শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিমের জলকাব্য...

আলাউদ্দীন মাজিদ

মিমের জলকাব্য...

জল দিয়ে রুপালি পর্দায় গড়ালেন লাক্স সুন্দরী বিদ্যা সিনহা মিম। ২০০৭ সালে প্রখ্যাত কলম-জাদুকর প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ তাকে নিয়ে নির্মাণ করলেন ছায়াছবি ‘আমার আছে জল’। প্রথম ছবিতেই সাগরের লোনা জলে ঢেউ তুলে সফলতার জোয়ার আনলেন এই জলকন্যা। তারপর তো শুধুই জলে গ্লামারের আলো জ্বালানো নয়, ছোট পর্দার নাটক আর টিভিসিতেও সফেদ ডানা মেলে আলোর বন্যা বইয়ে দিলেন মিম।

বড় পর্দায় মিমের প্রথম ছবি ‘আমার আছে জল’ ছিল অনেকটা ভিন্নধর্মী তকমার। এ ধরনের ছবির দর্শক সীমিত হলেও সবার প্রশংসায় ভাসলেন তিনি। নিজের সক্ষমতা অবলীলায় প্রমাণ করে দিলেন।

এবার নিজেকে ভাঙার পালা। নতুন অবয়বে বাণিজ্যিক মানে মাসালাদার ছবিতে হাঁটলেন তিনি। ২০০৯ সালে শাকিব খানের বিপরীতে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’ ছবিতে কাজ করলেন। ছবিটি মুক্তির আগে অনেকে বলতে শুরু করলেন মেয়েটি সুশ্রী বটে, অভিনয় ‘অ’টাও ভালো আয়ত্ত করেছেন। তবে বাণিজ্যিক ছবিতে নিজেকে কতটা ফুটিয়ে তুলতে পারবেন তাতে কিন্তু সন্দেহ রয়েছে। নানা জনের নানা নেতিবাচক মন্তব্যে নির্মাতার কপালেও চিন্তার ভাঁজ বাড়তে শুরু করল। না, শেষ পর্যন্ত এখানেও জলকন্যার জয়জয়কার। শাকিবের মতো তুখোড় অভিনেতার সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে তর তর করে এগিয়ে গেলেন মিম। সমালোচকদের চোখ ছানাবড়া। সবাই মেনে নিলেন মিমের মাথার ওপর আসলে সফলতার বরপুত্র ছায়া দিয়ে রেখেছেন। এখানেই শেষ নয়। পরের ঘটনা আরও চমকপ্রদ। ২০১৪ সালে প্রয়াত খালিদ মাহমুদ মিঠুর ‘জোনাকির আলো’ ছবিতে কাজ করলেন। এবার প্রশংসা আর বাণিজ্যিক সফলতা উতরে তিনি পৌঁছে গেলেন জাতীয় পুরস্কারের ঘরে। ছবিটির জন্য এই জলকন্যা তার সাফল্যের ঝুড়িতে পুরে নিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর অর্জন। একই বছর মোস্তফা কামাল রাজের ‘তারকাঁটা’ ছবিটি দিয়ে রীতিমতো সাফল্যের সীমানা ভেঙে দিলেন। হলভর্তি দর্শক তার অভিনয় দেখে দুই হাতকে সামলাতে বেশ বেগ পেয়েছেন। করতালির বন্যায় ভাসিয়ে দিলেন ভালোলাগার জলকন্যাকে। পরের বছর মানে ২০১৫ সালে তন্ময় তানসেনের ছবিতে আবার জলকন্যা হয়ে হাজির হলেন মিম। অভিনয় করলেন এই নির্মাতার ‘পদ্মপাতার জল’ ছবিতে। দর্শক ছবিতে মিমকে অনন্যরূপে দেখে নিঃসংকোচে বলে উঠলেন, ‘আহা মরি মরি, এ কী রূপের বন্যা জলকন্যার’। এতে তার অভিনয়ের প্রশংসার পারদ ঊর্ধ্বগগনে লতিয়ে উঠল। কে আর থামায় মিমের জলপথে হাঁটাকে। এবার দেশের সীমানা ছাড়ালেন মিম। অভিনয় করলেন কলকাতার সঙ্গে যৌথ আয়োজনের ছবি ‘ব্ল্যাক’-এ। নিজের অনিন্দ্য রূপের ঝলকে ওপার বাংলার দর্শকের চোখ-মুখ ঝাপসা করে ছাড়লেন এপার বাংলার এই জলকন্যা। কলকাতার দর্শক বললেন, ‘মাইরে, এ তো দেখছি সাক্ষাৎ ডানাকাটা পরী, আহা এমন রূপ কে দেখেছে শতবর্ষে।’ আবার জলকন্যার রূপের ঝড়। ২০১৬ সালে ওয়াজেদ আলী তার ছবিতে ‘সুইটহার্ট’ বানিয়ে ছাড়লেন এই ডানাকাটা পরীকে। তীক্ষ অভিনয় ক্ষুরধারে সবার হৃদয়ে আরও মিষ্টি হয়ে উঠলেন জলকন্যা। এরপর অনন্য মামুনের ‘আমি তোমার হতে চাই’। দর্শক ছবিটি দেখে বললেন, ‘আর কার হতে বাকি আছে তোমার, তুমি তো আমাদের সবার।’

চলতি বছর তানিয়া আহমেদের ছবিতে মিম বললেন, ‘ভালোবাসা এমনই হয়।’ আসলেই তাই, মিমের মতো এমন রূপসী কন্যার ভালোবাসা তো এমনই হওয়ার কথা। যে ভালোবাসার তুফান থামতেই চায় না। মিম তার প্রেমকে আরও বেগবান করতে এবার আসছেন মনতাজুর রহমান আকবরের ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’, তারেক শিকদারের দাগ, আর তেলেগু নায়ক অরিন্দমের সঙ্গে ‘রকি’ ছবির জ্বলজ্বলে আলো নিয়ে। এ তো গেল মিমের বড় পর্দার কাব্য। মিম কিন্তু লিখিয়ে হিসেবেও সুনাম বাড়িয়েছেন। ২০১২ সালের একুশের বইমেলায় তার ‘শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভেজা’ আর ২০১৩ সালে ‘পূর্ণতা’ উপন্যাস দুটি দিয়ে পাঠকের হৃদয়ও সমান দুুলিয়েছেন তিনি। মিম বলেন, আমার উপন্যাস একটি মেয়ের জীবনের কয়েকটি অধ্যায়, টানাপড়েন আর সংগ্রামের কথা নিয়ে’। পাঠক বলেছেন, মিম শুধু গ্লামার নন, নারীদের কষ্ট নিয়েও ভাবতে জানেন। পাঠকের এই অনুভূতিই মিমের জলকাব্যের আসল পূর্ণতা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর