শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঈদের ছবি নিয়ে হতাশা

আলাউদ্দীন মাজিদ

ঈদের ছবি নিয়ে হতাশা

চলচ্চিত্রের আকাশ কালো মেঘে ঢেকে আছে। এই অন্ধকার আরও ঘনীভূত করল এবারের ঈদের ছবি। উৎসবের ছবি যে বিপুল দর্শক সাড়া পায় এবার তা হয়নি। ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে তিন ছবি— রংবাজ, অহংকার ও সোনা বন্ধু। প্রথম দুটির নায়ক-নায়িকা হলেন শাকিব খান আর বুবলী। আর শেষটিতে আছেন ডি এ তায়েব, পপি, পরীমণি।

কেন দর্শক খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ছবিগুলোর প্রতি। এমন প্রশ্নের মিশ্র জবাব হলো— ‘রংবাজ’ ছবির মেকিং দুর্বল, বলেছেন ছবিটি দেখতে আসা একজন চিকিৎসক ও নাট্যকার ডা. আশরাফ রিয়াদ। চলচ্চিত্র নির্মাতা ছটকু আহমেদের কথায় ছবিটি নির্মাণের শুরু থেকেই নানা ঝড় ঝাপটার মুখে পড়ে। তাই হয়তো নির্মাণে মজবুত গাঁথুনির অভাব ছিল। ফলে ছবিটি দর্শক আগ্রহ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে শিল্পীদের অভিনয় আর লোকেশন ভালো ছিল। তিনি বলেন, কমার্শিয়াল ছবির ব্যবসার জন্য নায়কের পাশাপাশি একজন শক্তিশালী খলনায়ক দরকার। বর্তমানে ঢাকাই ছবিতে মিশা সওদাগরের মতো দক্ষ খলনায়কের বড়ই অভাব। প্রতি ঈদের ছবিতে তিনি থাকেন। তার বিশাল একটি দর্শকশ্রেণি রয়েছে। এবারের ঈদের কোনো ছবিতেই তিনি নেই। এটিও এসব ছবি ভালো না চলার একটি কারণ হতে পারে। এই চলচ্চিত্রকারের কথায় ছবিটি আরেকটু ভালো ব্যবসা করতে পারত, কিন্তু মফস্বলের মানুষ এখনো বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাই শুধু ‘রংবাজ’ নয়, কোনো ছবিই তেমনভাবে সাফল্য পায়নি। বন্যাকবলিত এলাকার বিশাল দর্শক হারিয়েছে ছবিগুলো।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন,  ‘বলতে পারেন এবারের ঈদের ছবিগুলো নিয়ে আমরা হল মালিকরা খুবই হতাশ। অনেক কম দর্শক হলে আসছেন। খুব কম শো হাউসফুল যাচ্ছে। যেখানে ঈদের প্রথম তিন দিন অধিকাংশ শো হাউসফুল যাওয়ার কথা সেখানে দর্শকের উপস্থিতি হতাশাজনক।’ নওশাদ বলেন, ‘আমাদের দর্শক গত কয়েক বছরে যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ হয় বিগ বাজেট আর অ্যারেঞ্জমেন্টে। এসব ছবির নির্মাণ থাকে আন্তর্জাতিক মানের। যার কারণে দর্শকদের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর তারা আগের মেকিংয়ের ছবি ভালো হওয়া সত্ত্বেও দেখছেন না। তারা যৌথ আয়োজনের উন্নতমানের ছবি দেখতে চায়।’ ‘মধুমিতা’ সিনেমা হলের এই কর্ণধর কিছুটা আশার কথাও শুনিয়েছেন, তার কথায় ‘এক যুগের বেশি সময় ধরে সিনেমা হলে নারী দর্শকদের আগমন কমে গিয়েছিল। এবারের ঈদে তা বেড়েছে। এটি আশার কথা’। তিনি বলেন, ‘আমার হলে ‘অহংকার’ ঈদের দুই সপ্তাহ চালানোর পর ‘রংবাজ’ চালানোর ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি ‘নবাব’ চালাব।’ এদিকে ১১৯টি সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়া শাহাদাৎ হোসেন লিটন পরিচালিত ‘অহংকার’ ছবির বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ ওঠায় দর্শক আগ্রহ হারিয়েছে ছবিটির প্রতি। ২০০৫ সালে ভারতের কান্নারা প্রদেশে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অটোশংকর’ ছবির কার্ট টু কার্ট নকল এই ছবিটি। ‘অটো শংকর’ ভারতের অন্যান্য প্রদেশে কপিরাইট নিয়ে রিমেক হলেও ঢাকায় এটি হুবহু নকল করা হয়েছে। দর্শক ছবিটি দেখতে গিয়ে নকল ধরা পড়ায় হতাশ হয়েছে। ফলে এই ছবিটি আশানুরূপ ব্যবসা বঞ্চিত হচ্ছে। নির্মাতা লিটন বলেন, এটি আমার প্রযোজকের গল্প, আমি গল্প অনুযায়ী শুট করেছি। কোনো ছবির সঙ্গে মিলে গেলে সেটি আমার অজান্তেই হয়েছে।

জাহাঙ্গীর সুমন পরিচালিত ‘সোনাবন্ধু’ ছবিটি নিয়ে সিনেমা হল মালিকদের বক্তব্য হচ্ছে ‘ছবির গল্প ভালো, নির্মাণও মোটামুটি। এ ধরনের ফোকধর্মী গল্পের ছবির দর্শক মফস্বল অঞ্চলেই বেশি। এবার দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা হওয়ায় এখনো সেখানে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়নি। তাই ছবিটি আশানুরূপ দর্শক সাড়া পেতে ব্যর্থ হয়েছে। চলচ্চিত্রকারদের প্রত্যাশা মফস্বলের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হলে হয়তো ছবিটি কিছুটা অর্থ ঘরে তুলতে পারবে। চলচ্চিত্রকাররা আরও বলেন, সোনাবন্ধু’ আসলে ঈদের ছবি নয়, এটি স্বাভাবিক সময়ে মুক্তি দিলে হয়তো কিছুটা ভালো রেজাল্ট পেত। সবমিলিয়ে চলচ্চিত্রকার আর দর্শক এবারের ঈদের ছবি নিয়ে চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে।

বানের পানিতে ভেসে গেছে তাদের সব প্রত্যাশা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর