিকে মহিমান্বিত করেছে। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের। কাবুলীওয়ালা। সার্থকও হয়েছে। জাতীয়সহ নানা পর্যায়ে সম্মান পেয়েছে চলচ্চিত্রটি। এ অর্জন আমার নয়, বিশ্বকবির। কারণ বিশ্বকবির সৃষ্টি নিয়ে কর্মের স্বীকৃতি তো বিশ্বকবিরই হবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি জাতির অহঙ্কার, গর্ব। তাকে বাদ দিয়ে, তার রচনাকে গুরুত্ব না দিয়ে কাজ করা বাঙালি জাতিকেই খাটো করা। এ কাজটি আমরা করতে চাই না। রবীন্দ্র রচনাবলী নিয়ে আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গনে আরও বেশি পরিমাণে কাজ হবে এটাই আমার প্রত্যাশা। কারণ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য রবীন্দ্রনাথের গল্প-উপন্যাস অত্যন্ত সাবলীল, সুবিন্যস্ত ও প্রাণবন্ত। তার রচনার ভাঁজে ভাঁজে চলচ্চিত্রের ভাষা দ্যুতি ছড়ায়, আলো জ্বালায়।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনাবলী কলকাতার চলচ্চিত্র শিল্পকে করেছে সমৃদ্ধ। তার উপন্যাস, গল্প, কবিতা নিয়ে আঠারশ’ শতক থেকে বর্তমান পর্যন্ত অজস্র চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলো একদিকে যেমন শিল্পমান সমৃদ্ধ হয়েছে অন্যদিকে তেমনি রবীন্দ্রপ্রেমীদের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। ১৮৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের ৩৪ বছর পর ১৮৯৫ সালে চলচ্চিত্রের উদ্ভাবন হয়। ১৯২০ সালে ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন গল্পের চলচ্চিত্রায়ণ করার উদ্যোগ নিলেও ১৯২৩ সালে নরেশচন্দ্র মিত্রের পরিচালনায় বাংলা চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রথম চিত্ররূপ মানভঞ্জন। এরপর ১৯২৮ সালে শিশির ভাদুড়ি বিসর্জন ও বিচারক নামের দুটি ছবি করেন। ১৯২৯ সালে ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় তপতী ছবিটি নির্মাণ শুরু করলেও চার রিল পর্যন্ত শুটিং হয়। বিশ্বকবি নিজে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য রাজি হলেও বিদেশ ভ্রমণের কারণে ছবির কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। ১৯৩০ সালে দালিয়া ও গিরিবালা নামের দুটি সাহিত্যকর্মের চলচ্চিত্রায়ণ হয়।

১৯৩২ সালে সবাক চলচ্চিত্র নটীর পূজা ও চিরকুমার সভা মুক্তি পায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিচালিত একমাত্র চলচ্চিত্র নটীর পূজা। মাত্র চার দিনে ছবির শুটিং শেষ হয়। শান্তিনিকেতনের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনীত এ চলচ্চিত্রে উপালির চরিত্রে অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং।

এরপর নরেশ মিত্রের নির্বাক ছবি নৌকাডুবি (১৯৩৮), সবাক ছবি গোরা (১৯৩৮), সেতু সেনের চোখের বালি (১৯৩৮) নির্মিত হয়। ১৯৬১ সালে চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় রবীন্দ্রনাথের তিনটি ছোটগল্প সমাপ্তি, পোস্টমাস্টার ও মনিহারা নিয়ে নির্মাণ করেন তিনকন্যা ছবি। ‘নষ্টনীড়’ গল্প অবলম্বনে চারুলতা (১৯৬৪), ঘরে বাইরে (১৯৮৪)। ২০০৪ সালে ঋতুপর্ণ ঘোষ নির্মাণ করেন ‘চোখের বালি’, ২০১০ সালে ‘নৌকাডুবি’ অন্যতম। এই চলচ্চিত্র দুটি জাতীয়সহ নানা সম্মানে ভূষিত হয়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর