মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

মিডিয়াজুড়ে করোনা আতঙ্ক

এফডিসি এখন যেন মৃত্যুপুরী

আলাউদ্দীন মাজিদ

মিডিয়াজুড়ে করোনা আতঙ্ক

সমিতির অফিস ও চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ

খাঁ খাঁ করছে জনশূন্য এফডিসি। করোনা আতঙ্কে চলচ্চিত্রের কাজ এখানে অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। এফডিসি প্রশাসন ৩১ মার্চ পর্যন্ত এফডিসিতে শুটিং, ডাবিং, এডিটিংসহ যাবতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি এফডিসিতে অবস্থিত বিভিন্ন চলচ্চিত্র সমিতির অফিসও বন্ধ করার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সমিতির কর্মকর্তারা অফিসগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এতে চলচ্চিত্রের কোনো লোকজনের পদচারণা নেই এখন এফডিসির মাটিতে। এফডিসির গেটে পা রাখতেই দেখা গেল চারজন নিরাপত্তা প্রহরী গেট আগলে বসে আছেন। মুখে তাদের মাস্ক পরা আছে। তারা বলছেন, প্রশাসনের নির্দেশে এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া আর কাউকে এখন ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু খবর সংগ্রহের জন্য সংস্থার স্টাফদের বাইরে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা। কারণ রাস্তার পাশে সংস্থার গেটে উন্মুক্ত স্থানে তাদের বসে থাকতে হয়। রাস্তায় মানুষজন চলাফেরা করে। কার মধ্যে করোনার জীবণু রয়েছে তা তো জানা অসম্ভব। তাদের শরীরের বাতাসে যদি নিজেদের আক্রান্ত হতে হয় তাহলে কি হবে?

 

এফডিসির গেটে থাকছে নিরাপত্তা কিট

এফডিসির প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে জানা গেল সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তথ্য মন্ত্রণালয়ে গেছেন। সংস্থার পিআরও হিমাদ্রী বড়–য়া তার রুমে নেই। ফোন দিলেও রিসিভ করেননি তিনি। একজন কর্মকর্তার কাছে সার্বিক অবস্থা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, আজ থেকে এফডিসির গেটে মাস্ক, সেনিটাইজার, শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের যন্ত্র বসানো হচ্ছে। স্টাফসহ যারা এখানে প্রবেশ করবেন সবার শরীরের তাপ মাপা হবে, যদি স্বাভাবিক তাপ পাওয়া না যায় তাহলে তাকে আর সংস্থার ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আর যারা প্রবেশ করতে পারবেন অবশ্যই তাদের সেনিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার ও মাস্ক পরিয়ে প্রবেশ করানো হবে।

 

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি কম

এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ২৬২ জন। একজন কর্মকর্তা জানালেন, করোনা আতঙ্কে নিরাপত্তার কারণে এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অনেকেই ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে বাসায় থাকছেন। এ কারণে এফডিসির প্রশাসনিক ভবনে অনেক রুমই ফাঁকা দেখা গেছে।

 

জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস অনিশ্চিত

আগামী ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। করোনাভাইরাস সতর্কতার কারণে সরকার কর্তৃক জনসমাগম নিষিদ্ধ হওয়ায় এবারের চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন নাও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এফডিসির এক কর্মকর্তা। তার কথায় যদিও এখনো সরকারিভাবে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি, তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই দিবস উদযাপনের সম্ভাবনা কম। এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, তখনকার অবস্থার ওপর নির্ভর করবে বিষয়টি।

 

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নানা উদ্যোগ

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনপ্রিয় অভিনেতা জায়েদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৩১ মার্চ পর্যন্ত এফডিসিতে অবস্থিত সমিতির অফিস বন্ধ করে দিয়েছি। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সমিতির কর্মকর্তারা সেদিন শুধু এফডিসিতে গিয়ে সেখানে থাকা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে চলে আসবেন। জায়েদ খান বলেন, শিল্পী-কলাকুশলী সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি তারা যেন প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হন। যারা অসচ্ছল এবং কাজ বন্ধ থাকায় আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন সমিতির পক্ষ থেকে তাদের বাসায় খাবার-দাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু পৌঁছে দেওয়া হবে। জায়েদ বলেন, করোনার কারণে কর্মহীন অসহায় শিল্পী-কলাকুশলীদের জন্য একটি তহবিল গঠনে শিগগিরই সমিতির পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছি। তাছাড়া বাড়িওয়ালাদের কাছে অনুরোধ করব যারা সমস্যায় আছেন তাদের ভাড়া মওকুফ করে দিয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ আমার ছবি ‘টেনশন’-এর শুটিং ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। নির্মাতাকে অনুরোধ করেছি পরিস্থিতি অনুকূল না হলে তিনি যেন শুটিং পিছিয়ে দেন।

 

স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি : শাওন

আমি হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি, স্বেচ্ছায়। করোনাভাইরাসের কোনোরকম সংক্রমণ এখনো পর্যন্ত আমার শরীরে হয়নি। কয়েকদিন আগে যেহেতু বিদেশ ভ্রমণ করে ফিরেছি তাই আমি আমার নিজের, সন্তানদের, পরিবারের অন্য সদস্যদের এবং দেশের মানুষের সুস্থতার কথা চিন্তা করে নিজের বাসায়ই আমি আলাদা থাকছি। বিশ্বে এত মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও সবাই কিন্তু প্রাণ হারাচ্ছেন না। এদের মধ্যে অনেক রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আপনি, আমি, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা কষ্টকর কিছু নয়। আমরা ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নেব। বিশেষ করে হাঁচি-কাশি দেওয়ার পর, রান্নার আগে এবং রান্নার পর, খাবার আগে, ওয়াশরুম ব্যবহার করার পর, রোগীকে সেবা করার পর, কারও বাড়িতে যদি গৃহপালিত পশুপাখি থাকে সেই পশুপাখি স্পর্শ করার পর অধিক ক্ষারযুক্ত সাবান এবং পানি দিয়ে কিংবা অ্যালকোহলযুক্ত তরল দিয়ে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড ভালোমতো হাত পরিষ্কার করতে হবে। হাত দিয়ে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করা একদম ঠিক নয়। কোনো কারণে যদি ভাইরাস হাতে থাকে তা যেন কোনোভাবেই শরীরে প্রবেশ করতে না পারে। হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করতে হবে। যদি রুমাল বা টিস্যু হাতের কাছে না থাকে তাহলে কনুই দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে। ব্যবহার করার পর টিস্যুপেপার ঢাকনাযুক্ত কোনো বিনে সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দেবেন। রুমাল যদি পুনরায় ব্যবহার করতে চান তাহলে রুমাল ভালোভাবে পরিষ্কার করে তারপর ব্যবহার করতে পারেন। যে কোনো অনুষ্ঠান, সামাজিক মেলামেশা, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।

 

বলিউড তারকাদের হাততালি

ঘড়ির কাঁটা বিকাল ৫টার ঘর স্পর্শ করতেই মুম্বাইজুড়ে শুরু হলো হাততালি! বলিউড তারকারা নিজেদের বাড়ির বারান্দায় এসে হাততালি দিতে শুরু করেন। কেউ ঘণ্টা বাজিয়েছেন। অনেকে বাসন কিংবা পাতিলে চামচ দিয়ে আওয়াজ তুলেছেন। ভারতে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়তে যেসব চিকিৎসক, নার্স, হাসপাতালকর্মী অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি এভাবেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন হিন্দি ছবির নক্ষত্ররা। তাদের মধ্যে রয়েছেন, অমিতাভ বচ্চন, তার  ছেলে অভিষেক বচ্চন, পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন, অক্ষয় কুমার, হৃত্বিক রোশন, করণ সিং গ্রোভার, নেহা ধুপিয়া, অনিল কাপুর, বরুণ ধাওয়ান, কার্তিক আরিয়ান, আয়ুষ্মান খুরানা, ভিকি কৌশল, ঈশান খাত্তার, ববি দেওল, রণদীপ হুদা, বিবেক ওবেরয়, আর মাধবন, পুলকিত সম্রাট, রণবীর শোরে, শক্তি কাপুর, অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত, ক্যাটরিনা কাইফ, সোনম কাপুর, সোনাক্ষী সিনহা, শ্রদ্ধা কাপুর, জানভি কাপুর, কৃতী স্যানন, ভূমি পেডনেকরসহ আরও অনেকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর