মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফের আলোচনায় ঢাকাই ছবি

আলাউদ্দীন মাজিদ

ফের আলোচনায় ঢাকাই ছবি

ঢাকাই ছবি আবার আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। অন্তত অক্টোবরে মুক্তি পাওয়া তিনটি ছবির দর্শকগ্রহণযোগ্যতা তাই প্রমাণ করে। চলতি মাসে মুক্তি পাওয়া তিনটি ছবি হলো- ঢাকা অ্যাটাক, দুলাভাই জিন্দাবাদ ও ডুব। ৬ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া ঢাকা অ্যাটাক ছবির সফলতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। মুক্তির প্রথম তিন দিনেই এই ছবির আয় ৪ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার দাবি ছবিটির নির্মাতা দীপংকর দীপনের। ছবিটি টানা চতুর্থ সপ্তাহের মতো দর্শকপ্রিয়তা অব্যাহত রেখে চলছে। টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে এখনো ফিরে যাচ্ছেন দর্শক। দর্শকের চাপে স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রথম দুদিনেই দুটির স্থলে চারটি হলে ছবিটি প্রদর্শন করতে বাধ্য হয় সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। শুধু দেশে নয়, বিদেশের মাটিতেও সমান জনপ্রিয়তায় চলছে ঢাকা অ্যাটাক।

বলিউড সুপারস্টার আমির খানের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সিক্রেট সুপারস্টার’কে সরিয়ে নিউইয়র্কের একটি সিনেমা হলে প্রদর্শিত হচ্ছে এই ছবিটি। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাই ছবির বিশ্ববাজার জয়ের এটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সাফল্য।

২০ অক্টোবর মুক্তি পায় নাদির খান প্রযোজিত মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ডিপজল, মৌসুমী, মিম, বাপ্পী অভিনীত ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’। মুক্তির আগেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে ছবিটি। এর কারণ ছিল দুটি। প্রথমত এদেশে ডিপজলের একটি বড় অংশের দর্শক রয়েছে। দ্বিতীয়ত এদেশের দর্শক বিশেষ করে মহিলারা যে ধরনের পারিবারিক সেন্টিমেন্টের ছবি দেখতে চায় তেমন গল্প নিয়েই ছবিটি নির্মিত হয়েছে। মুক্তির প্রথম তিন দিন প্রতিকূল আবহাওয়া আর নির্মাণে সময় উপযোগী উপাদান না থাকার অভিযোগ করেছেন অনেক দর্শক। তারপরও বেশ আলোচনা নিয়ে ছবিটি এগিয়েছে। ২৭ অক্টোবর মুক্তি পায় বহুল আলোচিত ছবি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ও জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত যৌথ আয়োজনের ছবি ‘ডুব’। ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ আর আলোচনা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ‘ডুব’ হলো প্রখ্যাত কলমের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের বায়োপিক। এমন খবর মিডিয়ায় চাউর হওয়ার পর থেকে সবাই এই প্রিয় লেখকের জীবনী দেখতে ছবিঘরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

ছবিটি নিয়ে দর্শকের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। অনেকের কথায় এটি একটি দুর্বল নির্মাণ। ফারুকী তার পুরনো নির্মাণ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। আগের ছবির মতোই নাটক জাতীয় একটি ছবি নির্মাণ করেছেন তিনি। অনেকে আবার ভিন্ন ধারার গল্প আর নির্মাণ এবং এতে শিল্পীদের আন্তরিক অভিনয়ের ছাপের কারণে ছবিটির প্রশংসাও করেছেন। আলোচনা-সমালোচনা যাই থাকুক এখনো আগ্রহ নিয়ে দর্শক ছবিটি দেখছেন, দেশীয় ছবির দুর্দিনে এটিই বড় প্রাপ্তি। চলতি মাসে মুক্তি পাওয়া তিনটি ছবি আলোচনায় আসা দেশীয় ছবির সাফল্যের একটি বড় দিক— এমন উল্লেখ করে চলচ্চিত্রকাররা বলছেন এদেশের ছবি এখন শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ নয়। বাণিজ্যিকভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুক্তি পেয়ে সফলতা দেখাতে শুরু করেছে।

এর আগে শাকিব খানের ‘শিকারি’, ‘নবাব’, আরিফিন শুভর ‘অগ্নি’, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’, অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’সহ বেশকিছু ছবি এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, যুক্তরাজ্যে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পেয়ে সফল হয়। আর এবার মধ্যপ্রাচ্যে গড়েছে ঢাকাই ছবির নতুন ইতিহাস। সেখানে প্রথম কোনো বাংলা ছবি হিসেবে মুক্তি পেল শাকিব খান অভিনীত জাজের ‘নবাব’ ছবিটি। মুক্তি পেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঝড় তুলেছে নবাব। এদিকে, মাল্টিপ্লেক্স চেইন ‘রিগ্যাল’-এর নিউইয়র্ক শাখা ‘কাফম্যান অ্যাস্টোরিয়া’তে ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর প্রথম শো ছিল গত ২০ অক্টোবর। প্রথম শো হাউসফুল হওয়ার পর হল কর্তৃপক্ষ পরদিন আমির খানের বহুল আলোচিত ‘সিক্রেট সুপারস্টার’কে অন্য একটি ছোট হলে স্থানান্তর করে সবচেয়ে বড় হলগুলোর একটিতে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ প্রদর্শন করে। এই শো-ও হাউসফুল হওয়ায় হল কর্তৃপক্ষ ২২ অক্টোবর একটি শো বাড়িয়ে ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর দুটি শো প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি জানিয়েছেন ঢাকাই ছবির বিশ্ব পরিবেশক স্বপ্ন স্কেয়ারক্রোর প্রেসিডেন্ট ওয়ালিউল্লাহ সজীব সপ্তক। তিনি বলেন, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি কোনো সিনেমার ক্ষেত্রে এমন অকল্পনীয় ঘটনা প্রথম ঘটল। তার কথায়, ‘আয়নাবাজি’ একলাফে বাংলাদেশের সিনেমাকে কানাডায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে, আর এখন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ মাত্র দুই দিনেই আমেরিকায় আমাদের দিচ্ছে পায়ের তলায় শক্ত মাটি। ঢাকাই ছবির বিশ্ববাজারে সফলতার আরেকটি নজির হলো- চলতি বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি ‘নবাব’। টালিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আয়কারী সিনেমাগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করে নেয় ‘নবাব’। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ‘নবাব’ পাড়ি দেয় মধ্যপ্রাচ্যে। স্বপ্ন স্কেয়ারক্রোর আন্তর্জাতিক পরিবেশনায় ৬ অক্টোবর আরব আমিরাত ও ওমানে মুক্তির পর সেখানেও ঝড় তুলেছে ‘নবাব’। দুবাই থেকে বিষয়টি জানিয়েছেন আহমেদ ইখতিয়ার আলম পাভেল নামের এক প্রবাসী বাঙালি। যিনি স্বপ্ন স্কেয়ারক্রোর সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, অনেকে টিকিট না পেয়ে ফেরত গেছেন। অডিয়েন্স সব গানে নেচেছে, শিস দিয়েছে। আর হল থেকে বের হয়ে আনন্দময় অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। কলকাতার একটা গ্রুপও এসেছে, তারাও খুব এক্সাইটেড। এমন অভিজ্ঞতা আমিরাতবাসী বাঙালিদের জন্য এবারই প্রথম। সব মিলিয়ে চলতি মাসে দেশে-বিদেশে ঢাকাই ছবির সফলতা দেশীয় চলচ্চিত্রের পুনর্জাগরণের রঙিন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর