শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঈদ অনুষ্ঠানের ভালো-মন্দ


ঈদ অনুষ্ঠানের ভালো-মন্দ

এবারও চ্যানেলগুলো সেজেছে বাহারি ঈদ আয়োজনে। নাটক, টেলিফিল্ম, সিনেমা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, তারকা আড্ডাসহ প্রায় সব চ্যানেলেই রয়েছে সপ্তাহব্যাপী ঈদের প্রস্তুতি। দেশসেরা নির্মাতা ও তারকাদের অংশগ্রহণ রয়েছে এসব আয়োজনে। এরপরও দর্শকের মন জুড়াতে ব্যর্থ হয় ঈদ আয়োজন। বরাবরই ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা নিয়ে দর্শকের  অভিযোগ থাকে অনেক। বিজ্ঞাপনের আধিক্য, একই রকম অনুষ্ঠানের ছড়াছড়ি, জোর করে হাসানোর চেষ্টা, একই তারকা সব চ্যানেলের নাটকেসহ নানা রকম অভিযোগ ওঠে। সে তুলনায় এবারের আয়োজনটি ঠিক কেমন হচ্ছে? অনুষ্ঠান এবং বিজ্ঞাপন নিয়ে চ্যানেলগুলোর পরিকল্পনা কী? জানতে চাওয়া হয়েছিল এনটিভি, বাংলাভিশন, আরটিভি ও চ্যানেল আইয়ের দায়িত্বশীলদের কাছে। তারা বলেছেন বৈচিত্র্য নিয়ে আসার উদ্যোগ রয়েছে প্রত্যেকের আয়োজনে। বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণে বিরতিহীন নাটকের কথা বলেছেন। জানিয়েছেন কিছু প্রতিকূলতার কথাও। তাদের জবানিতে বিস্তারিত জানাচ্ছেন— রণক ইকরাম

 

মোস্তফা কামাল সৈয়দ

অনুষ্ঠান প্রধান, এনটিভি

এনটিভির ঈদ অনুষ্ঠান মানেই রুচিশীল বিনোদন। বরাবরের মতো আমাদের ঈদের অনুষ্ঠানমালা ৭ দিনব্যাপী সাজানো হয়েছে। এবারের ঈদে থাকছে ১৪টি ইনহাউস প্রডাকশন, ১৪টি একক নাটক, ৭টি টেলিফিল্ম ও ৩টি ধারাবাহিক। এই ধারাবাহিকের মধ্যে সাগর জাহানের ‘নবাবের প্রেম’ এবং মাসুদ সেজানের ‘অ্যাবনরমাল’ উল্লেখযোগ্য। আর একটি ভার্চুয়াল সেটে নির্মিত রূপকথার গল্পনির্ভর বেলাল-ইমু পরিচালিত ‘যুবরাজ’। এ ছাড়াও এনটিভি আর্কাইভ থেকে ৭ দিনে সাতটি হাসির নাটক প্রচার হবে। দেশের শীর্ষ সংগীত তারকাদের নিয়ে ‘সাত রং’ নামে একটি অনুষ্ঠানও থাকবে। ৭ দিনে দর্শকরা সাতটি বাংলা ছবিও দেখতে পাবে। তবে বিশেষ চমক হিসেবে ঈদের ষষ্ঠ ও ৭ম দিন থাকবে দেশের সাংস্কৃতিক পরিবারকে নিয়ে অনুষ্ঠান ‘গল্প শুধু গল্প নয়’। অন্যদিকে এই প্রথম শুধু চারজন মেয়ে গিটার বাজিয়ে আমাদের প্রয়াত সংগীত লিজেন্ডদের প্রিয় কিছু গান গেয়েছেন। এটা বলতে পারি, গত ঈদের সঙ্গে এবারের অনুষ্ঠানের তেমন মিল নেই। আর বিজ্ঞাপন তো থাকবেই। তবে কেমন থাকবে সে ব্যাপার বলা মুশকিল! বলতে পারি আমাদের অনুষ্ঠান কাঠামোর সঙ্গে কারও তেমন মিল নেই। বৈচিত্র্য আনতে নতুন নতুন অনেক অনুষ্ঠান আমরা এবার করেছি। এ সবই প্রেজেন্টেশনে দেখতে পাওয়া যাবে।

 

শামীম শাহেদ

অনুষ্ঠান প্রধান, বাংলাভিশন

আসলে খুব বেশি বৈচিত্র্যের দাবি করা যায় না। তবে এটুকু বলতে পারি বাংলাভিশন তার সিগনেচার ধরে রাখার চেষ্টা করে সব সময়। এবারও আমরা ঈদের আগের দিনসহ মোট ৮ দিনের অনুষ্ঠান সাজিয়েছি। শুধু নাটক নয়, ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের অনুষ্ঠান থাকছে আমাদের আয়োজনে। দর্শক যাদের দেখতে চায়, সে সব তারকাদের উপস্থিতি থাকছে বাংলাভিশনে। আর বিজ্ঞাপনের বিষয়টি সম্পর্কে বলব সব চ্যানেলই চেষ্টা করে বিজ্ঞাপনের আধিক্য কমাতে। কিন্তু চাইলেই আসলে একার পক্ষে এটি করা সম্ভব নয়। বিজ্ঞাপন কমাতে হলে পুরো ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমটায় পরিবর্তন আনতে হবে। ফ্রি টু এয়ার চ্যানেল হওয়ার বিজ্ঞাপনই একটি চ্যানেলের আয়ের একমাত্র উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি পে চ্যানেল হতো তাহলে প্রতিটি চ্যানেলই আলাদা আয়ের উৎস খুঁজে পেতো। তখন বিজ্ঞাপন এমনি এমনি কমে যেত। আর আরেকটা ব্যাপার ঠিক যে চ্যানেলের লোগো পাল্টালে কনটেন্ট দেখে পার্থক্য করা কঠিন যে কোন চ্যানেল চলছে। এক্ষেত্রে আমি বলব বাংলাভিশন সব সময়ই সিগনেচার তৈরির চেষ্টা করেছে। যেমন আরমান ভাই কিংবা সিকান্দার বক্স চললে মানুষ বোঝে যে বাংলাভিশন চলছে।

আমরা এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চেষ্টা করছি।

 

সৈয়দ আশিক রহমান

সিইও, আরটিভি

আমরা সব সময়ই দর্শকদের সুস্থ বিনোদনের কথা ভেবে অনুষ্ঠান সাজাই। গত ক’বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে জোর করে হাসানোর যে প্রবণতা চলছে সেটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের টার্গেট অডিয়েন্সের কথা মাথায় রেখে অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছি। আমাদের ঈদ অনুষ্ঠানমালায় বরাবরের মতোই নানা চমক থাকছে। শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্যই কনটেন্ট থাকছে। একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন, আমাদের ঈদ অনুষ্ঠানমালায় বাচ্চাদের জন্য প্রচুর অনুষ্ঠান থাকে, যদি অন্যত্র তেমন একটা খুঁজে পাবেন না। বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে আমরা বরাবরই সাশ্রয়ী থাকার চেষ্টা করছি। আমরা বিরতিহীন নাটক চালু করেছি। এবারও থাকছে।

ফলে ঢালাওভাবে বিজ্ঞাপনের অভিযোগটি ঠিক মেনে নেওয়ার মতো নয়। বিশেষ করে আমরা এই ব্যাপারটিতে সচেতন থাকার চেষ্টা করছি। আর সব চ্যানেলের একই গণ্ডির যে কথাটি বলা হয় সেটিকে অনেকটাই সত্য মানতে হবে। ওই যে বললাম সবাই জোর করে হাসানোর চেষ্টা করেন। এর বাইরেও কিন্তু নাটক বা অনুষ্ঠান হতে পারে। একই ধারায় না হেঁঁটে ভিন্ন মতের ভিন্ন ধারার কিছু তৈরি করতে পারলেই বৈচিত্র্য আসবে। নতুবা একই বৃত্তে বন্দী থাকতে হবে।

 

ইবনে হাসান খান

পরিচালক, চ্যানেল আই

বরাবরের মতো আমাদের আয়োজনে প্রায় সবকিছুই থাকছে। সেই সঙ্গে ফেলুদা যোগ হওয়ার কারণে ঈদের আয়োজন ৭ দিন ছাপিয়ে ৯ দিনে গিয়ে ঠেকেছে। তাই আমি বলব চ্যানেল আইয়ের এবারের আয়োজনে যথেষ্ট বৈচিত্র্য রয়েছে। আর বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে বলব আমরা বিগত বছরগুলোর তুলনায় ৩৫ শতাংশ বিজ্ঞাপন কমিয়ে এনেছি। এটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে আমি নির্দিষ্ট করে কোনো অনুষ্ঠান, নাটক কিংবা টেলিফিল্মের কথা বলতে চাই না। আমাদের প্রতি প্রোডাকশনই স্পেশাল। গত ঈদে যেমন আমাদের সোনার বরণ কন্যার প্রচুর সাড়া ছিল। এবারও এরকম একটি কাজ রয়েছে মুক্তা ঝরা হাসি। আবার মাহমুদ দিদারের একটি টেলিফিল্ম রয়েছে যেটি দর্শকদের ভাবাবে। রয়েছে চলচ্চিত্রের চমকও। ঈদের ৮ম ও ৯ম দিনে ফেলুদা আলাদা আকর্ষণ সৃষ্টি করবে। আর সব চ্যানেলের তুলনা করতে গিয়ে যে বৈচিত্র্যহীনতার কথা বলা হচ্ছে সেটি নিয়ে বলব আমাদের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির বয়স মাত্র ২০ বছর। অনেকেই করতে করতে শিখছে। এরপরও এখন অনেক ট্যালেন্ট উঠে আসছে। আস্তে আস্তে টেলিভিশনের ভাষাটা বদলে যাচ্ছে। শিগগিরই সেটা আরও বেশি পাল্টে যাবে। তখন সব ঠিক হলে বৈচিত্র্যও চলে আসবে।

সর্বশেষ খবর