বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকার সিনেমা হলের দৈন্যদশা

ঢাকার সিনেমা হলের দৈন্যদশা

সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হল পূর্ণিমা

সিনেমা হল বন্ধ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সর্বশেষ চলতি মাসে বন্ধ হয়ে গেল ঢাকার কারওয়ান বাজারের পূর্ণিমা সিনেমা হলটি। সিনেমা হলটির পরিচালক আমির হোসেন কাঞ্চনের কথায়—পর্যাপ্ত ও ভালো ছবির অভাবে দর্শক আসে না। টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া যায় না। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিলসহ অন্যান্য খরচ তো কোনোভাবেই মেটানো যাচ্ছে না। ১৯৮৮ সালে চালু হয়েছিল এই সিনেমা হলটি। ঢাকার সিনেমা হলের দৈন্যদশার কথা তুলে ধরেছেন—আলাউদ্দীন মাজিদ

 

সিনেমা হলের বর্তমান সংখ্যা

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির হিসাব অনুযায়ী নব্বই দশক পর্যন্ত সারা দেশে সিনেমা হল ছিল এক হাজার ৪৩৫টি। বর্তমানে আছে ২৭৮টি। ঢাকায় সিনেমা হল ছিল ৪৪টি। বর্তমানে রয়েছে ২৬টি। বর্তমানে কোনোভাবে চালু থাকা সিনেমা হলগুলো হলো—চিত্রা, আজাদ, মানসী, অভিসার, নেপচুন, গীত, পুনম, সংগীত, মধুমিতা, জোনাকী, রাজমণি, রাজিয়া, পদ্মা, সুরমা, বলাকা, বিজিবি, মুক্তি, এশিয়া, পর্বত, পূরবী, সনি, শাহীন, সৈনিক ক্লাব, আনন্দ, ছন্দ ও শ্যামলী।

 

ঢাকায় বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হল

ঢাকায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৯টি সিনেমা হল হলো—স্টার, মুন, লায়ন, রূপমহল, শাবিস্তান, তাজমহল, আগমন, অতিথি, জ্যোতি, সাগরিকা, গ্যারিসন, বিউটি, মল্লিকা, পূর্ণিমা, গুলিস্তান, নাজ, ডায়না, যমুনা ও মেঘনা।

 

কেন বন্ধ হচ্ছে সিনেমা হল

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, সিনেমা হলের ব্যবসা মন্দা হওয়া শুরু হয় নব্বই দশকের শেষ দিক থেকে। তখন এর কারণ ছিল ভিসিআর, ডিশ ও পাইরেসি। ভিসিআর আর ডিশের মাধ্যম দর্শক ঘরে বসে ছবি দেখতে পায় বলে সিনেমা হল-বিমুখ হতে শুরু করে। আর ছবি মুক্তি পাওয়ার পর পরই অল্প টাকায় পাইরেটেড ছবি কিনে ঘরে বসেই ছবি দেখতে শুরু করে। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় অশ্লীলতা। এ কারণে তখন থেকে পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৬ সালের পর অশ্লীলতার দাপট কমে এলেও পর্যাপ্ত মানসম্মত ছবির অভাবে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তের দর্শক আর সিনেমা হলে ফিরছে না।

 

যেভাবে সিনেমা হল ভাঙা শুরু

মিয়া আলাউদ্দীনের কথায় সিনেমা হল ভাঙা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। ওই বছর রাজধানীর গুলিস্তান ও নাজ সিনেমা ভাঙা হয়। কথা ছিল ওই দুটি সিনেমা হলের জায়গায় বিপণি বিতান এবং তার ওপর সিনেমা হল তৈরি হবে। কিন্তু ২০তলা ভবন তৈরি হলেও তাতে আজও স্থান পায়নি সিনেমা হল। ব্যবসায়িক মন্দার আশঙ্কায় সিনেমা হল নির্মাণে আগ্রহ হারিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তার কথায় সারা দেশের সিনেমা হলের চিত্র এমনই হতাশাজনক।

 

সিনেমা হলে দর্শক ফিরছে না যে কারণে

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার নওশাদ বলেন, যেভাবে মানহীন ও স্বল্প সংখ্যক ছবি নির্মাণ হচ্ছে, তাতে সিনেমা হল চালু রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আশির দশকে ইংরেজি ছবি আমদানি করে সিনেমা হল চালানো যেত। এখন হলিউডের ছবির মান আর আগের মতো নেই। তা ছাড়া এসব ছবি ডিভিডি ও স্যাটেলাইট চ্যানেলে দেখা যাচ্ছে। তাই সিনেমা হলে এসে দর্শক আর তা দেখতে চাচ্ছে না। ভারতীয় ছবি আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো পুরনো আর একাধিকবার তা দর্শক স্যাটেলাইট চ্যানেল ও ডিভিডিতে দেখেছে বলে সিনেমা হলে এসে আর দেখতে চায়নি।

 

কীভাবে সিনেমা হলে দর্শক ফিরবে

ইফতেখার নওশাদের কথায় এ অবস্থার উন্নতি তখনই হবে যখন পর্যাপ্ত মানসম্মত ছবি নির্মাণ করতে পারবেন আমাদের নির্মাতারা। পাশাপাশি উপমহাদেশীয় ছবি একসঙ্গে এ দেশে মুক্তি দিতে হবে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো পাকিস্তান। সেখানকার চলচ্চিত্র শিল্পের অবস্থা আমাদের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রায় সব সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে সেখানে ভারতের ছবি একসঙ্গে মুুক্তি দেওয়ায় একদিকে প্রতিযোগিতায় গিয়ে তাদের ছবি উন্নত হয়েছে এবং দর্শক পেয়ে সিনেমা হল নির্মাণের হার বেড়েছে। ইফতেখার নওশাদ আরও বলেন, শুধু ঢাকায় নয়, দেশের সিনেমা হলগুলো কোরামিন দিয়ে কোনোভাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। অধিকাংশ সিনেমা হলের পরিবেশ ভালো বলা যাবে না। ছবি যদি পাওয়া না যায় আর দর্শক যদি না আসে তা হলে লোকসান গুনে আর কত সিনেমা হলগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব? এগুলোর পরিবেশ উন্নয়ন ও সংস্কার করতে তো অর্থ দরকার তা মালিকরা কোথা থেকে পাবে? তার কথায় এ অবস্থা চলতে থাকলে সহসাই এ দেশ সিনেমা হলশূন্য হয়ে পড়বে।

সর্বশেষ খবর