সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সুরে সুরে মোহাবিষ্ট বাংলাদেশ

একঘেয়েমি শহুরে যান্ত্রিক জীবনের ছাইপাশ ঝেড়ে শেকড়ের সন্ধানে তিন রাতব্যাপী সংগীতপিপাসু মানুষ ভিড় করেছিল আর্মি স্টেডিয়ামে। দেশ-বিদেশের বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের সুরের ইন্দ্রজালে বাঙালি নিজেকে করেছে সমৃদ্ধ। তৃতীয় আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের মনোমুগ্ধকর আয়োজন নিয়ে লিখেছেন—পান্থ আফজাল ছবি : মানস সেন

সুরে সুরে মোহাবিষ্ট বাংলাদেশ

এবারের লোকসংগীত উৎসবের প্রথমদিনে বাউলিয়ানা’র শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মেরিল নিবেদিত সান কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের সুরের এই আসরের উদ্বোধন ঘটে। শুরুতেই তারা সমবেতভাবে পরিবেশন করে বাউলসম্রাট লালন সাঁইজির ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’ গানটির মধ্য দিয়ে। তাদের পরিবেশনার পরে মঞ্চে আসেন সুফিশিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন। শাহ আবদুল করিমের গানসহ কিছু মুর্শিদী গানের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তিনি সুরের মায়াজালে সবাইকে মোহাবিষ্ট করে রাখেন। তার পরিবেশনা শেষে মঞ্চে ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী গানে আর সাম্বা নাচে মোরিসিও টিজুম্বা স্টেডিয়ামে মুগ্ধতা ছড়ান। এরপর পরিবেশনা নিয়ে দর্শক সম্মুখে আসেন তিব্বতের তেনজিন চোয়েগাল। শেষ রাতের চমক আসামের জনপ্রিয় শিল্পী পাপন রাত ১১টা নাগাদ মঞ্চে আসেন একরাশ মুগ্ধতার আলাপন নিয়ে। মঞ্চে এসে প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় নিজের পরিবেশনা দিয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন। পাপনের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী রাতের সমাপ্তি ঘটে। প্রসঙ্গত এবারের আসরে বাংলাদেশসহ আটটি দেশের ১৪০ জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন।

লোকগানের দল বাউলা’র পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসবের দ্বিতীয় রাতের আসর। তাদের পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন শিল্পী আরিফ দেওয়ান। আরিফ দেওয়ানের সঙ্গে পরিবেশনার সঙ্গী ছিলেন ১৩ জন যন্ত্রী। ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক পরিবেশন করেন নেপালের শিল্পী কুটুম্বা। তবে, পাকিস্তানের মিকাল হাসান ব্যান্ডের পরিবেশনা মুগ্ধ করে আগত শ্রোতাদের। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাউল শাহজাহান মুন্সী পরিবেশন করেন ‘স্বরূপ রূপ আছে, ‘দিন গেলরে হারাইয়া’সহ কিছু মরমি গান। দ্বিতীয় রাতের প্রধান আকর্ষণ নুরান সিস্টার্স রাত ১১টার কিছু সময় পরে মঞ্চে আসেন। তারা মঞ্চে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্টেডিয়ামজুড়ে সৃষ্টি হয় উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা। সুফির সঙ্গে শাস্ত্রীয় সংগীতের অপরূপ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে যেন সুরের জাদুর পরশ বুলিয়ে দিলেন দুই সহোদরা। নুরান সিস্টার্সে মুগ্ধ হয়ে শ্রোতারা নাচলেন এবং গাইলেন। তাদের সুরের খেলার বিভিন্ন রাগ আর খেয়ালের মায়াজালের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় রাতের আসর।

সমাপনী রাতের শুরুতেই সুরে সুরে শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করে রাখেন বাউল সাধক শাহ আলম সরকার এবং পালাগানের শিল্পী আলেয়া বেগম। এরপর লোকগানের পরিচিত নাম শাহনাজ বেলী লালন গানের ডালি নিয়ে মঞ্চে আসেন। তিনি লালন, শাহ আবদুল করিম, হাসন রাজার গানসহ বেশ কিছু গান পরিবেশন করেন। এরপর একে একে মঞ্চে গান করেন সুইডিশ গিটার প্লেয়ার কাম গায়ক মিকাল হেমনিটি উইনথার, বাউল ও ঝুমুর গানের অন্যতম গায়ক ভারতের বাসুদেব দাস বাউল,  ফার্সি লোকসংগীত শিল্পীদের দল রাস্তাক, উৎসবের সমাপ্তি টানতে মঞ্চে আসে অন্যতম আকর্ষণ তিনারিওয়েন। স্থানীয় লোকসংগীত ও আরবের আধুনিক পপ ঘরানার কিছু গান এই সময় তারা পরিবেশন করেন। ততক্ষণে স্টেডিয়ামজুড়ে দেখা যায় মানুষের ঢল। রাত বাড়তে থাকে আর গানের আবেশে চারদিকে মুহুর্মুহু উচ্ছ্বাস বাড়তে থাকে। গানের তালে তালে একে একে ঘরমুখো হওয়ার জন্য প্রধান গেটের দিকে যাত্রা শুরু করে। আবারও সামনের বছর এমনি উৎসবের অপেক্ষায়...

সর্বশেষ খবর