মঙ্গলবার, ৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমাদের সেই পপসম্রাট

আমাদের সেই পপসম্রাট

আজম খান

আজ কিংবদন্তি পপ সম্রাট আজম খানের প্রয়াণের ৭ বছর হলো। বাংলা পপ সংগীতের পথিকৃৎ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আজকের এই বিশেষ দিনে পপগুরুকে স্মরণ করেছেন সংগীত ভুবনের কিছু প্রিয় মানুষ। লিখেছেন— পান্থ আফজাল

   

প্রথম পরিচয়েই মুগ্ধ হয়েছিলাম : ফেরদৌস ওয়াহিদ

১৯৭৩ সালে ফিরোজ সাঁই আজম খানকে নিয়ে এলেন আমার কাছে। পরিচয়ের প্রথম দিনই আজম খানের গানে মুগ্ধ হলাম আমি। তখনই চিন্তা করলাম, তাঁর গান রেকর্ডিং করব। বন্ধু এনায়েতুল্লা খানকে দিয়ে ইশতিয়াকদের রাজি করালাম। গান রেকর্ডিং করতে গিয়ে মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমাদের। এর কিছুদিন পরেই আমি, বন্ধু শামীম ও রুমি মিলে আড়াইশ টাকা দিয়ে ইন্দিরা রোডের ঢাকা রেকর্ডিং স্টুডিওতে এক শিফট ভাড়া করলাম। ওখানে আজম খান গাইলেন ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ ও ‘হাইকোটের্র মাজারে’ এবং আমি গাইলাম ‘চাঁদ জাগে তারা জাগে’ ও ‘দুনিয়াটা কত যে মজার’— মোট চারটি গান। গান শোনার পর খুশি হয়ে স্টুডিওর মালিক আমাদের গানগুলো রেকর্ড আকারে বের করার দায়িত্ব নিলেন। গানগুলো সুপারভিশন করে দিলেন আজম খানের বড় ভাই আলম খান।

 

সংগীত ভুবনে আজম খান এক বিস্ময়:ফকির আলমগীর

আমার বাল্যবন্ধু। একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করেছি,গান করেছি। সংগীত ভুবনে সে এক বিস্ময়, অবিস্মরণীয় প্রতিভা। দেশীয় সংগীতের সঙ্গে পাশ্চাত্য সংগীতের সংমিশ্রণে সে তৈরি করেছিল ভিন্ন মাত্রা। এই নোংরা আইটেম সংয়ের সময়ে আজম খানের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। তার শূন্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। ছোটবেলায় একসঙ্গে স্টেডিয়ামের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতাম, কমলাপুর রেললাইন ধরে হেঁটে যেতাম। জসীমউদ্দীন রোড, চিটাগং হোটেল, কমলাপুর টাওয়ার, মতিঝিল পানির পাম্পে আড্ডা দিতাম। শবেবরাতের রাতে মতিঝিলের ১০-১২ জন লুলা-খোঁড়া ভিক্ষুকের একসঙ্গে সুর তোলা গান শুনে সে গাইল ‘এতো সুন্দর দুনিয়া কিছুই রবে না রে...হে আল্লাহ, হে আল্লাহ রে...। অন্যদিকে হাই কোর্টের মাজারে নূরা পাগলাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সে সৃষ্টি করল ‘ হাই কোর্টের মাজারে...।’

 

তার সঙ্গে আমি শত শত স্টেজ শো করেছি : জানে আলম

আজম ভাই আমাকে বেশি আদর করতেন। আমার আজকের এই অবস্থানের পেছনে তার অবদান অনেক। আগে ক্লাসিক বেজড গান করতাম। তিনি একদিন বললেন, ‘তুই এইবার ধারাটা পরিবর্তন করে পপ ঘরানার গান কর। আমি মডার্ন বেজড পপ গান করি, তুই ফোক বেজড পপ গান কর।’ তার কথায় ধারা পরিবর্তন করে আধ্যাত্মিক ও ফোক বেজড পপ মিশেলে গান গাইতে শুরু করলাম। তার সঙ্গে আমি শত শত স্টেজ শো করেছি। সব সময় আমাকে আগে গান গাইতে পাঠাতেন। একবার ওল্ড টাউনে বিরাট একটি স্টেজ শোতে তার সঙ্গে আমি গান গাইছি। স্টেজের সামনে হাজারো মানুষ। আজম ভাইয়ের সঙ্গে আমি গান ধরলাম— ‘আগে না জানিলাম কেন পিরিতি করিলাম, মরিলাম সোনা বন্ধুর প্রেমেতে...তখন উত্সুক শ্রোতার মধ্য থেকে কয়েক শ মানুষ স্টেজে উঠে পড়ল। এরপরই বিকট শব্দে স্টেজ ভেঙে পড়ল। আজম ভাইয়ের পা স্টেজের তক্তায় আটকে গেল। অনেক চেষ্টা করে তক্তা কেটে তাকে বের করে আনা হলো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর