শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

গানের কোকিল নীনা হামিদ

আলী আফতাব

গানের কোকিল নীনা হামিদ

‘আমার সোনার ময়না পাখি’ কিংবা ‘যে জন প্রেমের ভাব জানে না’ গান দুটির কথা মনে পড়লেই যে কণ্ঠশিল্পীর কথা আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসে তিনি হলেন পল্লীগীতির সম্রাজ্ঞী নীনা হামিদ। লোকসংগীতে অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে তিনি পেয়েছেন একুশে পদক। বর্তমানে তিনি সপরিবারে অবস্থান করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

নীনা হামিদের গানের শুরুটা হয়েছিল ছোটবেলায়। পণ্ডিত নিখিল দেবের কাছে তার গানের হাতেখড়ি। প্রতি বছরই স্কুলে গানের প্রতিযোগিতায় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বাসন্তী গুহঠাকুরতা তার নাম লেখাতেন। আর তিনিই নীনা হামিদের নাম দেন ‘কোকিল’। ছোটবেলা থেকেই পল্লীগীতির পাশাপাশি সব ধরনের গান গাইতে পারতেন তিনি। সুরকার আবদুল আহাদ নীনা হামিদের বড় বোন আফসারী খানমকে গান শেখাতেন। একদিন তিনি নীনার কণ্ঠ শুনে বিস্মিত হলেন। এরপর তিনি নীনা হামিদকে উচ্চাঙ্গসংগীত শেখাতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, ওই বয়সে একবার সরকারি আমন্ত্রণে নীনা পাকিস্তানের মুলতান শহরে গিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে গান পরিবেশন করেছিলেন ওস্তাদ সালামত আলী, নাজাকাত আলী, নুরজাহান, মেহেদী হাসান, সুরাইয়া সুলতানিকা, এনায়েত ভাট্টি। ওই মঞ্চে অনেক কষ্টে গান পরিবেশন করেছিলেন নীনা হামিদ। ওই বয়সে তার গান শুনে নড়েচড়ে বসেছিল দর্শক। এরপর রেডিওতে খেলাঘর অনুষ্ঠানে ক্লাসিক্যাল গান গাইতে শুরু করেন তিনি। ওই সময় মানিকগঞ্জের গীতিকার ও সুরকার ওসমান খানের হাত ধরে কলকাতার এইচএমভি কোম্পানির জন্য একটা গান করেন নীনা। ওই সময় গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এবং  এইচএমভির পক্ষ থেকে নীনার সিরিজ অ্যালবাম বানানো প্রস্তাব পান তিনি। এরপর নীনা হামিদকে আর  পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাফল্যের গল্পটা আরও দীর্ঘ হতে পারত, যদি না অভিমানে তিনি দেশ ছাড়তেন!  ২০১০ সালে এক সাংস্কৃতিক সফরে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক সিটিতে গান গাইতে গিয়ে জনপ্রিয় শিল্পী কনকচাঁপা দেখা পান এই গুণী লোকশিল্পীকে। সঙ্গে ছিলেন সংগীত পরিচালক কনকচাঁপার স্বামী মঈনুল ইসলাম খান। প্রবাস জীবনের নানা গল্প নিয়ে কথা হয় নীনা হামিদের সঙ্গে। মঈনুল ইসলাম খান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক সিটি ওই শোতে আমি কনকচাঁপার সঙ্গে ছিলাম। নীনা হামিদের মতো সহজ সরল মানুষ আমি আর দেখিনি। আমাদের ইচ্ছে ছিল তার সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু আমরা আটলান্টিকে এসেছি শুনে তিনিই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি মহান লোকসংগীত শিল্পী। তার মুখে যেমন ভালোলাগার কথা শুনেছি, তেমনি শুনেছি অনেক অভিমানের কথা। তিনি যদি গানটা ছেড়ে না দিতেন আমাদের লোকসংগীত আরও সমৃদ্ধ হতো।’ লোকসংগীত নিয়ে তার একটি কথা আমার আজও মনে পড়ে, তিনি বলেছিলেন, আমাদের প্রবীণ শিল্পীরা তাদের অভিজ্ঞতা-ইতিহাসের সাক্ষ্য, সবই তারা যদি লিপিবদ্ধ করতেন, তাহলে কত সমৃদ্ধ হতো আমাদের সংগীতভুবন। এটা একটা ইনস্টিটিউটে দাঁড়িয়ে যেত। এ নিয়ে পরবর্তী সময়ের শিল্পীরা পড়াশোনা করে সমৃদ্ধ হতে পারত। তাহলে আজ অপসংস্কৃতির প্রসার হতো না। আমাদের ব্যর্থতা বোধ হয় এখানেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর