সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এবার টিভি ভবনের সামনে শিল্পী কলাকুশলীদের আন্দোলন

আলী আফতাব

এবার টিভি ভবনের সামনে শিল্পী কলাকুশলীদের আন্দোলন

ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিক বন্ধের দাবিতে দেশের চারটি টিভি চ্যানেলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিভি সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের সংগঠনগুলোর জোট সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)।

শনিবার সকালে ঢাকার সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এফটিপিওর নেতারা জানান, দেশের সব টিভি চ্যানেল যেন দ্রুত বিদেশি ডাবিংকৃত সিরিয়াল বন্ধ করে এবং আমাদের অন্যান্য দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সেজন্য তাদের এই অবস্থান কর্মসূচি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ দীপ্ত টেলিভিশন, ২০ ডিসেম্বর একুশে টেলিভিশন, ২৮ ডিসেম্বর এসএ টিভি এবং ২৯ ডিসেম্বর মাছরাঙা টেলিভিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবে এফটিপিও। নাট্যকার সংঘের পক্ষে মাসুম রেজা  জানান, প্রতিটি চ্যানেলের সামনে বেলা ১১টা থেকে ২ ঘণ্টা করে তাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।

 

এ প্রসঙ্গে দীপ্ত টেলিভিশনের চিফ অপারেটিং অফিসার উরফি আহমেদ বলেন, ‘বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ করার কোরো নীতিমালা সরকারের কাজ থেকে আমাদের কাছে আসেনি। আমরা সরকারের নীতিমালার বাইরে কোনো কিছু করছি না। ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও) যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে, এটি তাদের দিক থেকে সঠিক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয় তাদের সঙ্গে বসে এটির সমাধান করতে হবে। আমি এই সংগঠনটিকে বলতে চায়, আপনারা আমাদের অফিসে আসুন আমরা বসে একটি সিদ্ধান্ত নেই।

 

এই বিষয়ে জানতে চায়লে একুশে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান ফারহানা নিশো বলেন, ‘নিয়ম সবার জন্য এক। সবাই যদি এই পাঁচ দফা মেনে নিতে রাজি হয় আমি কেন পারব না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমি না হয় বন্ধ করে দিলাম আমাদের টেলিভিশনের সিরিয়াল। কিন্তু তার পরে কী হবে। আমাদের মোট ২৭টি অনুষ্ঠান নির্ভর টিভি চ্যানেলে আছে। তার মধ্যে ছয়টি টিভি শুরু বিদেশি সিরিয়াল প্রচার করে, তাও আবার আধা ঘণ্টা করে। কিন্তু বাকিটা সময় প্রচার হচ্ছে খবর ও দেশীয় সিরিয়াল। আপনাকে যদি বলা হয় কোন টিভিতে, দেশীয় কোন সিরিয়ালটা দেখার জন্য আপনি প্রতিদিন টিভির সামনে বসে থাকেন?  আমার মনে হয় অনেকেই তা বলতে পারবে না। কিন্তু এখন  অনেকেই আছেন প্রতিদিন টিভির সামনে বসেন ‘সোলতান সোলেমান’ দেখার জন্য। আর এই বাস্তবতাটা আমাদের মেনে নিতেই হবে। কারণ আমাদের নতুন কোনো কনটেন নেই। আমাদের নতুন কিছু করতে হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশনেও বিদেশি সিরিয়াল প্রচার হতো কিন্তু তার পরও মানুষ বসে থাকত ‘কোথাও কেউ নেই, সংসপ্তক, বহুব্রীহি, সকাল সন্ধ্যা ইত্যাদি নাটক দেখার জন্য দর্শক কিন্তু টিভির সামনে।  ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে যে দিন বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হবে। সেদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু কষ্টের কথা হলো, গত দশ বছরে আমরা ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো একটি নাটক দর্শককে দেখাতে পরিনি। এই বিশ্বায়নের যুগে আমরা না হয় বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ করে দিলাম। রিমোট কিন্তু দর্শকদের হাতে। ভালো কাজ তা পেলে দর্শক কিন্তু অন্য চ্যানেলে চলে যাবে।

অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে এস এ টেলিভিশনের চিফ অপারেটিং অফিসার সালাউদ্দিন জাকী বলেন, ‘আমার বেড়ে ওঠা এই বাংলা সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে। আমার দেশের স্বার্থে, চ্যানেল সংস্কৃতির স্বার্থে, সংস্কৃতির স্বার্থে আমি এমন কোনো কিছুই করতে যাব না। কিন্তু চ্যানেলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি হবে এমন কোনো কিছুই আমাদের জানানো হয়নি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমরা গভীর চিন্তা করছি। ’

 

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কনফারেন্স রুমে বক্তৃতা করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ, সদস্য সচিব গাজী রাকায়েত, অভিনেতা আহসান হাবীব নাসিম, প্রযোজক আলী বশির, নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন প্রমুখ।

আগের পাঁচ দফা দাবির সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে আরও বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেন এফটিপিওর নেতারা।

তাদের নতুন দাবিগুলো হচ্ছে— বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য সময়সীমা নির্ধারণ, নাটকের বাজেট যৌক্তিকহারে বৃদ্ধি, কপিরাইট আইন বহাল রাখা, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে প্রিভিউ কমিটি গঠন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্ভুল ও যথাযথ টিআইপি ব্যবস্থা চালু করা, ভারতে বাংলাদেশের চ্যানেল চালু করা ও তাদের সব ডাউন লিংক ফির সঙ্গে এদেশের চ্যানেল ডাউন লিংকের যে অসম ফি আছে তা অপসারণ করা ও এফটিপিওকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া।

প্রসঙ্গত দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বাংলায় ডাবিংকৃত বিদেশি সিরিয়াল বা অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধকরণ, অনুষ্ঠান নির্মাণ, ক্রয় ও প্রচারের ক্ষেত্রে এজেন্সির হস্তক্ষেপ ছাড়া সরাসরি চ্যানেলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ, টেলিভিশন শিল্পের সর্বক্ষেত্রে এআইটির ন্যূনতম ও যৌক্তিক হার পুনঃনির্ধারণ, দেশের টেলিভিশন চ্যানেলে বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলীদের অবৈধভাবে কাজ করা বন্ধকরণ, ডাউন লিংক ফিড/চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধকরণ এই পাঁচ দফা দাবিতে গত ৩০ নভেম্বর রাজপথে নামে টেলিভিশনের শিল্পী ও কলাকুশলীদের জোটভুক্ত সংগঠন এফটিপিও।

সর্বশেষ খবর