শিরোনাম
শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
এ টি এম শামসুজ্জামান

‘বেঁচে থেকে নিজের মৃত্যুর খবর শোনা অনেক কষ্টের’

আলাউদ্দীন মাজিদ

‘বেঁচে থেকে নিজের মৃত্যুর খবর শোনা অনেক কষ্টের’

‘ঢাকাই চলচ্চিত্রের শক্তিমান অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান আর নেই!’ এমন খবর গত ৫ বছরে একাধিকবার চাউর হয়েছে। এ ধরনের গুজব ছড়ানোকে কেউই ভালো চোখে দেখে না। দেখার কথাও নয়। একজন জীবিত মানুষকে নিয়ে এমন রসিকতা করা হীন মানসিকতারই পরিচয় বহন করে। এ ধরনের খবর অন্যদের যেমন অস্বস্তি আর আতঙ্কে ভোগায় তেমনি যে মানুষটিকে নিয়ে এমন গুজব ছড়ানো হয় তিনিও বিব্রত হন। শুধু এ টি এম শামসুজ্জামান নয়, এর আগে প্রয়াত নায়ক রাজরাজ্জাকের বেলাতেও একাধিকবার এমন গুজব ছড়িয়েছিল এক শ্রেণির বিকৃত রুচির মানুষ। আর সেই কারণে নায়করাজ সত্যি যেদিন মারা যান সেদিন প্রথমে তার মৃত্যুর খবর শুনে মিডিয়াসহ সবাই এই খবরকে আবারও গুজব বলে  হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। এমন ঘটনা ঘটেছিল ঢালিউড কুইন শাবানার ক্ষেত্রেও। সোশ্যাল মিডিয়া তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে রীতিমতো সবাইকে শোকাহত করে তোলা হয়েছিল। ২০১৩ সালে প্রথমবার এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর মিথ্যে খবর প্রচার করা হয়। সেই থেকে গত ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার এই জলজ্যান্ত মানুষটিকে মেরে ছেড়েছে মিথ্যে রটনাকারীরা। খবরটি শুনে দুঃখ নিয়ে এই বর্ষীয়ান অভিনেতা বলেন, বুঝি না কারা কেন এ ধরনের খবর প্রচার করে। এতে তাদের মজাটা কোথায়? সবাইকে তো একদিন মৃত্যুর স্বাদ নিতেই হবে। তাই বলে বেঁচে থাকতে কেন এমন খবর ছড়ানো হয়। যারা এমন মিথ্যে খবর প্রচার করে তারাও তো একদিন মারা যাবে। আসলে বেঁচে থেকে নিজের মৃত্যুর খবর শোনা অনেক কষ্টের। আমি অনুরোধ করব যারা এমন গর্হিত কাজটি করে তাদের অন্তরে যেন বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত হয় এবং এমন বাজে কাজ থেকে বিরত থাকে। দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র জগতের খরা নিয়েও উদ্বিগ্ন তিনি। চলচ্চিত্রের নির্মাণ কাজ কমে গেছে বলে নিজের প্রিয় কর্মস্থল এফডিসিতেও তার খুব একটা আসা হয় না। তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, এফডিসিতে এখন কাজ তেমন হয় না, তাই আসাও হয় না। কেউ মারা গেলে জানাজা পড়তে আসি। আর কখনো কাজ বা কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলে আসতে হয়। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ৭৬তম জন্মদিন পালন করলেন এই অভিনেতা, তার কাছে প্রশ্ন ছিল দীর্ঘ এই জীবনে প্রাপ্তি কেমন? তার কথায়, আমি আমার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট। কখনো কারও সাহায্যের ধার ধারিনি। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে পথ চলেছি। আগামীতেও এই বিশ্বাসে ভর করে পথ চলব। চলচ্চিত্রে যারা নতুন আসছে তাদের জন্য এই দক্ষ অভিনেতার পরামর্শ হলো—‘তাদের বলব অভিনয় শিখে আস, বাংলা ভাষাটা ঠিকভাবে শিখ। কারণ আমরা বাঙালি, আর আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। তাই নিজের ভাষাকে বিশ্বদরবারে যথার্থভাবে তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। নতুনদের বলব ধ্বনি তত্ত্বের ওপর জোর দিতে। চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের অর্থের পরিমাণ নিয়ে তিনি দুঃখ করে বলেন, ছবি নির্মাণে সরকার যে টাকা দেয়, ওই টাকায় কোনোদিন ভালো ছবি হয় না, বরং লুডু খেলা যায়। এ অর্থকে আমার কাছে চলচ্চিত্রের ফিতরা মনে হয়। সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, ৪-৫ কোটি টাকা যাই বরাদ্দ থাকুক সেটা যেন দুজন নির্মাতার মধ্যে দেওয়া হয়, যারা ভালো ছবি বানাতে পারেন। তাহলে ভালো ছবিও নির্মাণ হবে সরকারি টাকাটাও সঠিকভাবে কাজে লাগবে। সবশেষে জনপ্রিয় এই অভিনেতা আবারও অনুরোধ জানিয়ে বলেন, প্লিজ জ্যান্ত মানুষকে কেউ মেরে ফেলবেন না। এটি যাকে মারা হচ্ছে তার ও তার পরিবার এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য কতটা কষ্টের একবার ভেবে দেখুন।

সর্বশেষ খবর