জাতিসংঘ সংস্থা ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন বলিউড ডিভা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির ঘুরে এসে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার এক অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন শুভ্র ব্লেজারে মোড়ানো প্রিয়াঙ্কা। শান্তির দূত লাস্যময়ী এই অভিনেত্রীর সেই অভিজ্ঞতার কিছু চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন— পান্থ আফজাল
শরণার্থী শিবিরে অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা শিশু ও নারীরা ঝুঁকির মুখে আছে। একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ সব শিশুর প্রাপ্য। পৃথিবীতে নিজ কর্মের অবদান রেখে যাওয়ার মতো সুযোগ পাওয়া সব শিশুর অধিকার। কিন্তু রোহিঙ্গা শিশুরা তা থেকে বঞ্চিত। তাদের কিছুই নেই। খাদ্য নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই, বর্ষায় মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। এর মাঝেও তারা হাসছে। তবে, রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে এখন আমি এক ধরনের স্বস্তি দেখেছি।
মূলত কী উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসা?
আমার এই ট্রিপ ছিল শিশুদের জীবন বদলের ট্রিপ। সেই বার্তা নিয়েই বাংলাদেশে এসেছি। নিরাপদে-নির্বিঘ্নে বেড়ে ওঠার অধিকার প্রতিটি শিশুর রয়েছে। ৫-৬ বছরের শিশুদের চিত্রকর্ম দেখেছি আমি। তারা দেখেছে মাথার উপরে রকেট লঞ্চার, পায়ের তলায় মাইন। তারা সেটা মনে রেখেছে এবং এঁকেছে। আগামী বিশ্বের ভবিষ্যতরা খুব বাজে অবস্থায় আছে। যারা আগামীতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে তারা আজ পরিবারের সঙ্গে ঘুমোতে পারছে না, তাদের সামনে এমন নৃশংসমূলক কর্মকাণ্ড ঘটেছে। যেগুলো তারা মুছে ফেলতে পারছে না, ঘুমের মধ্যেও তারা ভয় পাচ্ছে এমন পরিস্থিতি কী ভাবা যায়। আমাদের এ বিষয়ে এখনই সোচ্চার হতে হবে।
হালকা নিরাপত্তায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। ব্যাপারটি আপনার জন্য কেমন ছিল?
আমি মনে করি না আমাকে কেউ আঘাত করবে! আর এই সবই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায়। বাংলাদেশের মানুষ, নিরাপত্তাকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক, শিশু আর প্রধানমন্ত্রী সবাই খুবই আন্তরিক। আমি দেখেছি বাংলাদেশের মিঠাই! আমি কোনোভাবেই ভীত ছিলাম না, কারণ এসব কিছুই আমার ধারণার বাইরে ছিল। বাচ্চারা আমার আলিঙ্গন চেয়েছে, আমিও। আমি শিশুদের আলিঙ্গন করতে খুব পছন্দ করি।
ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে আপনি চার দিনব্যাপী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনে মিয়ানমারকে এমন নৃশংস বর্বরতার পরিপ্রেক্ষিতে কি কোনো বার্তা দেবেন?
আমি এখানে এসেছি মূলত শিশুদের পক্ষ থেকে। এসব রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলতে আমি নিজেকে খুবই ক্ষুদ্র মনে করি। আমি শুধুই বলতে পারি শিশুদের এসব নির্মম ব্যাপার নিয়ে। আমি মনে করি, বিশ্বের সামনে এসব শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে পজিটিভলি বিভিন্ন বিষয়ই তুলে ধরা এই মূহুর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি তো শিশুদের প্রধানমন্ত্রী...
আমি সারা বিশ্বের শিশুদের প্রধানমন্ত্রী হতে চাই। আমাকে আপনারা কি শিশুদের প্রধানমন্ত্রী বানাবেন? আমি যখন প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি তিনি আমাকে তাঁর বাবার লেখা একটি বই দিয়েছেন, যার ওপরে কার্ডে লেখা ছিল ‘প্রাইম মিনিস্টার অব বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী)। যখন আমার কার্ড হবে তখন তাতে লেখা থাকবে ‘প্রাইম মিনিস্টার, চিলড্রেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ (বিশ্বের শিশুদের প্রধানমন্ত্রী)।
মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে বা এই ইস্যুতে ভারত কি আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখবে?
আমি রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার মতো উপযুক্ত নই। আমি হয়তো সব জানিও না। আমি দোষারোপে বিশ্বাস করি না। আমি শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবী। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাকে একটি কার্ড দিয়েছেন সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নামফলক আছে। আমি কখনো প্রধানমন্ত্রী হলে অবশ্যই চাপ দেব।
সংকটের জন্য যে সব দেশ দায়ী তাদের কোনো চাপ দিবেন কিনা?
আমি কোনো রাজনৈতিক কর্মী নই। আমি একজন অভিনেত্রী এবং আমি আমার জায়গা থেকে শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
আপনি কি বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেন?
আমি খুব বেশি বাংলা বলতে পারি না। শুধু বলতে পারি, ‘তোমার নাম কী? এখানে (বাংলাদেশে) প্রত্যেক শিশুকে এই প্রশ্নটি করেছি। তাই এই বাক্যটি আমার জানা। আরও বলতে পারি ‘রসগোল্লা’।
আপনার কয়টি শিশুসন্তান আছে?
স্মার্ট প্রশ্ন। জানতে চাচ্ছেন আমার সন্তান আছে কি না! হয়তো জানেন যে আমার সন্তান নেই। তবে আমি যে শিশুদের নিয়ে কাজ করছি তারা সবাই আমার সন্তান। আপনার কয়টি আছে? (পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে) আপনি কি চাইবেন আপনার সন্তানরা এমন পরিস্থিতিতে পড়ুক যেখানে দেশে বোমা পড়ছে, লোকজনকে মেরে ফেলা হচ্ছে? যদি আপনার সন্তানদের ক্ষেত্রে এটি হয় তাহলে কি আপনি চাইবেন না কেউ তাদের সহযোগিতা করুক? শিশু শিশুই। সে কোথা থেকে এলো, তার অভিভাবক কী করেছিল, তার কী ধর্ম-এসব প্রশ্ন অর্থহীন। বিশ্বের প্রতিটি শিশুকে রক্ষার দায়িত্ব এই বিশ্বের এবং আমাদের মতো ব্যক্তিদের। ইতিহাস, ভূগোল, ভৌগোলিক অবস্থান-এগুলো শিশুদের কাছে তুচ্ছ। প্রতিটি শিশুই তার ভবিষ্যৎ চায়। প্রতিটি শিশুই মানবতার সেবায় ভূমিকা রাখার সুযোগ প্রত্যাশা করে।
যতদূর জানি ‘প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ফাউন্ডেশন’ নামে আপনার নিজেরও একটি শিশু সংস্থা আছে। এই ইস্যুতে ফাউন্ডেশনের কোনো ভূমিকা থাকছে?
আমার অভিনয় ক্যারিয়ারের বয়স এখন ১৮ প্লাস। আর এই ফাউন্ডেশনের বয়স প্রায় ১০ বছর। ৮০ জন বাচ্চা এই ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে আছে। আমি এই ফাউন্ডেশন থেকে ক্ষুদ্র কিছুই করতে পারি, তেমন করে নয়। ভবিষ্যতে অবশ্যই এই বিষয়ে বিশাল কিছু করতে পারব।