আবারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে বাংলাদেশি তারকা। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র জরিপে সেরা ভারতীয় নায়িকার তালিকায় স্থান করে নিলেন বাংলাদেশের জয়া আহসান। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত পত্রিকাটির এক জরিপে এই স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়া হয়। টাইমসের দৃষ্টিতে সেরা বাংলা ছবির নায়িকা এবং যে সব ছবির জন্য তারা শ্রেষ্ঠত্ব পেলেন তারা হলেন- পথের পাঁচালী ছবিতে সর্বজয়া চরিত্রে করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, মেঘে ঢাকা তারা ছবিতে নীতা চরিত্রে সুপ্রিয়া দেবী, চারুলতা ছবির চারু মাধবী মুখোপাধ্যায়, পারমিতার একদিন ছবির পারমিতা, শ্বেত পাথরের থালা ছবির বন্দনা এবং বসন্ত বিলাপ ছবিতে অনুরাধা চরিত্রে অপর্ণা সেন।
জয়া আহসানকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতার ছবি বিসর্জনে পদ্মা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। টাইমসের প্রতিবেদনে লেখা হয়, জয়া আহসান অভিনয় করেছেন ‘বিসর্জন’ ছবিতে। খুব সাধারণ গল্প। প্রয়াত স্বামীর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চাওয়া নারী পদ্মা। মধ্যবয়সী এক ব্যবসায়ী তার প্রেমে পড়ে, যে পদ্মাকে বিয়ে করতে চায়। ছবিতে স্বামীহারা এক বাঙালি নারীর অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন জয়া। নারীর গোপন বাসনা, পুত্রবধূর দায়িত্ব, সন্তানের প্রতি কর্তব্যের মধ্যেও প্রেমের দোলাচলে বাঁধা পড়ে সে। ছবিতে এক অনন্য উচ্চতায় পদ্মাকে নিজের মধ্যে ধারণ করে সফল হয়েছেন জয়া আহসান। চরিত্রটি রূপায়ণের মাধ্যমে অভিনয়ের জাত চিনিয়েছেন জয়া। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ার এই সম্মাননায় আপ্লুত জয়া বলেন, কাজের স্বীকৃতি একজন শিল্পীকে পূর্ণতা দেয়, ভালো কাজের উৎসাহ জোগায়। মডেল ও ছোট পর্দার অভিনেত্রী জয়া আহসানের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ব্যাচেলর ছবির মাধ্যমে। এর ৬ বছর পর ‘ডুবসাঁতার’, ২০১১ সালে ফিরে এসো বেহুলা এবং গেরিলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১২ সালে চোরাবালিতে একজন সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য টানা দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। গেরিলায় বিলকিস বানু চরিত্রে অভিনয় করে তিনি। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জুরিদের বিচারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার এবং ২০১৪ সালে বাচসাস পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। গেরিলা চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর থেকে তিনি নিয়মিত বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতার চলচ্চিত্রে কাজ করা শুরু করেন। জয়া আহসান ২০১৩ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে নিমন্ত্রণ পান। একই বছর তিনি অভিনয় করেন কলকাতার অরিন্দম শীল পরিচালিত আবর্ত ছবিতে। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি কলকাতার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ নবীন অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান। একই বছর বাংলাদেশের পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীতে অভিনয় করেন। ২০১৫ সালে অভিনয় করেন বাংলাদেশের জিরো ডিগ্রী ছবিতে। একই বছর কলকাতার একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো ও সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ নিয়ে নির্মিত রাজকাহিনী ছবিতে অভিনয় করেন। রাজকাহিনী ছবিতে অভিনয়ের জন্য কলকাতার ১৬তম টেলি সিনে পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৬ সালে মুক্তি পায় পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২। ওই বছর আরও অভিনয় করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপ্যাধ্যায় রচিত অরিন্দম শীল পরিচালিত কলকাতার ঈগলের চোখ ছবিতে। ২০১৭ সালে মুক্তি পায় জয়ার খাঁচা ছবিটি। ২০১৭ সালে অভিনয় করেন কলকাতার কৌশিক গাঙ্গুলীর ‘বিসর্জন’ ছবিতে। এতে অভিনয় করে কলকাতার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০১৮ সালে এই ছবির সিক্যুয়েল ‘বিজয়া’তেও অভিনয় করেন তিনি। ২০১৮ সালে প্রযোজক হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে জয়ার। হুমায়ূন আহমেদের দেবী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন সফল ছবি দেবী। ২০১৮ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত পুত্র ছবিটি। একই বছর বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত কলকাতার নারীবাদী চলচ্চিত্র ক্রিসক্রস মুক্তি পায়। বর্তমানে তার অভিনীত বাংলাদেশের নির্মাতা মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’ ও কলকাতার মেসিডোনা ও কণ্ঠ ছবিগুলো মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের কথায় ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় এসে অল্প সময়ে দেশ-বিদেশের ছবিতে সাফল্য পাওয়ার নজির কোনো শিল্পীর ক্ষেত্রে নেই। এই কঠিন কাজটি সাধন হয়েছে কাজের প্রতি জয়ার সিরিয়াসনেস ও দক্ষতার কারণে।