বুধবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অপুর সংসার...

আলাউদ্দীন মাজিদ

অপুর সংসার...

একদিকে কাজ অন্যদিকে জয়, আমার পরম প্রিয় এই দুই পৃথিবী নিয়ে আমি এখন বেশ আছি। নেই কোনো চিন্তা। একেবারে ফুরফুরে মেজাজে কেটে যাচ্ছে শীত, বসন্ত আর গ্রীষ্মের আবেশমাখা দিনগুলো। বলতে পারি বেশ ভালো আছি। চিরাচরিত মিষ্টি হাসিমাখা মুখে সাবলীলভাবে কথাগুলো বলে গেলেন মিষ্টি মেয়ে অপু বিশ্বাস। এখন হেমন্তকাল। আকাশে শুভ্রতার মেলা। নীল আকাশে পেঁজা পেঁজা মেঘের ভেলা। এই দুইয়ের অনিন্দ্য সুন্দর স্বপ্নে ভাসতে গিয়ে মনের ঘরে নস্টালজিয়া এসে কি ভিড় করে। হৃদয়ের দরজায় অতীত কোনো স্মৃতি কি টোকা দেয়?

পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ঢালিউডের মিষ্টি মেয়ে অপু বলেন, মানুষের জীবনটাই তো একটা স্মৃতির আধার। পথ চলতে গেলে পথের দুই ধারে শুধু ফুল থাকে না। সেই ফুলে কাঁটাও থাকে। ফুলের সৌরভে মনটা যেমন উচাটন হয় তেমনি আবার কাঁটার আঘাতে মনের গভীরে ক্ষত তৈরি হয়, রক্ত ঝরে। তাই বলে কী জীবন থেমে থাকে?

জয়কে ঘিরে সময় এখন কেমন কাটছে?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে হেসে উঠলেন ঢালিউডের অনিন্দ্য সুন্দরী এই নায়িকা। সেই হাসিতে তৃপ্তির লেশ ছিল, স্বস্তির গভীরতাও মাপা গেল। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে আবার জানতে চাইলেন, ও হ্যাঁ কি যেন বললেন, আচ্ছা জয়ের কথা, দাঁড়ান বলছি, আরে জয় তো আমার এক বুক পৃথিবী। তার আধো আধো বোলে ‘মা’ ডাকা শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। জানালার ফাঁক গলিয়ে সকালের শিশু রোদ আমার আর জয়ের মুখ ছুঁয়ে  দেয়। আহা সে কি পরম মমতা। তারপর দুজন মিলে অনাবিল খেলায় মেতে উঠি। ওর রাজ্যের যত আব্দার আর খেলাধুলায় দিনটা টইটম্বুর হয়ে ওঠে। মুহুর্তেই হারিয়ে যাই মায়াঘেরা পৃথিবীতে। স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে দুজনে উঠে যাই স্বপ্নিল ভুবনে। এই সুখের নেই কোনো ঠিকানা। খোলা ছাদে দাঁড়িয়ে দুই হাত বাড়িয়ে পৃথিবী আর আকাশ-বাতাসকে জানিয়ে দিতে চাই-‘আমার মতো এত সুখের নয়তো কারও জীবন’...। আবার তৃপ্তির হাসির ঢেউ অপুর স্নিগ্ধ মায়াবী চোখে-মুখে।

জয়ের বেড়ে উঠা নিয়ে অপুর উচ্ছ্বাস ভরা কথা- ‘ওর মাঝে প্রতিনিয়ত প্রতিভা লতিয়ে উঠছে’ দোয়া করবেন বিধাতা যেন ওকে দীর্ঘ জীবন আর সত্যিকারের মানুষ করে গড়ে দেন। আমি আর কাঁদতে চাই না। দু’চোখকে বলেছি, আর অশ্রু নয়, এবার রংধনুর সাত রঙে ঘেরা পৃথিবী আর হাসিমাখা মুখে মায়াময় জয়কে দেখতে চাই। বলতে বলতে আনমনা হয়ে দূর আকাশে দৃষ্টি মেলেন স্নিগ্ধতায় ভরা অপু।

এবার কাজের কথা শুনতে চাই, কয়েকবার এ প্রশ্নের পুনরাবৃত্তির পর মনভাঙ্গা অপু যেন সম্বিত ফিরে পেলেন বাস্তবের পোড়-খাওয়া জীবনে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন- ও হ্যাঁ কাজ, আসলে কাজ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়। এই যে এখন আমি দুরন্ত গতিতে সব ক্লান্তি ভুলে কাজের পেছনে অবিরাম ছুটে চলছি। সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা-রাতকে আলাদা করে দেখার সময় হয় না। অনেকের প্রশ্ন- ছবির কাজ কমিয়ে দিয়ে স্টেজ শো বা কোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অপুকে কেন বেশি দেখা যায়। এর সরল জবাব অবশ্যই আছে আমার কাছে। ছবির কাজ শুরু করতে হলে মনের মতো গল্প আর চরিত্র পেতে হবে। আমাকেও অভিনেত্রীসুলভ গড়নে ফিরতে হবে। সেই জার্নিটা তো চলছেই এখন। এরই মধ্যে ওপার বাংলার ‘শর্টকাট’ আর এপার বাংলায় ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ টু’ ছবিতে কাজ শুরু করেছি। স্টেজ শো আর নানা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনীতে কেন যুক্ত হই? এমন প্রশ্ন অনেকের। তবে শুনুন, মানুষ যে আমাকে এত ভালোবাসে যদি বিপদে না পড়তাম তা হলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না। মানুষের অবারিত ভালোবাসার টানে আমাকে এসব অনুষ্ঠানে ছুটে যেতে হয়। কাউকে না বলতে খারাপ লাগে। নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হয়। আমি কারও মনে দুঃখ দিতে চাই না। দুঃখ পাওয়াটা যে কত কষ্টের সেটা আমার মন জানে। আমি এখন সবাইকে সুখী করতে চাই আর পরম আদরের জয়কে নিয়ে সুখী হতে চাই। এসব অনুষ্ঠানের অবারিত সম্মান আমার মাথায় ভালোবাসার মুকুট হয়ে শোভা পায়।

আগামী দিনগুলো রংধনুর রঙে রাঙিয়ে তুলতে নতুন কিছু ভাবছেন? এমন প্রশ্নে সরলা অপুর চোখের কোণের অশ্রুকণা চিকচিক করে ওঠে। লুকিয়ে চোখ মোছার ব্যর্থ চেষ্টা করেন মায়াবী অপু। তারপর আবার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠেন- ওই যে বললাম, জয়ই এখন আমার সারাটা পৃথিবী। ওকে নিয়ে খুব সুখী হতে ইচ্ছা করে। জয়কে সত্যিকারের মানুষ করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনে সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দেব, বাধার পাহাড় কেটে মসৃণ পথ বানাব। সেই পথ ধরে মা আর ছেলে চলে যাব অনেক দূরে। কোনো এক শান্তিপুর গ্রামে। যেখানে থাকবে শুধু অনাবিল সুখ আর অবারিত শান্তি। আমি ও জয় কখনোই আর দুঃখের মুখ দেখতে চাই না। শান্তিপুর গ্রামে চির শান্তির দেখা পেতে চাই। আকাশে-বাতাসে কান পেতে শুনতে চাই- ‘পৃথিবীতে সুখ বলে যদি কিছু থাকে সে আমার প্রেম...।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর