শনিবার, ১২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

তারকাদের যত খেতাব

তারকাদের যত খেতাব

শোবিজ তারকাদের মধ্যে অনেকেই নিজ কর্মদক্ষতায় লাভ করেন নানা খেতাব। পরবর্তীতে তিনি দেশ-বিদেশে সেই খেতাবেই পরিচিত হন। মানে তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় বিশেষ একটি বিশেষণ। ঢালিউড, টলিউড এবং বলিউডের এমন খেতাবপ্রাপ্ত তারকাদের একটি তালিকা তুলে ধরেছেন-আলাউদ্দীন মাজিদ

 

নায়করাজ রাজ্জাক

১৯৬৮ সালে জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছবির মাধ্যমে নায়ক হিসেবে বড় পর্দায় তার পথচলা। প্রথম ছবি হিট এবং পরবর্তীতে নীল আকাশের নীচে, অবুঝ মন, অশ্রু দিয়ে লেখা, ময়নামতি, মধু মিলন, অনন্ত প্রেমসহ একের পর এক বাম্পারহিট ছবি উপহার দিয়ে ঢালিউডের সব নায়ককে ছাড়িয়ে যান। বিপুল জনপ্রিয় এ নায়ককে প্রথিতযশা সাংবাদিক আহমদ জামান চৌধুরী সত্তরের দশকে ‘নায়করাজ’ উপাধি দেন।

 

মহানায়িকা সুচিত্রা সেন  

১৯৫৩ সালে উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে। এরপর এ নায়িকা একের পর এক হারানো সুর, সাগরিকা, সপ্তপদী, শাপমোচন, অগ্নিপরীক্ষা, সবার উপরে, দেবদাস, পথে হল দেরী, হসপিটাল, সাত পাকে বাঁধা, গৃহদাহ দ্বীপ জ্বেলে যাইসহ অসংখ্য জনপ্রিয় ছবি উপহার দেন। আর এর মাধ্যমে কলকাতার বাংলা ছবির সর্বকালের সেরা নায়িকায় পরিণত হন। তার দর্শক-ভক্ত ও চলচ্চিত্রকাররা তাকে ভালোবেসে মহানায়িকা উপাধি দেন।

 

ট্র্যাজেডি কিং দিলীপ কুমার

১৯৪৪ সালে দিলীপ কুমার প্রথম অভিনয় করেন হিন্দি ‘জোয়ার ভাটা’ ছবিতে। এরপর দিদার, আদমী, বৈরাগ, কোহিনূর, দাগ, আন্দাজ, অমর, মুঘল-ই-আজম, বাবুল, মেলা, ইনসানিয়াত, মধুমতি, গঙ্গা যমুনা, আন প্রভৃতি ছবিতে প্রচণ্ড প্রতাপের সঙ্গে অভিনয় করে বলিউডের মেগাস্টারে পরিণত হন। ছবির শেষ দৃশ্যে দিলীপ কুমার মারা যাবেন এটিই হয়ে গিয়েছিল নিয়ম। আর দর্শকও তাকে এই রূপে গ্রহণ করায় তার খেতাব হয়ে যায় ট্র্যাজেডি কিং।

 

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ববিতা

১৯৬৯ সালে ববিতা অভিনয় করেন ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবিতে। এরপর পীচ ঢালা পথ, স্বরলিপি, আলোর মিছিল, প্রভৃতি ছবিতে দক্ষ অভিনয় দিয়ে দর্শক মন জয় করেন। ১৯৭৩ সালে কলকাতার খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র অনঙ্গ বউ-এর ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে প্রচুর সম্মাননা ও প্রশংসা লাভ করেন। তখন থেকে তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী বলা হয়ে থাকে।

 

মহানায়ক উত্তম কুমার

১৯৪৮ সালে উত্তম কুমার বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছিল তার অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এ ছবির ব্যাপক সফলতার পর একে একে সাগরিকা, হারানো সুর, শাপমোচন, অগ্নি পরীক্ষা, সপ্তপদী, সবার উপরে, নায়ক, শিল্পী, ওগো বধূ সুন্দরী, অমানুষসহ অসংখ্য হিট ছবিতে তার অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনয় তাকে মহানায়ক খ্যাতি এনে দেয়।

 

ড্রিমগার্ল হেমা মালিনী

 ১৯৬৮ সালে ‘স্বপন কি সওদাগর’ দিয়ে হিন্দি ছবিতে যাত্রা শুরু। এরপর সীতা আউর গীতা, শালিমার, শোলে, আন্দাজ, নসীবসহ অসংখ্য ছবিতে দক্ষ অভিনয় দিয়ে দর্শক মন জয় করেন। ১৯৭৭ সালে ‘ড্রিম গার্ল’ ছবির নাম ভূমিকায় অতুলনীয় অভিনয় আর গ্লামারের ঝলক দিয়ে ‘ড্রিম গার্ল’ খেতাব পান এই অভিনেত্রী।

 

শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চন

১৯৬৯ সালে ‘সাত হিন্দুস্তানী’ ছবিতে।  তার সাফল্য আসে ১৯৭৪ সালে। অভিনয় করলেন  ‘জঞ্জির’ ছবিতে। এক রাগী পুলিশ অফিসারের চরিত্র। ছবিটি বাম্পারহিট। এই ছবি তাকে ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ খ্যাতি এনে দেয়। এরপর এ ধরনের ছবি নেমকহালাল, কুলি, লাওয়ারিশ, নসীব, পুকার, ইনকিলাব, আখেরিরাস্তা, খোদা গাওয়া, মহান, কালা পাথর, ত্রিশূল, শোলে, খুদ্দার তাকে সত্যি রাগী যুবকে পরিণত করে। ১৯৮৭ সালে অভিনয় করেন ‘শাহেনশাহ’ ছবিতে। এ ছবিতে তার বহুমাত্রিক অনবদ্য অভিনয় তাকে বলিউডের শাহেনশাহ খেতাব এনে দেয়।

 

সুপারস্টার শ্রীদেবী

১৯৮৩ সালে হিন্দি ছবি হিসেবে ‘সদমা’তে তার অভিনয় শুরু। এরপর তোফা, আকলমান্দ, হিম্মতওয়ালী, নাগিন, মি. ইন্ডিয়া, চাঁদনী, জাস্টিস চৌধুরী, চালবাজ, খোদা গাওয়া, লামহে, জুদাই, ইনকিলাব, আখেরি রাস্তাসহ বহু বাম্পারহিট ছবিতে অসাধারণ অভিনয় কারিশমা দেখিয়ে এ অপরূপা সুন্দরী বলিউডে কাঁপন ধরান। বলিউডে তিনিই একমাত্র নায়িকা সুপারস্টারের খেতাব লাভ করেন। শ্রীদেবীর নামেই মূলত ছবি লাভের মুখ দেখত।

 

শীর্ষ নায়ক শাকিব খান

১৯৯৯ সালে শাকিবের প্রথম মুক্তি পাওয়া ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবিটি দর্শক মন কাড়ে। ২০০৬ সাল ছিল তার অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ওই বছর তার অভিনীত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিটি বাম্পার হিট ব্যবসা করে। এরপর একে একে পিতার আসন, চাচ্চু, দাদীমা, মায়ের হাতে বেহেশতের চাবি, চাচ্চু আমার চাচ্চু, খোদার পরে মা, ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না, মাই নেম ইজ খানসহ প্রচুর ছবিতে অনবদ্য অভিনয় দিয়ে দর্শক মন জয় করেন এবং ঢালিউডের শীর্ষ নায়কের খ্যাতি পান। যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘নবাব’ এ তার লুক ও ভিন্নধর্মী অভিনয় তাকে ঢালিউডের ‘নবাব’ খ্যাতিও এনে দেয়।

 

বিউটি কুইন শাবানা

চট্টগ্রামের মেয়ে আফরোজা সুলতানা রত্না ১৯৬১ সালে প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক আজিজুর রহমানের হাত ধরে শিশুশিল্পী হিসেবে বড় পর্দায় আসেন। তার প্রথম ছবির নাম ‘নতুন সুর’। ১৯৬৭ সালে শাবানা নামে নায়িকা হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন ‘চকোরি’ ছবিতে। প্রথম ছবিতেই অপরূপ চেহারার জন্য দর্শক হৃদয়ে তিনি ঢালিউড বিউটি কুইন হিসেবে স্থায়ী আসন গড়ে নেন। এরপর আনাড়ি, ছোট সাহেব, আগুন, মালকা বানু, ভাত দে, মনিহার, সাম্পানওয়ালা, মাটিরঘর, ছুটির ঘণ্টা, অবুঝ মন, মধুমিলন, সোহাগ, ঘর সংসার, বৌরানী, ওরা ১১ জন, অনুরাগসহ অসংখ্য ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করেন।

 

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক ঘটে শাহরুখ খানের। এরপর ডর, আনজাম, রাম জানে, বাজিগর, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, দেবদাস, দিলতো পাগল হ্যায়, কুচ কুচ হোতা হ্যায়, মোহাব্বতে, কাভি খুশি কাভি গাম, মাই নেম ইজ খান, ডুপ্লিকেট, চেন্নাই এক্সপ্রেস প্রভৃতি ছবি তাকে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে যায়। বিশেষ করে ‘বাদশা’ ছবিতে তার প্রশংসনীয় দুর্দান্ত অভিনয় তাকে বলিউডের বাদশা খেতাব এনে দেয়।

 

আরও খেতাবপ্রাপ্ত তারকাদের তালিকা

ঢালিউড, টলিউড আর বলিউডের আরও খেতাবপ্রাপ্ত তারকাদের তালিকায় রয়েছেন ঢালিউডে মিষ্টি মেয়ে কবরী, রূপবান সুজাতা, ড্যাশিং হিরো সোহেল রানা, মনুমিয়া জাভেদ, অ্যাকশন হিরো ওয়াসিম, জসিম ও মান্না, মিয়াভাই ফারুক, সাফল্যের বরপুত্র সালমান শাহ, চাঁদনী জুটি শাবনাজ-নাঈম, বুনোসুন্দরী পপি, সোনাবন্ধু ডি এ তায়েব, বিউটি কুইন পরীমণি, টলিউডের অপু খ্যাত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রাগী নায়ক রঞ্জিত মল্লিক, বোম্বাদা প্রসেনজিৎ, বলিউডের সুপারস্টার রাজেশ খান্না, ভাইজান সালমান খান, মি. পারফেকসনিস্ট আমির খান, ধাক ধাক কন্যা মাধুরী, চির আবেদনময়ী রেখাসহ অনেকে।   

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর