শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকাই সিনেমার নতুন রানী কে?

ঢাকাই সিনেমার নতুন রানী কে?

ঢাকাই ছবির নায়িকাদের জনপ্রিয়তা সেই যাত্রালগ্ন থেকেই ছিল। জহরত আরা, সুমিতা দেবী, সুচন্দা, শবনম, শাবানা, চম্পা, দিতিরা সবাই জনপ্রিয় হয়েছেন। সাড়া জাগিয়েছিলেন মৌসুমী, শাবনূর, পূর্ণিমা, পপিরা। এরপর সংকটের শুরু। অপু বিশ্বাস শাকিবের সঙ্গে একাই সামাল দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনিও এখন মাঠের বাইরে। এরপর কে? কাজ অনেকেই করছেন। মাঠে থাকা নায়িকাদের হিসাব-নিকাশ তুলে ধরছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

রানীর মুকুট কার মাথায় শোভা পাবে বলা কঠিন। তবে এক্ষেত্রে সবার আগেই আসে পরীমণির নাম। ছবি মুক্তির আগেই আলোচনার শীর্ষে এসেছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ ছবি দিয়ে বড় পর্দায় আসেন পরী। সংখ্যার বিচারে অনেক এগিয়ে থাকলেও সাফল্যের ক্ষেত্রে পরীমণি অনেকটাই পিছিয়ে। শাকিব খানের মতো শীর্ষনায়কের সঙ্গে দুই ছবিতে অভিনয় আর জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘রক্ত’ নিয়ে সবার প্রত্যাশা ছিল পরী ঢালিউডে শক্ত অবস্থান গড়ে নেবেন। কিন্তু তেমনটি না হলেও পরীমণির হাতে ছবির সংখ্যা অনেক। কাজ করছেন প্রায় সবার সঙ্গে। এর মধ্যে মালেক আফসারীর ‘অন্তরজ্বালা’ এবং গিয়াসউদ্দীন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’সহ বেশকটি আলোচিত ছবি পাল্টে দিতে পারে তার অবস্থান। সমালোচনা যাই থাকুক অন্য সবার চেয়ে পরীই এগিয়ে আছেন। অপেক্ষায় আছেন দর্শক-নির্মাতারা।

 

ছোট পর্দার প্রিয়মুখ বিদ্যা সিনহা মিম এগিয়ে আছেন আরও অনেকের চেয়ে। ২০০৮ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘আমার আছে জল’ ও পরের বছর জাকির হোসেন রাজুর ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’ ছবিতে সম্ভাবনা দেখালেও গত বছর পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া বাকি ৬টি ছবিতে মিম সেই চমক আর ধরে রাখতে পারেননি। কিন্তু মিমের হাতের একাধিক ছবি আর চোখ ধাঁধানো গ্ল্যামার পাল্টে দিতে পারে সব হিসাব-নিকাশ।

 

অনেক সম্ভাবনার পরও যিনি পিছিয়ে আছেন তিনি মাহিয়া মাহি। ২০১২ সালে জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘ভালোবাসার রঙ’ দিয়ে যাত্রা শুরু । ২০১৩ সালে ‘অগ্নি’ ছবিতে মারকুটে চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন। তবে ছবিটি সফলতা ভাগ হয়ে যায় মাহি ও ছবির নায়ক শুভর মধ্যে। ২০১৫ সালে জাজের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, বিয়ে এবং স্ক্যান্ডালসহ নানা কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়েন এই নায়িকা। তবে বর্তমানে ‘হারজিৎ’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’সহ কয়েকটি ছবিতে কাজ করছেন মাহি। ফেরার জন্য মরিয়া মাহি নতুন করে চমকে দিতে পারেন সবাইকে।

 

২০১০ সালে ইফতেখার চৌধুরীর ‘খোঁজ’ দিয়ে বড় পর্দায় আসেন ববি। গত বছর পর্যন্ত অনন্ত, শাকিব খান, মারুফ, বাপ্পি, সায়মন ও মিলনের বিপরীতে তার এক ডজন ছবি মুক্তি পেলেও নায়িকা হিসেবে বড় মাপের সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হন তিনি। তবে বর্তমানে নিজের প্রযোজিত ও অভিনীত ‘বিজলী’ ছবি নিয়ে  স্থায়ী আসন গড়ার অপেক্ষায় আছেন। চলছে আরও একাধিক ছবির কাজ। গ্ল্যামার আর অভিনয় দিয়ে ববি চাইলেই পেছনে ফেলতে পারেন অনেককে।

 

ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০১৫ সালে যৌথ আয়োজনের ছবি ‘আশিকী’ দিয়ে বড় পর্দায় আসেন নুসরাত ফারিয়া। এই নায়িকাকে নিয়ে দর্শক-নির্মাতারা সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখলেও পরের ছবি ‘হিরো ৪২০’ ফ্লপ এবং ‘বাদশা’ ছবির কৃতিত্ব জিতের দখলে চলে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়েছেন ফারিয়া। এরপরও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে একাধিক ছবিতে অভিনয় করছেন। তার বিশ্বাস, এবার নিজেকে নতুন করে ঠিক তুলে ধরতে পারবেন। 

তালিকার এবারের নামটি বড় চমক। গত বছরের শেষ দিকে শাকিবের বিপরীতে ‘বসগিরি’ আর ‘শুটার’ ছবি দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক শবনম বুবলীর। শুরু থেকেই অভিনয় নয়, শাকিবের সঙ্গে সম্পর্ক, অপুর স্থান দখলসহ নানা সমালোচনা চলতে থাকে এই নায়িকাকে নিয়ে। চলতি বছর তার দক্ষতা প্রমাণ ও সমালোচনা থেকে নিজেকে মুক্ত করার সময় বলে মত দিয়েছেন নির্মাতারা। তবে ঢালিউডের শীর্ষনায়ক শাকিবের সঙ্গে বোঝাপড়াটাই তার জন্য সবচেয়ে বড়- মানছেন সবাই। আর এটি ঠিক থাকলে বুবলী টপকে যেতে পারেন সবাইকে। তবে সঙ্গে অভিনয়, ইন্ডাস্ট্রি আর ভাগ্যটাও সুপ্রসন্ন হওয়া চাই বুবলীর।

২০১৩ সালে ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’ দিয়ে বড় পর্দায় আসেন আইরিন। এরপর আরও দুটি ছবি মুক্তি পেলেও সাফল্য আসেনি। এখনো একাধিক ছবির কাজে ব্যস্ত তিনি। অন্যদিকে দুই বাংলার ছবিতে ব্যস্ততা দেখালেও বাণিজ্যিক ছবিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি জয়া। ২০১১ সালে ‘গেরিলা’ ছবিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার মিললেও মেকআপ আর স্কার্টে লুকোতে পারেননি বয়স। এ ছাড়া কলকাতার ছবির দিকে ঝুঁকে পড়ায় ঢালিউডে শক্ত অবস্থান গড়তে ব্যর্থ হচ্ছেন জয়া আহসান।

মূলত ছোট পর্দার শীর্ষ মুখ। এরপরও টেলিভিশন, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, মেন্টাল, অস্তিত্ব ছবিগুলোর মাধ্যমে ভিন্ন এবং বাণিজ্যিক— উভয় ধারার ছবিতেই অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিশা। তার ‘ডুব’ ছবিটি রয়েছে দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। এরপরও বাণিজ্যিক ধারায় তিনি চূড়ান্ত সাফল্য কেমন পাবেন সেটা সময়ই বলে দেবে।

 

‘ভোলাতো যায় না তারে’ ছবি দিয়ে তানহা তাসনিয়ার শুরু। শাকিবের সঙ্গে ‘ধূমকেতু’ মুক্তি পায়। আগামীতে তার একাধিক ছবি পাল্টে দিতে পারে সব হিসাব। অনেকেই তার মধ্যে দেখছেন অপার সম্ভাবনা। ২০১১ সালে ‘ভুল’ দিয়ে যাত্রা শুরু করা আঁচলকে সবাই ভুলতে বসেছে। এখন আর আলোচনায় নেই তিনি। আঁচলের মতো রেসিও সম্ভাবনা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝে অনিয়মিত হয়ে পড়ে ছিটকে পড়েন। অপু বিশ্বাসের পাশাপাশি নিপুণ আলাদা স্থান তৈরি করেছিলেন শাবনূরোত্তর ইন্ডাস্ট্রিতে। চলচ্চিত্রকারদের মতে, অভিনয়ে মুনশিয়ানা দেখালেও অপুর মতো জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেননি নিপুণ। ছোট পর্দায় ঝুঁকে পড়লে তার কপালে জোটে এভারেজ নায়িকার তকমা। অভিষেকের চার বছর পর ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ ছবি সাহারাকে স্টার বানিয়ে দেয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এরপর আর ওভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি সাহারাকে। বিয়ে করে সংসারী হন তিনি।

 

এই তালিকার সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ীর নাম ছিল অপু বিশ্বাস। ২০০৬ সালের ‘কোটি টাকার কাবিন’ থেকে ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সম্রাট’ পর্যন্ত অনেকগুলো সফল ছবি উপহার দিয়েছেন অপু। ২০১২ সালের মাঝামাঝি হঠাৎ অভিনয় থেকে দূরে সরে যান। কিন্তু নিজের নতুন লুক নিয়ে ফিরলেন এবং আবারও পেলেন সাফল্য। সব যখন ঠিকঠাক তখনই ২০১৬ সালের মার্চের শেষ নাগাদ এসে আবারও অপু চলে গেলেন আড়ালে। অবশ্য এর মধ্যেই তিনি জানান দিয়েছেন ফিরছেন। অসমাপ্ত কাজ যেমন শেষ করবেন, তেমনি নতুন চমকের কথাও জানিয়েছেন।

এর মধ্যে বড় পর্দায় আরও অনেকে তরী ভিড়িয়েছেন। কেউ শুরুতেই শেষ হয়ে গেছেন আবার কেউ আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন। এসব নায়িকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন- জলি, অমৃতা, রুহী, জাকিয়া বারী মম, প্রসূন আজাদ, পিয়া, ভাবনা, মিমো, শম্পা, হ্যাপী, ফারজানা রিক্তা, তানিয়া বৃষ্টি, মৌসুমী হামিদ, দীপালি, রোমানা, আলিশা প্রধান, প্রিয়ন্তী, মিষ্টি জান্নাত প্রমুখ। নির্মাতা বদিউল আলম খোকনের মতে ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নতুনদের মধ্যে অভিনয় শেখা আর সময়জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কম। তারা এসেই অল্প পরিশ্রমে অর্থ আর খ্যাতি অর্জন করতে চায়। আবার অনেকে নানা স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়ে। তাই তাদের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়। চলচ্চিত্র জগৎও দর্শকদের নতুন মুখ উপহার দিতে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থার উন্নয়নে শিল্পকে ভালোবেসে আর একে প্রফেশন হিসেবে গ্রহণ করে নতুনদের এগিয়ে আসতে হবে।’

সর্বশেষ খবর