শিরোনাম
শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

আবদুল আলীমের গান বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চান তারা

আলাউদ্দীন মাজিদ

আবদুল আলীমের গান বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চান তারা

বাঁ থেকে আজগর আলীম, নূরজাহান আলীম ও জহির আলীম

তারাই পারবেন সবার মধ্যে গানগুলো ছড়িয়ে দিতে...

বাংলা লোকসংগীতের সম্রাট আবদুল আলীমের দুই পুত্র জহির আলীম ও আজগর আলীম। আর কন্যা নূরজাহান আলীম।

বাবার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলো থেকে বাছাই করা গানের মোহনীয় সুরের ইন্দ্রজালে এখনো দর্শক-শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করে রাখেন তার সুযোগ্য পুত্র-কন্যারা। সংগীতবোদ্ধাদের কথায় পুত্র কন্যারাই পারবেন বাবার গানগুলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে অমর করে রাখতে। জহির আলীম বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের একজন তালিকাভুক্ত কণ্ঠশিল্পী এবং দেশের একমাত্র সংগীত প্রতিষ্ঠান সরকারি সংগীত কলেজের লোকসংগীত বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। মূলত তিনি তার বাবার গাওয়া গানগুলো গেয়েই দেশে বিদেশে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেমন- যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন, উত্তর কোরিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আমাদের লোকসংগীতকে পৌঁছে দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে তাকে তবলায় সহযোগিতা করেন তারই ছোট ভাই আজগর আলীম। যিনি ছোটবেলা থেকেই তবলা বাজান। বাবা আবদুল আলীমের সঙ্গেও তিনি তবলা বাজিয়েছেন। তিনিও ভাই-বোনদের সঙ্গে তবলা বাজান দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। ১৯৬৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশন যখন যাত্রা শুরু করে, সেদিন ফেরদৌসী রহমান, আবদুল আলীম, মুনীর চৌধুরী, ফেরদৌসী মজুমদার (তখন মজুমদার ছিলেন না), হেনা কবীরসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আলীম ভাই সাদা পাজামা, একটু ওফ হোয়াইট পাঞ্জাবি, একটা চাদর কাঁধে টেলিভিশনে আসতেন। আবদুল আলীমের পরিচয় এখন যারা নতুন তাদের বোঝানো কঠিন। নতুন প্রজন্মকে বলতে হয়- আবদুল আলীম যখন গাইতেন বাংলাদেশের মাঠের মানুষ, নদীর মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত সব কান পেতে শুনতেন। তার কণ্ঠ, সুর ভেসে বেড়াত বাংলার আকাশে-বাতাসে। আবদুল আলীম বাংলাদেশকে সুর দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন। সেই সময় কোনো একটি রেস্টুরেন্টে, হাটে, মাঠে, ঘাটে জনপদে যদি গিয়ে বলেন এই আবদুল আলীমের ছেলে জহির, এই আবদুল আলীমের ছেলে আজগর, জানি না তখনকার দিনে কি হতো। বহির্বিশ্বে আমরা যাকে নিয়ে অহংকার করতে পারি, যার গান আমাদের রুট, আমাদের মা-মাটি-দেশের কাছাকাছি নিয়ে যায় তিনি শিল্পী আবদুল আলীম। এই মহান গুণী শিল্পীর সুযোগ্য পুত্রদ্বয় ও কন্যা বাবার গানকে অমর করে রাখতে যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। আবদুল আলীমের বিখ্যাত গানের মধ্যে অন্যতম হলো- ‘হলুদিয়া পাখি’, ‘সোনারই বরণ পাখিটি ছাড়িল কে’, ‘পরের জায়গা পরের জমিন ঘর বানাইয়া আমি রই’, ‘দুল দুল দুলুনি, রাঙা মাথার চিরুনি’, ‘চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি’, ‘দয়া করে এসো দয়াল, এসো এই অধীনের হৃদ মাজারে,’ ‘মনে বড় আশা ছিল যাব মদিনায়’, ‘আল্লাহু আল্লাহু তুমি জাল্লে জালালুহু’ ইত্যাদি। সেই মাটির সুর, যে সুর হেলেদোলে গলায় এসে মনে নামায় শান্তির ছায়া। বাংলা গানের পরশমণি লোকসংগীত। আর সেই লোকসংগীতের কিংবদন্তি গায়ক শ্রদ্ধেয় আবদুল আলীম। এই পল্লীসাধক আবদুল আলীমের সুযোগ্য কন্যা সুমধুর কণ্ঠশিল্পী নূরজাহান আলীম তার বাবার গান নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করছেন। দেশের স্বনামখ্যাত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশন থেকে আবদুল আলীমের বিখ্যাত কিছু গান নিয়ে অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন তিনি। অ্যালবামের নাম ‘যারে ছেড়ে’। এতে আছে আবদুল আলীমের কালজয়ী গান ‘অসময়ে বাঁশি বাজায় কে রে’, ‘যারে ছেড়ে’ ও ‘তোমারও লাগিরে’। আনপ্লাগড ভার্সনে গানগুলোর সংগীতায়োজন করেছেন জাহিদ বাশার পংকজ। অমর শিল্পীর অনবদ্য সৃষ্টিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে এই আয়োজন। অ্যালবামের জন্য যে গানগুলো নির্বাচন করা হয়েছে, সে ধরনের গান এখন আর তৈরি হয় না। অথচ লোকজ আমেজের এই গানগুলোর আবেদন কখনই ম্লান হওয়ার নয়। শ্রোতারা গানগুলো শুনলেই তার প্রমাণ পাবেন।

সর্বশেষ খবর