শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

তারেকের স্বপ্নগুলোই বেঁচে থাকার প্রেরণা

আজ ১৩ আগস্ট, সেই ৎয়াল মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির দিন। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন দেশের বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর। তারেক মাসুদের স্বপ্নগুলো আজও বুকে লালন করে বেঁচে আছেন সহধর্মিণী ক্যাথরিন মাসুদ। আর সেই স্বপ্নগুলো নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।

আলী আফতাব

তারেকের স্বপ্নগুলোই বেঁচে থাকার প্রেরণা

একটু প্রথম থেকে শুরু করতে চাই। তারেক মাসুদের সঙ্গে আপনার পরিচয়টা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

এটি ১৯৮৭ সালের কথা। আহমদ ছফার মাধ্যমে তারেকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তখন সুফি এস এম সুলতানের ওপর তথ্যচিত্র আদম সুরত নির্মাণের কাজ করছে তারেক। সুফি সুলতানের সঙ্গে এরও আগে আমার পরিচয় ঘটেছে। আমি ফাইন আর্টসের শিক্ষার্থী হওয়ায় সুলতানের প্রতি একটু দুর্বলতা ছিল। তারেক চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ওপর তথ্যচিত্র নির্মাণ করছে শুনে আমার বেশ আগ্রহ হলো। তখন এ তথ্যচিত্রটির ইংরেজি অনুবাদের জন্য তারেক আমার কাছে আসে। এ চলচ্চিত্রের কাজের সূত্রেই আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বটা তৈরি হয়। 

 

তারেক মাসুদের সঙ্গে শেষ স্মৃতি যদি বলেন?

আমরা তো সেদিন একই সঙ্গে ছিলাম। গাড়িতে তারেক বেশ উত্ফুল্ল ছিল। অনেক গল্প করছিলাম ছবির লোকেশনের গল্প, সুফি সুলতানের গল্প। গল্পের মধ্যেই এ দুর্ঘটনটা ঘটল। সৈনিকের যেমন স্বপ্ন থাকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রাণ দেওয়ার, ওরা সিনেমার সৈনিক। তারেক-মিশুকরাও চলচ্চিত্রের কাজের মধ্যেই প্রাণ দিয়েছে।

 

তারেক মাসুদের জীবন ও চলচ্চিত্র ভাবনা নিয়ে বলুন

তারেক নিজের কর্ম নিয়ে ভাবত না, দেশকে নিয়ে ভাবত। মানুষ নবচেতনায় প্রতিনিয়ত উঠে দাঁড়াবে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম একটি শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড়াবে এবং নিজেরা শানিত হবে। সে মনে করত তরুণ প্রজন্মের মাঝে শক্তি দিতে হবে। সর্বোপরি তার স্বপ্ন ছিল দেশকে নিয়ে।

 

তারেক মাসুদের হাত ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কতখানি পরিবর্তন হয়েছে?

আমি ঠিক এভাবে বলব না। একটি দেশের চলচ্চিত্রে একাধিক চলচ্চিত্রিক ভাষা তৈরি হতে পারে এবং বাংলাদেশে একাধিক ভাষা তৈরি হয়েছে। বিএফডিসি থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে সেগুলোতে এক ধরনের ভাষা নির্মিত হচ্ছে। চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে যারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন তাদের চলচ্চিত্রে আরেক ধরনের ভাষা নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশের শর্ট ফিল্মেও এক ধরনের ভাষা নির্মাণ হচ্ছে। দিন পরিবর্তন হয়, সমাজ তথা দেশ বদলায়, বদলায় মানুষের ভাষাও। চলচ্চিত্র তো মানুষ ও জীবনের বাইরে নয়, ফলে চলচ্চিত্রেরও ভাষা পরিবর্তন হতে পারে।

 

তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পরিকল্পনা সম্পর্কে শুনতে চাই?

সামনে আমাদের অনেকগুলো কাজ রয়েছে। তারেকের কিছু অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে হবে। তারেক মাসুদের সাক্ষাৎকার নিয়ে চলচ্চিত্র কথন নামের একটি বই প্রকাশ করব। তারেক মাসুদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি। এটা নিয়েও কিছু কাজ করব। সেখানে লাইব্রেরি থাকবে, ছোট একটা মিলনায়তন থাকবে। এ বছরই রানওয়ে ছবির নেপথ্য গল্প নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করব। তাছাড়া ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমরা একটা কাজ করছি, যেটা তারেক শুরু করে গিয়েছিল।

 

কাগজের ফুল চলচ্চিত্রের কাজ শুরু হচ্ছে কবে?

এটা অনেক বড় একটা কাজ। আগে অন্য কাজগুলো একটু গুছিয়ে নিয়ে তারপর এ কাজটা শুরু করতে যাচ্ছি। কাগজের ফুল তো একটু বড় ক্যানভাসের কাজ। এটা নিয়ে পরিকল্পনা করছি। এখনই বলতে পারছি না কবে কাজটা শুরু করছি।  তবে এ বছরের মধ্যে ছোট ছোট কাজগুলো গুছিয়ে নিয়ে কাগজের ফুল নির্মাণের কাজ আমরা শুরু করব।

সর্বশেষ খবর