মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

অপূর্ণতা নিয়ে কিছু বলতে চাই না

অপূর্ণতা নিয়ে কিছু বলতে চাই না

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ডাকসাইটে অভিনেতা প্রবীর মিত্র। বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থতা নিয়ে ঘরের চার দেয়ালের মাঝে কাটছে তার বিবর্ণ সময়। এই দক্ষ অভিনেতার সঙ্গে কথা বলে তার ফেলে আসা দিন, বর্তমান  আর আগামীর কথা তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

   

কেমন আছেন দাদা?

ভালো নেই। বেশ কিছুদিন ধরে আথ্রাইটিসে ভুগছি। হাঁটুর ব্যথায় হাঁটাচলা করতে পারছি না। শুয়ে-বসে দিন কাটাতে হচ্ছে। শীত এলেই অসুখটা খুব ভোগায়। এ ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই। বলতে পারেন অন্য সবদিক থেকে ভালোই আছি।

 

আপন ভুবন চলচ্চিত্র জগতের খবরাখবর নিশ্চয়ই রাখছেন?

আসলে ঠিকমতো হাঁটতে পারি না। বাসা থেকে বের হতে পারি না। কারও সঙ্গে তেমন যোগাযোগও হয় না এখন আর। এ অবস্থায় চলচ্চিত্রের খবরাখবর ঠিকমতো রাখতে পারছি না। তবে কষ্ট হয় চলচ্চিত্র জগতের অস্থিতিশীল অবস্থা দেখে। কেন লগ্নিকারকদের এখানে আসতে এত অনীহা বুঝতে পারছি না। বড় সাধের এই জগত্টা নিয়ে সত্যি খুব দুঃখ হয়।

 

অভিনয় জীবন নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট?

বরাবরই চেষ্টা করেছি মানুষের হৃদয়ের গভীরে  যেতে। এ বিষয়টা মাথায় রেখেই চরিত্র পছন্দ করি। অভিনয় করার জায়গা আছে এমন সব ছবিতে অভিনয় করতে চাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। যেদিন থেকে অভিনয়কে প্রফেশন হিসেবে নিয়েছি সেদিন থেকেই চেষ্টা করে এসেছি ভালো কিছু করার জন্য। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি। জানি না প্রফেশনাল লাইফে কতটা সফল হয়েছি।

 

সর্বশেষ ‘বৃদ্ধাশ্রম’ শিরোনামের একটি ছবিতে কাজ করলেন, এ বিষয়ে কিছু বলুন।

ছবিটিতে আমাকে একজন অবহেলিত বৃদ্ধার চরিত্রে দেখা যাবে। এতে অভিনয় করে মনে হয়েছে ছবিটি মুক্তির পর সমাজের অবহেলিত বাবা-মা’দের বখে যাওয়া সন্তানরা মূল্যায়ন করবে।

 

এই বয়সে অভিনয় করতে ক্লান্ত লাগে না?

জীবনের বয়স বাড়লেও মনের বয়স কিন্তু বাড়েনি। মন সেই আগের মতোই চিরসবুজ। তবে দুঃখ, এখন কাজের জন্য তেমন কেউ ডাকে না। আমার মতো অনেক বর্ষীয়ান অভিনেতার একই অবস্থা। বয়স হয়ে যাচ্ছে তাই একাকিত্বও পেয়ে বসছে। যে কদিন শুটিং থাকে সে কদিন অনেক আনন্দেই কাটে।

 

বয়স হলেই কি শিল্পীর প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়?

আসলে এখন মনের মতো চরিত্র তৈরি হচ্ছে না। যেসব ছবি এখন নির্মাণ হচ্ছে সেখানে আমাদের মতো অভিনেতাদের অভিনয় করার সুযোগও কম। আমি মনে করি, সময়ের ফেরে বহমান স্রোতে হয়তো ভাটা পড়ে, কিন্তু একজন অভিনেতা বা শিল্পীর প্রয়োজন কখনো ফুরিয়ে যায় না।

 

ফেলে আসা দিনগুলোর কথা কি মনে পড়ে?

আমি এক সময় প্রায় ৩০ দিনই রাত-দিন কাজ করেছি। ব্যস্ততার কারণে পরিবারকে সেভাবে সময় দিতে পারিনি। আমার স্ত্রী একাই সব সামলে নিতেন। স্ত্রী ও ছোট ছেলে মারা যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছি একাকিত্বের কষ্ট কী। কাজ না থাকলেই এখন একাকিত্ব আমাকে গ্রাস করে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি।

 

কতগুলো ছবিতে কাজ করেছেন। কোন ছবিকে ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট মনে করেন?

৩০০টির মতো ছবিতে কাজ করেছি। আমার পছন্দের ছবি ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। এখনো অবসরে ছবিটি যখন দেখি সে সময়ের অনেক স্মৃতি ভেসে আসে। কত কাছ থেকে দেখেছি ঋত্বিক ঘটকের মতো পরিচালকের কাজ। এটা সত্যিই অনেক বড় পাওয়া আমার জীবনে।

 

 প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মিলিয়েছেন কখনো?

আমার জীবনে অপ্রাপ্তি বলে কিছু নেই। এ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছি সবই শুধু প্রাপ্তি। আমাকে অভিনেতা হিসেবে সবাই চেনে, এটাই তো আমার ক্ষুদ্র জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া। আর কিছু চাই না।

 

আর যদি অপূর্ণতার বিষয়ে জানতে চাই?

(একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে), আসলে অপূর্ণতা সবার জীবনেই থাকে, আমারও আছে। বিষযটি একান্তই ব্যক্তিগত। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।

 

আপনার সময় এখন কীভাবে কাটে?

নাতি-নাতনি আছে, তাদের সঙ্গে সময় কাটে। বই পড়ি, টিভি দেখি। এই তো, এভাবেই কেটে যাচ্ছে জীবনের বাকি দিনগুলো।

 

টিভি নাটকে অভিনয়ের ইচ্ছা আছে?

হ্যাঁ, টিভিতে অনেক প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছি, কিন্তু নাটকে কাজ করা হয়নি। ভালো সুযোগ পেলে অবশ্যই টিভি নাটকে অভিনয় করার ইচ্ছা আছে।

 

নিজেকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

আমি অতি সহজ-সরল, নির্লোভ এবং সাধারণ একজন মানুষ। অল্পতেই তুষ্ট। আকাশকুসুম কল্পনা করি না। বিলাসিতা পছন্দ করি না। সাধারণ জীবন-যাপন করতেই ভালো লাগে। এভাবেই চলে যেতে চাই।

সর্বশেষ খবর