মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে নির্মাতারা ভাবেন না

ইলিয়াস জাভেদ

সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে নির্মাতারা ভাবেন না

পুরো নাম ইলিয়াস জাভেদ। চলচ্চিত্রে জাভেদ নামেই তাকে সবাই চেনেন। একাধারে অভিনেতা ও নৃত্যপরিচালক। দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র থেকে দূরে আছেন তিনি। তার বর্তমান সময় কেমন কাটছে, আগামী পরিকল্পনা কী, সেসব নিয়েই কথা বলেছেন—আলাউদ্দীন মাজিদ

   

কেমন আছেন?

খুব ভালো আছি? সৃষ্টিকর্তা আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন, তার কাছে শুকরিয়া জানাই।

 

চলচ্চিত্র থেকে অনেক দিন দূরে রয়েছেন, কেন?

কি করব, ছবি নির্মাণ কমে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের মতো সিনিয়র শিল্পীকে নিয়ে এখনকার নির্মাতারা আর ভাবেন না। আমাদের উপযোগী গল্পও তৈরি করেন না। অথচ দেখুন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চলচ্চিত্র মানে বলিউডেও অমিতাভ বচ্চন, সদ্যপ্রয়াত শ্রীদেবীকে মুখ্য চরিত্র করে গল্প হয়েছে এবং তা দর্শক গ্রহণ করেছে, রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পর্যন্ত পেয়েছে। যেমন—অমিতাভের ‘বুড্ডা হোগা তেরা বাপ’, ‘পিংক’সহ অনেক ছবি। এখন আসছে অমিতাভ আর ঋষি কাপুরকে প্রধান নায়ক করে ‘১০১ নট আউট’ ছবিটি। অন্যদিকে শ্রীদেবীকে নায়িকা করে ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ও ‘মম’ ছবি দুটি জনপ্রিয়তার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়সহ নানা সম্মাননা পেয়েছে। এখানে সেই অবস্থা কোথায়? আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পে বয়স হয়েছে মানে তার কাজের সময় শেষ হয়ে গেছে। কেউ তাকে আর মনেও রাখে না।

 

দেশীয় চলচ্চিত্রে সিনিয়রদের নিয়ে কাজের পরিবেশ কিভাবে তৈরি করা যায়?

তা তো বলতে পারব না, কারণ আমাদের চলচ্চিত্রের সার্বিক অবস্থা তো দীর্ঘদিন ধরেই খুব ভালো বলা যাবে না। যেখানে পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবিই হচ্ছে না, নানা কারণে চলচ্চিত্র শিল্পে বিভাজন চলছে, সেখানে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সবার শুভবুদ্ধির উদয় না হলে পরিবেশ কিভাবে তৈরি হবে বলুন।

 

এখন সময় কাটছে কিভাবে?

এই তো বাসায় টিভি দেখি, বই পড়ি, মাঝে-মধ্যে ভালো স্টেজ শো পেলে পারফর্ম করি। এভাবেই সময় কেটে যাচ্ছে।

 

আপনার জন্মস্থান গুজরাটে, তা এ দেশে এলেন কিভাবে?

আসলে ছোটবেলা থেকেই সিনেমার প্রতি আমার প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল, ছোটবেলায় নাচ শিখেছি, চলচ্চিত্রের টানে এ দেশে আসা। প্রথমে নৃত্য পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করি। এরপর ‘নয়া জিন্দেগী’ নামে একটি ছবিতে কাজ করি। ছবিটি মুক্তি পায়নি। ১৯৭০ সালে মুস্তাফিজ সাহেবের ‘পায়েল’ ছবিটিতে অভিনয় করি। এটি মুক্তি পাওয়ার পর নায়ক হিসেবে আমি প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাই। একদিকে অভিনয়, অন্যদিকে নৃত্য পরিচালনা। দুই অঙ্গনেই সমান দর্শকপ্রিয়তায় এগিয়ে যাই।

 

বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্রের নাচ আগের মতো সাড়া জাগাচ্ছে না কেন?

নাচ হচ্ছে একটি শিল্প, এটিকে নিয়ে রীতিমতো চর্চা করতে হয়। এখন শুধু নাচ কেন? কোনো কিছুতেই তেমনভাবে চর্চার আগ্রহ নেই। কোনোভাবেই যে কোনো কাজ করে পয়সা পেলেই হলো, মানে কাজ নয়, অর্থের মোহই মুখ্য। এ অবস্থায় কোনো কাজই আগের মতো দর্শক হৃদয়ে আর স্থায়িত্ব পাচ্ছে না। বিষয়গুলো খুব দুঃখ দেয়।

 

এ পর্যন্ত আপনার অভিনীত ছবির সংখ্যা কত?

তা প্রায় দেড় শতাধিক হবে? তা ছাড়া বাহরাম বাদশাহ ছবিটি প্রযোজনা করেছিলাম।

 

নিজের প্রিয় কাজ কোনগুলো?

আসলে আমার করা প্রতিটি কাজই আমার কাছে প্রিয়। তারপরও বলতে হয়—নিশান, মালকাবানু, অনেকদিন আগে, বিজয়িনী সোনাভান, কাজলরেখা প্রভৃতি।

 

চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কি বলবেন?

চলচ্চিত্রের সোনালি দিনে ফিরে যেতে চাই। সবাই মিলেমিশে ভালো কাজের মাধ্যমে এই চলচ্চিত্র শিল্পটিকে আবার বিশ্ব দরবারে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। বেঁচে থাকতে এ অবস্থা দেখে যেতে পারলে মরেও শান্তি পাব।

সর্বশেষ খবর