শিরোনাম
শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

তিনি অন্য আসিফ

রণক ইকরাম

তিনি অন্য আসিফ

তাকে বলা হয় বাংলা গানের যুবরাজ। মাঝখানে দীর্ঘদিন দূরে ছিলেন গান থেকে। ‘আগুন’ শীর্ষক গান দিয়ে ফেরার পর শুধুই চমকের পর চমক। মাঝখানে মামলার ঝামেলায় পড়েছেন। জেল থেকে বেরিয়ে বলেছেন আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা। কাজ কিন্তু সেই গতিতেই চলছে, ঘোষণা এলো ওয়েব ফিল্মের। নায়িকা মাহিয়া মাহি। কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের অন্যরকম সময় নিয়েই এ প্রতিবেদন।

 

তার সাফল্যের শুরুটা অন্য আট-দশটি গল্পের মতোই। এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। ২০০১ সালে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ অ্যালবাম দিয়ে অডিওতে অভিষেক। যেটি দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রীত অ্যালবাম। এরপর সাফল্যের পারদকে আর কখনোই নিচে নামতে দেননি আসিফ। এখানেই অন্যসব সাফল্যের গল্পকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন তিনি। এই যে এত শ্রোতাপ্রিয়তা, এর পেছনের রহস্য কী? স্বভাবসুলভ অট্টহাসি আসিফ আকবরের। বললেন, ‘কোনো রহস্য নেই। আমার শ্রোতারা সেই প্রথম থেকে সঙ্গে ছিল, এখনো আছে। তাদের জন্য গান করি। তারাই সাফল্য এনে দেয়।’

অডিওর যুগ থেকে ইউটিউব ভিউর ইন্ডাস্ট্রি। অনেক বাঁক বদল দেখেছেন আসিফ। কেমন সেই পরিবর্তন? আসিফ আকবরের উত্তর, ‘আমি বরাবরই পজেটিভ মানুষ। এটাও পজেটিভলি নিয়েছি। ইন্ডাস্ট্রি যখন ধুঁকছিল, তখনই কিন্তু অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে সেটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাই পরিবর্তনটা স্বাভাবিকভাবেই নিতে হবে।’

এখন অডিওর পাশাপাশি সমান গুরুত্ব পাচ্ছে ভিডিও। এমনকি আসিফ আকবর নিজেও কখনো তরুণ, কখনো বৃদ্ধ আবার কখনোবা মাফিয়া ডনের ভূমিকায় আবির্ভূত হচ্ছেন মিউজিক ভিডিওতে। গান গাওয়ার পাশাপাশি ভিডিওতে অভিনয়, সত্যিকার অর্থেই তো অন্য আসিফ। প্রায় নিয়মিতই করতে হচ্ছে সেটা। আসিফ আকবরের কাছে বিষয়টা উপভোগের হলেও বেশ পরিশ্রমের। বললেন- ‘আমি সব কাজই এনজয় করি। তবে শুটিং বেশ ঝামেলার। বিশেষ করে মেকআপ। আর গরমের সময় শুটিং করা তো আরও কঠিন। এরপরও সবাই চায়, না করে উপায় কী?’

মিউজিক ভিডিও ছাপিয়ে ঘোষণা এসেছে ওয়েব ফিল্মে অভিনয় করছেন আসিফ আকবর। নাম ‘ভিআইপি’। চিত্রনির্মাতা সৈকত নাসিরের পরিচালনায় এর নায়িকা মাহিয়া মাহি। তাহলে কী অভিনয়ে মন দিচ্ছেন আসিফ আকবর? ‘একদমই না। আমি গানের মানুষ। গান নিয়েই থাকতে চাই। আর ওয়েব ফিল্ম আসলে সৈকত নাসিরের পরিকল্পনা। মাহিয়া মাহিকে কাস্টিং করা হয়েছে। আমিও থাকছি। দেখা যাক কী হয়!’

মাঝখানে ঘোষণা দিয়ে দীর্ঘদিন গান থেকে দূরে ছিলেন আসিফ আকবর। এরপর ‘আগুন’ শীর্ষক ভিডিও গান দিয়ে নতুন করে ফিরলেন। ফিরেই পুরনো সেই ফর্মে। এ বছরের শুরুর দিকে ঘোষণা দিয়েছিলেন অন্তত একশ গান গাইতে চান তিনি। সেই টার্গেটের কী অবস্থা? ‘একদম পারফেক্ট। আমি আগেই বলেছি ২০১৮ সালে টর্নেডো হবে। সেই মতো এর মধ্যে সত্তরের কাছাকাছি গানে ভয়েস দিয়ে ফেলেছি। ৩০টি রিলিজও হয়ে গেছে। তৈরি আছে ৪০টা। বছরের বাকি অর্ধেক তো রয়েই গেছে। টার্গেট ফিল আপ না হওয়ার কোনো কারণই নেই।’

এই যে এত গান গাইছেন, কোয়ালিটি ফল করছে না? আসিফ আকবরের পুরনো হাসি লেগেই আছে। ‘ভাইরে, আমি বারো গানের অ্যালবামের শিল্পী। একটা-দুইটা গান গেয়ে পোষাবে ক্যামনে? আর কোয়ালিটি? সেটা আমার চেয়ে শ্রোতারাই ভালো বলতে পারবেন। আমি যাদের জন্য আজকের আসিফ আকবর, তারা খুশি থাকলে আমার আর বলার কিছু নেই। আর ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বলেছি- ‘আমি এমনভাবে গাই, যাতে মাঝখানে কোনো হিন্দী গান ঢুকতে না পারে।’

আসিফ আকবর এমনই। সোজাসাপ্টা, ঠোঁটকাটা। মুখে কিছু আটকায় না। সত্য প্রকাশের সৎ সাহসটাকেই নিজের অহংকার মানেন আসিফ। আর ভয় পান নিজের মেজাজটাকে। তবে সময়ের সঙ্গে সেটাকেও কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বলে জানালেন হাসতে হাসতেই। কদিন আগে কণ্ঠশিল্পী শফিক তুহিনের মামলায় কারাবাস করে ফিরেছেন আসিফ। সেই বিষয় নিয়ে কী ভাষ্য তার? ‘নতুন কিছু বলার নেই। আর যেহেতু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তাই আমি বলব আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। তবে একটি কথা বলতে চাই, অপরাধ প্রমাণের আগে কাউকে অপরাধী বলা ঠিক নয়। তাই নির্দোষ হয়েও কেন আমি জেল খাটলাম সেই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছেও নেই।’

কপিরাইট ইস্যুতে আন্দোলন শুরু করলেন, একই ইস্যুতে অনেকদিন গান থেকেও দূরে থাকলেন। সেই তিনিই আবার কপিরাইট লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হলেন। আসিফ আকবরের ব্যাখ্যা কী? ‘এই কথা বহুবার বলেছি। আবারও বলছি। যে গানগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে, সেগুলো মূলত সাউন্ডটেকের গান। কপিরাইট নিয়ে যখন আমি সোচ্চার হলাম, তখন সবাই বলল আমাকে উদ্যোগ নিতে। আমি আমার নিজের কনটেন্টের পাশাপাশি কিছু কনটেন্টে অনেকের সম্মতিতে পক্ষে স্বাক্ষর করেছি। সেই অনেকের মধ্যে দুয়েকজন বিষয়টি অপপ্রচার চালাচ্ছে। কোটি টাকা দূরে থাকুক, সেই চুক্তিই অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। সময় হলেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে।’

আবার কাজের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। ইদানীং অনেক নতুন কোম্পানি আসছে। সেই কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই যাত্রা শুরু করছে আসিফ আকবরের গান দিয়ে। এটা কেন? আসিফ আকবরের উত্তর- ‘সেটা তারা ভালো জানেন। তবে আমার সৌভাগ্য যে, একটা কোম্পানি আমার একটি গানের ওপর ভিত্তি করে যাত্রা শুরু করার মতো সাহস দেখাচ্ছে। আমি আসলে ভিউ গোনার শিল্পী নই। গান গাই শ্রোতাদের জন্য, শ্রোতারাই সব।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিকবার দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলছেন। নিছক হেঁয়ালী, নাকি সত্যি সত্যি? এবারের হাসি আরও জোরে। আসিফ আকবর বললেন, ‘সেই রহস্য ভাঙলে তো কোনো রহস্যই থাকল না। এ বিষয়ে কিছুই বলব না। মানুষের জীবনে তো কত রংই বদলায়, আসিফ আকবরের জীবনে একটু রং লাগলে ক্ষতি কী?’

বলেই আবারও রহস্যের হাসি। আসিফ আকবর এমনই। মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পরের বছর ২৫ মার্চ কুমিল্লায় জন্ম তার। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ষষ্ঠ তিনি। ১৯৯২ সালে যখন সালমা আসিফ মিতুকে বিয়ে করেন আসিফের বয়স তখন মাত্র উনিশ! বাউণ্ডুলে জীবনের মাঝেই সংসারের শুরু। সেখানেই কুমিল্লার স্থানীয় ব্যান্ড ‘ফিকল বয়েজ’-এর জন্ম। সেখান থেকে ক্যারিয়ার গড়ার নেশায় ঢাকা। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বারোয়ারি ব্যবসায় জীবন চালিয়েছেন। এরপর ফিল্মে প্লে-ব্যাক। তারও বেশ পড়ে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’- পরেরটুকু সবার জানা। আসিফই সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র শিল্পী, যিনি প্রথম থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত সাফল্যের রেখাটা সমান্তরালে রাখতে পেরেছেন। আসছে ঈদে একাধিক কোম্পানি থেকে দশটিরও বেশি গান বাজারে আসছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বাংলা ঢোল থেকে সাদাত হোসাইনের পরিচালনায় আসিফ আকবরের ডকুমেন্টারির কাজও প্রায় শেষের পথে। সেখানেও থাকছে একাধিক গান। আর প্রতিদিনই নতুন কোনো না কোনো গানে কণ্ঠ দিচ্ছেন অথবা অংশ নিচ্ছেন ভিডিওর শুটিংয়ে। এ নিয়েই আপাদমস্তক নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চান। নিন্দুকের নিন্দা কিংবা সমালোচকের আলাপকে আসিফ আকবর পাত্তা দেন থোড়াই!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর