গত বুধবার ‘শিল্পে বাঁচি, শিল্প বাঁচাই’ প্রতিপাদ্য নিয়ে হয়ে গেল দিনব্যাপী টেলিভিশন শিল্পী ও কলাকুশলী সমাবেশ। টিভি সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীরা সংগঠন এফটিপিও আয়োজিত কর্মসূচিটিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একত্রিত হয়ে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। এই আন্দোলনে যুক্ত দেশের কিছু স্বনামধন্য শিল্পীর ক্ষোভ ও দাবির কথা তুলে ধরেছেন পান্থ আফজাল।
মামুনুর রশীদ
যখন দেখছি মিডিয়াতে বিশৃঙ্খলা ও ডাবিং নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, দেশীয় সংস্কৃতি বিপদের মুখে পড়ছে, শিল্পীদের অস্তিত্ব বিপদের মুখে তখনই আমরা আন্দোলনে নেমেছি। কারণ আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া শিল্পী ও কলাকুশলীদের আর কোনো উপায় নেই। সব সমস্যা সমাধানের জন্য একটি মজবুত ঐক্যের প্রয়োজন।
রাইসুল ইসলাম আসাদ
যারা শিল্পকে নিয়ে বাঁচতে চায়, তারাই শিল্পচর্চা করে। আমরা এই শিল্পকে বাঁচাতেই আন্দোলনে নেমেছি। বর্তমানে যে অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছি, তা আমাদের কাম্য নয়। এর থেকে উত্তরণ প্রয়োজন।
গাজী রাকায়েত
শিল্পীরা আজ তাদের সম্মান আদায় করতে মাঠে নেমেছেন। বিদেশি সিরিয়াল বা অনুষ্ঠান বন্ধ করতে এবং কিছু অরাজক পরিস্থিতি থেকে দেশীয় সংস্কৃতিকে বাঁচাতে আজ আমরা আন্দোলনে একত্রিত হয়েছি। আমরা আমাদের এই আন্দোলনে সফল হব। ৫ দফা আদায় শিল্পী ও কলাকুশলীদের অন্যতম দাবি। এতে শিল্পী ও শিল্প দুটোই বাঁচবে।
আফজাল হোসেন
আসলে বলার কিছুই নেই। আমি মনে করি, শিল্প ও শিল্পীকে বাঁচাতে হবে। শিল্পী ও কলাকুশলীদের দাবি কিন্তু একটাই— সেটা হলো সম্মান। আমরা যা করি সম্মানের জন্যই করি। সম্মান বাঁচানোর আন্দোলনে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।
শহীদুজ্জামান সেলিম
শিল্পীরা সবাই একমঞ্চে দাঁড়িয়েছে। অভিনয়শিল্পীদের ক্ষোভগুলো প্রকাশ করার কোনো জায়গা নেই। আজকে আমরা তেমন স্থান পেয়েছি সেই কথাগুলো বলার জন্য। আমাদের আত্মবিশ্বাসের এতই অভাব হয়ে গেছে, বাংলাদেশে যেন কোনো নাট্যকার, নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী, চিত্রগ্রাহক নেই! আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
তৌকীর আহমেদ
টেলিভিশন চ্যানেলের বিনিয়োগকারীদের দায়িত্ব— যোগ্য, শিক্ষিত, নাটক জানা মানুষকে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য বসানো। মিডিয়াতেও দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। এই দুর্নীতির প্রতিবাদ করি। এ দুর্নীতি নীতির। কারণ এতে জাতির মন এবং মানস জড়িত। কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা না রাখলে এফডিসির যে জীর্ণদশা হয়েছে, টিভি শিল্পের ভবিষ্যৎও তা-ই দাঁড়াবে।
বিপাশা হায়াত
টেলিভিশন মিডিয়া একটি দেশের মানুষের মনন এবং রুচি তৈরি করে। সেই টেলিভিশনে এখন নাটক নামে যা প্রচার হয় তা সত্যিই হতাশাজনক। বর্তমানে অনুষ্ঠানের মান নিয়ন্ত্রণ এবং নির্ধারণ করার মতো যোগ্যতা আজকের টিভি চ্যানেলগুলোর আছে বলে আমি মনে করি না। এ দেশে শিল্প তৈরি হবে কী করে? আমার ঘর যদি অরক্ষিত থাকে তাহলে চোর অবশ্যই এসে ঢুকবে।
জাহিদ হাসান
আমরা বিশেষ উদ্দেশ্যে আজ মাঠে নেমেছি। আমরা বাক্সবন্দী ছিলাম, বাক্সের মধ্যে থাকতাম, টেলিভিশনের মধ্যে থাকতাম। আজকে আপনারা আমাদের রাস্তায় নামিয়েছেন।
আমরা যদি একবার হাঁটাচলা শুরু করি, অনেক ধরনের সমস্যা হবে। ভুলে যাচ্ছেন আমরা শিল্পীরা আবেগ দিয়েই মানুষের মন জয় করেছি। আমাদের সবার কথা এক, দাবিও এক। শিল্প বাঁচলে, শিল্পী বাঁচবে।