বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

দুশ্চিন্তা আর করোনাতঙ্কে ঘুমাতে পারি না : ববিতা

দুশ্চিন্তা আর করোনাতঙ্কে ঘুমাতে পারি না : ববিতা

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতার সময় কাটছে বিষণ্নতায়। করোনাভাইরাসের ছোবলে বিশ্ব বিপর্যস্ত। মানুষ কীভাবে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে? সৃষ্টিকর্তার কাছে সবার সুস্থতার প্রার্থনা জানিয়ে ববিতার বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

কেমন আছেন?

মোটেও ভালো নেই। সবার মতো আমারও মনের অবস্থা খুবই খারাপ। মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত, অচল। দুর্ভোগের শেষ নেই। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন দ্রুত এ অবস্থা থেকে বিশ্বকে মুক্তি দেন। আমরা সবাই সবার জন্য দোয়া করব। পাশে দাঁড়াব। এ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছি না।

 

করোনা থেকে বাঁচতে সর্বপ্রথম কী করা উচিত বলে মনে করেন?

সচেতনতার বিকল্প নেই। সচেতনতাই এই মহামারীর হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করতে পারে। তাই সবার প্রতি অনুরোধ সচেতন হন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।

 

মানুষ কি আসলেই সচেতন হচ্ছে?

মানুষ এখনো শতভাগ সচেতন হতে পারছে বলে মনে হয় না। টিভি খুললেই দেখি বাজার, রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সব জায়গায় এমনকি লকডাউন এলাকাতেও মানুষ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষ মাস্কও পরছে না, শারীরিক দূরত্বও মানছে না। এভাবে চলতে থাকলে বিপর্যয় কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে তা বুঝতে পারছি না। বড়ই আতঙ্কে আছি।

 

সচেতনতা বৃদ্ধির নির্দেশনায় কারও কোনো ঘাটতি আছে?

আমার তো মনে হয় না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে নিজে সবাইকে সচেতন করছেন, মানুষের কল্যাণে যেভাবে প্রতি মুহূর্তে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাঁর নির্দেশে চিকিৎসকরা সবাইকে নিরন্তর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলছেন, এরপরও যদি মানুষ সচেতন না হয় তাহলে কাউকে তো আর দায়ী করা যাবে না।

 

মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আপনার পরামর্শ কী?

আমার পরামর্শ হলো, সবাইকে বলব আপনারা মনে করবেন না সরকার জোর করে আপনাদের ঘরে থাকতে বলছে, আপনাদের মঙ্গলের জন্যই এই অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

অসতর্কতার কারণে নিজেই শুধু নিজের বিপদ ডেকে আনছেন না, পরিবার, প্রতিবেশী সবাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। প্লিজ এমনটা করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবেন না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচান।

 

আপনার একমাত্র ছেলে অনিকসহ আত্মীয়দের মধ্যে অনেকেই বিদেশে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কী?

হ্যাঁ, আমার একমাত্র ছেলে আদরের ধন অনিক কানাডায়, বড় বোন সুচন্দা আর দুই ভাই আমেরিকায়, আরেক ভাই অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। কিন্তু যোগাযোগ থাকলেও তাদের জন্য দুশ্চিন্তা আর আতঙ্ক কোনোভা্েবই কাটছে না। প্রতি মুহূর্তে ভয়ে অস্থির থাকি, ওরাও আমাদের জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আছে।

আমি এখানে বলতে গেলে একা, তেমন কেউ কাছে নেই। রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারি না, অনিকসহ সবার জন্য চিন্তায় খুব

বিষণ্ন হয়ে আছি। এখন চাইলেই আমি বা ওরা একে অপরের কাছে ছুটে আসতে পারছি না। কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কার ভাগ্যে কী লেখা আছে এসব ভেবে অস্থির হয়ে উঠছি।

 

গৃহবন্দী সময় কাটছে কীভাবে?

নামাজ, দোয়া, নিয়মিত ব্যায়াম আর ঘরের সব কাজ করছি, আমার পাখি আর ফুল বাগান আছে ওদের পরিচর্যা করে সময় পার করছি, টিভি দেখছি, বই পড়ছি আর ফোনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, সবার খোঁজখবর রাখছি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি। এক কথায় চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।

 

চলচ্চিত্র শিল্পের অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকবে মনে হচ্ছে?

শুধু চলচ্চিত্র কেন, দেশের প্রতিটি সেক্টর এই পরিস্থিতিতে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এই ক্ষতি কীভাবে কাটবে, কত দিন লাগবে কেউ জানে না। চলচ্চিত্রের অসচ্ছল মানুষসহ দিনমজুর, গার্মেন্ট শ্রমিক থেকে শুরু করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মানুষের জীবন এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে। এই ক্ষতি সহসা পূরণ হওয়ার নয়। বিত্তশালীদের কাছে প্রত্যাশাÑঅসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান।

 

সব শ্রেণির মানুষের প্রতি আপনার কী পরামর্শ?

আবারও বলব, সবাই সচেতন থাকুন, নিজে ভালো থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। আর যারা এই মহামারীর ছোবলে প্রাণ হারিয়েছে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, চিকিৎসক, নার্স, গণমাধ্যমকর্মীসহ সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও মানুষÑ যারা এই দুর্যোগে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা ও দোয়া। সচেতন থেকে আমরা সবাই অচিরেই একটি করোনামুক্ত বিশ্ব দেখতে চাই।

সর্বশেষ খবর