সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

তার চিঠির প্রতীক্ষায় এখনো থাকি

শহীদুল্লাহ ফরায়জী

আলী আফতাব

তার চিঠির প্রতীক্ষায় এখনো থাকি

নিভৃতচারী ও আত্মমগ্ন জনপ্রিয় গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়জীর আজ জন্মদিন। দর্শন আর মানুষের হৃদয়ের হাহাকার একাকার হয় তার গীতি কবিতায়। অসংখ্য জনপ্রিয় এবং অনবদ্য গানের লেখক হিসেবে তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়। জন্মদিন ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে আজ তার আলাপন—

 

আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

ধন্যবাদ, আমি মানব জন্মটাকে একটু ভিন্নভাবে দেখি। মানবরূপে জন্মগ্রহণের সুযোগ পেলাম কিন্তু মানবরূপেই বিলীন হতে পারব কিনা সে সম্পর্কে সংশয়। মানুষরূপে জন্মগ্রহণ করেছি কিন্তু ক্রমাগত মানুষ হওয়া-জীবনের দায় অনুসন্ধান করা, লোভ-লালসার সুযোগ উন্মোচিত করা, হৃদয়ের অতল স্পর্শ করা, প্রকৃতির মতো অকৃত্রিম হওয়া, বাস্তবতাকে প্রত্যক্ষ করা, সর্বোপরি আত্মোপলব্ধি কতটুকু অর্জিত হয়েছে, তা আজ আমাকে পীড়িত করেছে।

এই যে দিনের পর দিন বেঁচে আছেন-অক্সিজেন-খাদ্য আহরণ করছেন, সমাজ ও মানুষের জন্য আপনার অবদান কতটুকু?

আমার আত্মা অনন্তের দিকে চলছে, অথচ শরীর আমার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। আমার দেহ-মন সবসময় চায় স্বর্গের উচ্চতায় আহরণ করতে, অথচ শরীর, মধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিক্রম করতে পারব না-এই যে মানুষের নিরন্তর দ্বন্দ্ব সেই দ্বন্দ্বে আমিও পতিত। জন্ম নিয়ে বার বার মনে হচ্ছে সময় ফুরিয়ে আসছে-কিন্তু আত্মা তো কখনো পরিতৃপ্ত নয়। আমার আত্মা সবসময় সৌন্দর্যের দিকে ধাবিত, কিন্তু আমার সীমাবদ্ধতা-আমার অজ্ঞতা ক্ষমাহীন। ফলে অনুতাপ-অনুশোচনা আমাকে মাঝে মাঝে চরম দুর্দশায় ফেলে দেয়। সান্ত্বনা হচ্ছে, সব সীমাবদ্ধতা-দুর্বলতা সব নিয়ে একদিন বিলীন হব-ধ্বংসপ্রাপ্ত হব।

 

ভক্তদের কোন বিষয়টি আপনার হৃদয়ে দাগ কেটেছে?

আমার এত ভক্ত এত ঘটনা তা বর্ণনাতীত। তবু তার মাঝে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। এক ভক্ত প্রায়ই চিঠি লিখতেন, তার নাম মৌনতা। তার প্রথম চিঠির অংশবিশেষ উল্লেখ করছি— ‘জানি আপনার অনেক ভক্তের ভিড়ে এ আমি বড় নগণ্য। তবু ভালোবাসার অধিকার তো সবারই আছে তাই এ স্পর্ধা। যদিও স্পর্ধাটা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তবে ক্ষমা করে দেবেন। শুধু গীতিকার হিসেবে নয়, ব্যক্তি মানুষ হিসেবেও আপনি আমার আদর্শ ব্যক্তিত্ব। আপনার গানগুলো যত শুনি ততই ভালোলাগা বেড়ে যায়। তবে গানের ক্ষেত্রে আপনার কাছে প্রাপ্তির চেয়ে প্রত্যাশা অনেক বেশি। প্রার্থনা করি, বেঁচে থাকুন যেভাবে খুশি-অনন্ত ভালোবাসা পেয়ে অথবা প্রতিদানহীন ভালোবেসে।’ সেই মৌনতার চিঠিও এখন আর আসে না, মৌনতা কেমন আছেন আমি তাও জানি না। আমি তার চিঠির প্রতীক্ষায় থাকি।

 

নতুন কোনো গান লিখছেন?

২০১৭ সালে সিনেমা এবং অ্যালবামের বেশকিছু গান করেছি। জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ-এর গান, মুরাদ নূরের সুরে ফাহমিদা নবী ও শিমুলের গান, মান্নান মোহাম্মদ-এর সুরে সামিনা লাকী এবং রাজিব মাহবুব-এর গান করেছি। এ ছাড়া সানিয়া রমা ও হৃদয়ের জন্য গান লিখছি-যা সুর করবেন নাজির মাহমুদ।

সর্বশেষ খবর