শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হুমায়ূন আহমেদের ভূমিকায় ইরফান খান?

হুমায়ূন আহমেদের ভূমিকায় ইরফান খান?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নতুন ছবি ‘ডুব’ এ ইরফান খানের অভিনয় ও প্রযোজনার খবর বেশ পুরনো। কিন্তু ছবির গল্প, প্রেক্ষাপট সবারই ছিল অজানা। কী এমন গল্প বানিয়েছেন ফারুকী যেটাতে ইরফান কেবল অভিনয়ই করেননি একেবারে প্রযোজক বনে গেলেন। ভারতীয় পত্রিকা আনন্দবাজারের দাবি, বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইরফান খান। সত্যিই কি তাই? ফারুকীর দাবি, ‘আমরা কোনো বায়োপিক বানাচ্ছি না।’ আবার চরিত্রের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদকে পাওয়া যাবে না এমনটাও তিনি বলেননি। আসলে ঘটনা কী? এ নিয়ে লিখেছেন— আলী আফতাব

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’ সিনেমা নিয়ে সর্বশেষ খবর ছিল ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ হচ্ছে মুম্বাইয়ে। ঢাকাই ছবিতে ইরফান খানের অভিনয় এবং প্রযোজক হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার কারণে আগে থেকেই দারুণ আলোচনা আর কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে এই ছবিটি। সেই কৌতূহলে নতুনমাত্রা যোগ করেছে শুক্রবার আনন্দবাজারের একটি খবর। সেই খবরই সব জল্পনা-কল্পনার সূত্রপাত। সত্যিই কি ‘ডুব’ ছবিতে বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ইরফান খান? ছবির গল্প কি সত্যিই হুমায়ূন আহমেদকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে?

এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর দেননি ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন ‘আমি পরিষ্কার করে বলছি, ছবির ক্রেডিট বা ক্যাম্পেইনে বা কমিউনিকেশন ম্যাটেরিয়ালে আমরা কখনই দাবি করিনি বা করার কোনো সম্ভাবনাও নেই যে আমরা হুমায়ূন আহমেদের বায়োপিক বানাচ্ছি। আমরা কোনো বায়োপিক বানাচ্ছি না। হুমায়ূন আহমেদের সুখ-দুঃখ আমাদের স্পর্শ করেছিল তীব্রভাবে। আমি সহজে আমার চোখের জল ফেলি না এবং পাবলিক স্পেসে তো আবেগ দেখানোর প্রশ্নই আসে না। কিন্তু তার মৃত্যু আর মৃত্যু-পরবর্তী কয়টা দিন আমার সেই কাঠিন্য টলিয়ে দিয়েছিল।’

সেই অনুভূতি থেকেই কি ‘ডুব’ তৈরি করেছেন ফারুকী? এমন প্রশ্নের জবাবও এড়িয়ে যান ফারুকী। দাবি করেন, তার ফেসবুক স্ট্যাটাসেই আনন্দবাজারের পুরো খবরের ব্যাখ্যা আছে। এরপরও তার কাছে এ বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি- আমি একজন হুমায়ূন-ভক্ত। গল্প নিয়ে বেশি কিছু বলব না। কেবল বলব এটি স্রেফ একটি পরিবারের গল্প। কয়েকজন মানুষের ভালোলাগা-মন্দলাগা, দুঃখ-সুখ, ক্ষোভ-হিংসা আর মানবিক সব আবেগ নিয়েই ছবির গল্প। বলে রাখা ভালো পৃথিবীর সব বিখ্যাত পরিচালকের গল্পই আশপাশ থেকে নেওয়া। একজন ঔপন্যাসিক যেমন তার চারপাশ থেকে টুকরো টুকরো গল্প আর মুহূর্ত নিয়ে উপন্যাস সাজান, একজন পরিচালকও ঠিক তাই। হুমায়ূন আহমেদের কথাই যদি বলি, তার প্রায় সবগুলো গল্পে ফুটে উঠেছে তার পাশ-পাশের বিভিন্ন বিচিত্র চরিত্র। এরকমই কিছু চরিত্রের অনুভূত আর দিনযাপন নিয়ে ডুব-এর গল্প।’

তাহলে কি আনন্দবাজারের দাবি ভুল? এ প্রশ্নে ফারুকীর জবাব, ‘সেই তর্কে আমি যাব না। গল্প নিয়ে এখনই কিছু বলব না। যে যার মতো প্রেডিক্ট করুক। সিনেমা রিলিজের পরই আসলে পুরোটা দেখা যাবে।’

প্রসঙ্গ এড়িয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় সিনেমার পোস্ট প্রোডাকশন নিয়ে। কেমন দাঁড়িয়েছে শেষ পর্যন্ত? ‘নিজের কাজ নিয়ে নিজের মূল্যায়ন চলে না। তবে ছোট্ট একটা ঘটনা বলতে পারি। একদিন ইরফান খানের বাসায় এই ছবিটি দেখার আয়োজন করা হয়। সেখানে গুটিকয়েক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।  তার মধ্যে আমি, ইরফান খান ও তার স্ত্রী, একজন চলচ্চিত্রের প্রফেসার আর একজন বলিউডের ডিরেক্টর। ছবিটি দেখা শেষে আমরা সবাই ঘণ্টা দুয়েক ডুবে ছিলাম এই ছবির গল্পের মধ্যে। অনেকের চোখ দেখলাম আবার লাল হয়ে গেছে। আমি আসলে অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছিলাম এমন একটি ছবি বানাতে। আমি শুধু বলব এটি একটি পরিবারের গল্প, একটি ভালোবাসার গল্প। ভালোবাসা চলে গিয়ে আবার ফিরে আসার গল্প।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী যতই লুকোছাপা করেন না কেন আনন্দবাজার পুরো ঘটনাই ফ্ল্যাশ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, সত্যি সত্যি হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইরফান খান। শুধু তাই নয়, হুমায়ূনকে জানার জন্য শুটিংয়ের আগে তার প্রচুর ভিডিও দেখেছেন ইরফান। একই খবর অনুযায়ী হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রে ইরফান ছাড়াও তার কন্যা শীলা আহমেদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং প্রথম পক্ষের স্ত্রী গুলতেকিনের ভূমিকায় রয়েছেন রোকেয়া প্রাচী। অন্যদিকে গুলতেকিনের সঙ্গে ডিভোর্সের পর হুমায়ূন আহমেদ বিয়ে করেন তার কন্যার সমবয়সী মেহের আফরোজ শাওন-কে। শাওনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন টালিগঞ্জের পার্নো মিত্র।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সর্বশেষ ছবি ছিল ‘পিঁপড়াবিদ্যা’। এরপর ‘ডুব’ এ ইরফান খানের অভিনয়েই উপমহাদেশে দারুণ সাড়া পড়ে। এবার নতুন আলোচনা শুরু হলো ছবির মূল চরিত্র নিয়ে। পরিস্থিতি যা বলছে তাতে অধিকাংশের ধারণা যে, ছবির মূল চরিত্রটি হয় তো সত্যিই হুমায়ূন আহমেদ। হয় তো চরিত্রটির নাম ভিন্ন, গল্পেরও ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু ‘সেই পরিবার’ ‘সেই দ্বিধান্বিত মানুষটি’ হুমায়ূন আহমেদ হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। নইলে অযাচিতভাবে বার বার হুমায়ূন প্রসঙ্গ আসা সত্ত্বেও এটি কেন অস্বীকার করলেন না ফারুকী? আর কেনইবা বার বার আশপাশ থেকে গল্প নেওয়ার কথা বললেন? কেনইবা বার বার নিজের হুমায়ূন-ভক্তি প্রকাশ করলেন? ফারুকীর আশপাশ থেকে নেওয়া গল্পের সূত্র পাশের মানুষটি হুমায়ূন আহমেদ কেন হতে পারেন না? পরিচালকের কথার সূত্র ধরেই বলা যায়, বায়োপিক না হোক সাধারণ একজন হুমায়ূন আহমেদের গল্প সেলুলয়েডের ফিতায় ঠাঁই পেতেই পারে। ঠিক হুমায়ূনের অন্য আট-দশটি আশ্চর্য চরিত্রের মতো!

বহু আলোচনার জন্ম দেওয়া ছবিটির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজও এখন শেষ। এটি প্রযোজনা করছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া, অশোক ধানুকার এস কে মুভিজ এবং ইরফান খান স্বয়ং।

সর্বশেষ খবর