রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘ডুব’ নিয়ে যত কথা...

আলাউদ্দীন মাজিদ

‘ডুব’ নিয়ে যত কথা...

শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত বহুল প্রতিক্ষীত ছবি ‘ডুব’। মুক্তির পর পরই ছবিটি আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। এক কথায় ‘ডুব’ নিয়ে এখন চলছে ইতিবাচক আর নেতিবাচক কথার ফুলঝুরি। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এই ঝড় ক্রমশই বেগবান হচ্ছে। আর এই ঝড় উঠেছে ছবির বিষয়বস্তু এবং নির্মাণ আঙ্গিককে ঘিরে। অনেকে বলেছেন ছবির নামে নাটক বানিয়েছেন তিনি। ছবির নির্মাণ সংজ্ঞা বিবর্জিত এটি। আবার কেউ কেউ ছবিটি দেখে চোখের পানি মুছতে মুছতে সিনেমা হল থেকে বের হয়েছেন। ‘ডুব’ মুক্তির আগেই অবশ্য এটি নিয়ে জল ঘোলা কম হয়নি। ‘প্রখ্যাত কলমের জাদুকর প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের বায়োপিক হলো ‘ডুব’- এমন লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেন্সর বোর্ড ছবিটি আটকে দিয়েছিল। নানা জটিলতা পেরিয়ে অবশেষে গত শুক্রবার ‘ডুব’ দর্শকের সামনে এলো। মুক্তির পর নতুন করে আবার আলোচনা -সমালোচনার জন্ম দিল ছবিটি। ফেসবুক ও অনলাইন  পোর্টালে গেলেই এই ঝড়ের তীব্রতা টের পাওয়া যায়। এখানে ভালো আর মন্দ, দুইয়েরই মিশেল আছে। অনলাইনে দেওয়া বেশ কজন দর্শকের মন্তব্য এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো—

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মোহাম্মদ আবদুর রশিদ রাফি লিখেন, ‘ডুব’-এর সঙ্গে অনেকের বাস্তব জীবনের অনেক মিল আছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবনের বাস্তবধর্মী গল্প ‘ডুব’। বিভিন্ন পরিবারে এ ধরনের ঘটনা ঘটে, কিন্তু প্রকাশ পায় না। এখানে গল্পের মাধ্যমে এটা প্রকাশ পেয়েছে। ছবিটা আমার ভালো লেগেছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর ছাত্র ওমর ফারুক বলেন, ‘এটা (ডুব) হুমায়ূন আহমেদের বায়োপিক হতে পারে না। ছবিতে যে আবেগপ্রবণ দৃশ্য ছিল, সেগুলো ব্যক্তিগতভাবে আমার মন ছুঁতে পারেনি। হুমায়ূন আহমেদের লেখা আমাদের আবেগকে অনেক ছুঁয়ে গেছে। এখানে এটা পাইনি। আর ফারুকীর কাজ আরও ভালো আশা করেছিলাম। এটা কী হলো, বুঝতে পারছি না।’ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাদিয়া বলেন, ‘ছবিটা আমার ভালো লেগেছে। হুমায়ূন স্যারের বাস্তব জীবন নিয়ে ছবির গল্প বলা হয়েছে। ইরফান খানের সবাই ভক্ত। উনার অভিনয় অনেক ভালো ছিল। তিশা আপুর অভিনয় অনেক ভালো লেগেছে।’ ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরমান বলেন, ‘চরিত্রের সঙ্গে আপস করে কখনো শিল্প হয় না। সিনেমা হয় না। কেন জানি ‘ডুব’ সিনেমা হয়ে ওঠেনি। আমি মনে করি, গল্পকার গল্প বলতে এখানে ব্যর্থ হয়েছেন।’ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আসিফ শাহরিয়ার জানান, ছবির শুরুর দিকে তার ঘটনা বুঝতে সমস্যা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘সিনেমা দেখে প্রথম দিক দিয়ে খাপছাড়া খাপছাড়া লাগছিল। দেখুন, আমরা মোটামুটি সবাই হুমায়ূন আহমেদকে চিনি। ছবিটা দেখেই মনে হয়েছে, এটা হুমায়ূন আহমেদের বায়োপিক। তবে কিছু কিছু পরিবর্তন আছে। ছবিটা মোটের ওপর ভালো। কারণ, শুরুর দিকে ঘটনাগুলো বুঝতে সমস্যা হয়েছে। শেষের দিকে বোঝা যায় কার প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে।’

নটর ডেম কলেজের দুই ছাত্র সৌহার্দ্য ও আবির সরকার। দুজন একসঙ্গে ডুব ছবিটি দেখেছেন। সৌহার্দ্য বলেন, ‘ডুব’ ভিন্নধারার একটি চলচ্চিত্র। এ ধরনের সিনেমা এর আগে হয়নি।’ আবির বলেন, ‘ইরফান খান অনেক ভালো একজন অভিনেতা। তিনি চরিত্রটাকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিশার অভিনয়ও দারুণ ছিল। আর একটা বিষয় তা হলো ছবিতে রূপক কিছু ব্যাপার ছিল, সেগুলো আমাদের ভাবায় ও শেখায়।’

এদিকে ছবির নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নিজেও তার ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে ভুলেননি। তিনি লিখেছেন—‘আমার ছবি আসবে আর জাতি দুই ভাগ হয়ে যাবে না এটা এখনো ঘটে নাই। সেই ব্যাচেলর থেকে শুরু। ব্যাচেলরের সময় তো ফেসবুক ছিল না। পত্রিকার চিঠি পত্র কলামে গালাগাল দিতে দিতে বিবমিষা ধরাইয়া দিছিল। থার্ড পারসনের সময় তো আরও খারাপ অবস্থা। তবে আশার কথা এই যে, কিছু বছর পর যে কাজটার জন্য পক্ষে বিপক্ষে বেশি কথা শুনতে হয়, সেই কাজটাই মোটামুটি একটা স্বাভাবিক স্রোতে রূপ নেয়। এর একটা কারণ হইতে পারে, আমার কাছে সিনেমা হইল শিল্পীর নিজস্ব শৈল্পিক ভঙ্গির প্রকাশ। সেটা আগে কি দেখেছি সেই অভিজ্ঞতাকে প্রায়শই চ্যালেঞ্জ করতে পারে। আপনি সিনেমা বইলা যা জানেন, যে ফর্মূলাগুলো আপনার অভিজ্ঞতার মধ্যে আছে সেটার সাথে কোনো মিল না রাইখা একদম অন্য রাস্তায় হাঁটতে পারে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই জিনিস একটা উত্তপ্ত আলোচনার জন্ম দেয়, পক্ষে এবং বিপক্ষে (ভালো লাগা মন্দ লাগার কথা বলছি না, সেটা যে কারোরই যে কোনো ছবির ক্ষেত্রে লাগতে পারে। বলছি, পক্ষ-বিপক্ষ অ্যাক্টিভিজমের কথা)। ডুব নিয়েও পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হোক। বেশ কিছু পয়েন্ট টুকে নিয়েছি। সময় টেলিভিশনে তার কিছু কিছু নিয়ে আলোচনা করব। এই সুযোগে কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের প্রতি যারা বিশ্ব চলচ্চিত্রের রেফারেন্স ঘেঁটে ঘেঁটে যুক্তি দিয়ে ডুবের প্রতি ভালোবাসা জানাচ্ছেন। আর যারা আরও আগ্রহী গুগল করে ভ্যারাইটি, হলিউড রিপোর্টার, স্ক্রিন ডেইলি বা আরও ফেস্টিভ্যালের ক্রিটিকগুলো পড়তে পারেন। আমাদের ছোট দেশের ছোট একটা ফিল্মমেকারের কাজ নিয়ে বড় ক্রিটিকরা কি বলছেন সেটা জানা যেতে পারে। তবে যারা ছবিটা দেখেন নাই, চলুন দেখে নিই।’

ডুব নিয়ে কলকাতার বিখ্যাত পরিচালক অরিন্দম শীল বলেন, ছবিটি আমার ভীষণ ভালো লেগেছে, আমি মনে করি প্রত্যেকটি পরিচালকের একটা স্বাধীনতা থাকা দরকার। আর এই স্বাধীনতার বহির্প্রকাশ ঘটেছে এই ছবির মাধ্যমে। আমার কাছে মনে হয়েছে, ফারুকী এই ছবিটির মধ্য দিয়ে একটা মানুষের গল্প বলেছেন। যে মানুষের চরিত্রটি আমাদের আশপাশে খুঁজে পাওয়া যায়। এই ছবিটির প্রত্যেকটি চরিত্র আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। ছবিতে ইরফান খানের বাংলা কথা বলা নিয়ে একটা সমালোচনা উঠেছে। আমি মনে করি, ইরফান এই ছবিতে যে ধরনের অভিনয় করেছেন, তার এই ছোটখাটো ভুল চোখে পড়ার মতো নয়। এখানে তিশা, পার্ণো মিত্র ভালো অভিনয় করেছেন। রোকেয়া প্রাচীরের চরিত্রটি আরও সরল হলেও পারত। এ ছবির বাড়িটিকে উপস্থাপন করা হয়েছে সুন্দর করে। মিউজিক আর ক্যামেরার কাজ মিলেমিশে হয়ে গেছে একাকার। আমি ব্যক্তিগতভাবে ফারুকীর কাজের ভক্ত। তার পরিচালিত প্রায় সব ছবিই দেখা হয়েছে। ডুব দেখার পর মনে হয়েছে, বাংলা চলচ্চিত্রে সুদিন ফিরে আসছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর