বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

গায়ক থেকে বিজ্ঞাপনেও জনপ্রিয়

গায়ক থেকে বিজ্ঞাপনেও জনপ্রিয়

গানের বাইরে এ দেশের কণ্ঠতারকাদের কখনো কখনো দেখা গেছে বিজ্ঞাপনচিত্রে। নব্বই দশক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত অসংখ্য বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে যুক্ত হয়েছেন জনপ্রিয় এসব শিল্পী।  সেসব হয়েছে দারুণ জনপ্রিয়! কিছু বিজ্ঞাপনের মডেল-কণ্ঠতারকা নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

জেমস 

‘একটা পেপসি? পয়সা আছে তো! একটা ফাটাফাটি গান শুনিয়ে দেই?’ নিশ্চয়ই স্মৃতিময় এই বিজ্ঞাপনের কথা সবার মনে আছে! একজন বয়স্ক কাঠখোট্টা মুদির  দোকানদারের কাছে নগরবাউল জেমসের পেপসি চাওয়াটা ছিল অন্যরকম আবেগের। পয়সা দিতে না পারায় জেমস পরবর্তীতে ফাটাফাটি গান শুনিয়ে লোক জড়ো করে  দোকানদারির ব্যবসাকে চাঙা করে দিয়েছিলেন। ফলে একটি পেপসি মিলেছিল জেমসের ভাগ্যে। ১৯৯৯ সালে নির্মিত প্রথমবারের মতো কোমল পানীয় পেপসির বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হয়েছিলেন নগরবাউল জেমস। এই বিজ্ঞাপনচিত্রটি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। দেশের বিজ্ঞাপন জগতে একটি মাস্টারপিস হয়ে এখনো সবার মনে দোলা লাগিয়ে যায় এটি। নিয়ে যায় স্মৃতির বারান্দায়। তারপর ২০১০ সালে ব্ল্যাক হর্সের একটি বিজ্ঞাপনে দেখা যায় তাঁকে। তারপর গ্লোব সফট ড্রিংসের পণ্য ‘ব্ল্যাক হর্স’-এর আরেকটি বিজ্ঞাপনে মডেল হন তিনি। বিজ্ঞাপনচিত্রে জিঙ্গেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে জেমসের জনপ্রিয় ‘পাগলা হাওয়া’ গানের অংশবিশেষ। বিজ্ঞাপনচিত্রটি নির্মাণ করেছেন গাজী শুভ্র।

 

শুভ্রদেব

নন্দিত কণ্ঠশিল্পী শুভ্রদেব। একাধারে তিনি একজন গীতিকার, সংগীত পরিচালক ও কম্পোজার। যেসব বাংলাদেশি শিল্পী এমটিভির তৈরি মিউজিক ভিডিওতে অংশগ্রহণ করেছেন, হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালাখ্যাত এই জনপ্রিয় পপগায়ক তাঁদের প্রথমদিকের একজন। এই জনপ্রিয় গায়ক একসময় ছিলেন পেপসির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। সেটি ১৯৯৪ সালের কথা! পেপসি বিশ্বের অন্যান্য জায়গার মতো সবসময়ই তাদের বিজ্ঞাপনে তারুণ্যকে উপস্থাপন করত। ঘরে এসে রাত-দুপুরে পেপসি চেয়ে বসা পাশের ফ্ল্যাটের তন্বী-তরুণীর আবদার মেটাতে গিয়ে গায়ক শুভ্রদেবের সুপারহিরো হয়ে ওঠা বিজ্ঞাপনটি এখনো হৃদয় মাতিয়ে যায়। তাঁর ডায়ালগ সে সময় ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘পেপসি আর আছে কি?’-তরুণী সামিয়ার এমন আবদার যেন শুভ্রদেব ফেলতে পারেননি। তাই তো তিনি অনুরোধের ঢেঁকি গিলে আবারও বললেন, ‘পেপসি! নিশ্চয়ই...’। আপনি যে প্রজন্মেরই হন না কেন, বিজ্ঞাপনটি না দেখাটা বোধকরি আপনার অন্যায়ই হবে! পেপসির এই গুপ্তধনসম বিজ্ঞাপনটির মাঝে সম্ভবত প্রচ- নষ্টালজিক কোনো শক্তি লুকিয়ে আছে, যার রেশ ধরে ছোটবেলায় দেখা আরও অনেক বিজ্ঞাপনচিত্র একটা একটা করে ভেসে উঠতে শুরু করবে।

 

আজম খান

গানের বাইরে পপগুরু আজম খানকে কখনো কখনো দেখা গেছে অন্য ভূমিকায়। নাটক, চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি এই কিংবদন্তি গায়ক কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ শিরোনামের একটি নাটকে কালা বাউলের চরিত্রে এবং শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘গডফাদার’ নামের একটি ছবিতে নাম ভূমিকায় খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন আজম খান। পরবর্তীতে আরও ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও তা গ্রহণ করেননি। তবে ২০০৩ সালে ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হন গুরু আজম খান। এরপর ২০০৫ ও ২০০৮ সালে বাংলালিংক এবং ২০১০ সালে কোবরা ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে তাঁকে দেখা যায়।

 

আইয়ুব বাচ্চু

ব্যান্ড লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু পপগুরু আজম খানের সঙ্গে মডেল হয়েছিলেন বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনে। এ ছাড়া তিনি টাইগার এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনেও মডেল হয়েছিলেন। দিয়েছেন অসংখ্য বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলের ভয়েজ। বাচ্চুর কণ্ঠে ‘আনে রূপের চমক, তিব্বত বিউটি কেয়ার সোপ’ জিঙ্গেলের মডেল ছিলেন চিত্রনায়িকা শাবনূর। অন্যদিকে আফজাল হোসেনের নির্মাণে, মিতা নূরের মডেলিংয়ে এবং রিপন খানের জিঙ্গেলে করা অলিম্পিক ব্যাটারির বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দিয়েছিলেন এবি।

 

কুমার বিশ্বজিৎ

চিরসবুজ সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ ক্যারিয়ারের শুরুতে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় সোর্ড ব্লেডের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলেন। গানের বাইরে মডেল হিসেবে সেটিই ছিল তাঁর প্রথম কাজ। সে বিজ্ঞাপনে তিনি তাঁর গাওয়া ‘তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে ফুল নিতে আসতে’ গানটিতে পারফরম করেছিলেন।

 

শাকিলা জাফর

তানপুরা নিয়ে সুর সাধছেন শাকিলা জাফর! লাক্সের এমন একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে দেখা যায় প্রিয় কণ্ঠতারকা শাকিলা জাফরকে। লাক্স ছাড়া গ্ল্যামারাস বিজ্ঞাপন যেন কল্পনাই করা যায় না। একে একে বাংলাদেশের গ্ল্যামার জগতের শীর্ষ সব তারকাই লাক্সের ফেনা মেখেছেন শরীরে! চম্পা, নূতন, সুবর্ণা মুস্তাফা, শামীম আরা নীপা থেকে শুরু করে শমী কায়সার, বিপাশা হায়াত, আফসানা মিমিসহ হালের অনেকেই মডেল হয়েছেন লাক্স সাবানের। বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলেন চিরলাবণ্যে ভরা কণ্ঠশিল্পী শাকিলা জাফর।

 

তাহসান খান

সংগীতশিল্পী তাহসান গান গাওয়ার পাশাপাশি এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাটক, টেলিফিল্ম ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। গায়কের পাশাপাশি তাহসানের অভিনেতা পরিচয়টিও দারুণ উজ্জ্বল। তবে গায়ক তাহসান বেশ কিছু  বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। তাহসান-মিথিলা জুটির আদরে মাখা জুঁইর বিজ্ঞাপনটি একসময় ব্যাপক সাড়া ফেলে। দুজনের খুনসুটি-ভালোবাসা বন্দী হয় বিজ্ঞাপনচিত্রে।  সামাজিক সচেতনতামূলক কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও মডেল হয়েছেন গায়ক-অভিনেতা তাহসান খান। ইমামি গ্রুপের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিজ্ঞাপনেও তাঁকে দেখা গেছে, যেটি নির্মাণ করেছেন অমিতাভ রেজা।

 

রুমি

ক্লোজআপ ওয়ান তারকা রুমি। তাঁর বেশ কিছু জনপ্রিয় গান রয়েছে এখনো ভক্তদের প্লেলিস্টে। একসময় নুসরাত ইমরোজ তিশার সঙ্গে জুটি গড়ে করা সিটিসেলের ‘পালাবি কোথায়’ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিলেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্মাণে এই বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার পাশাপাশি জিঙ্গেলে কণ্ঠও দিয়েছিলেন রুমি।

সেই বিজ্ঞাপনে রুমির ‘দূরে, বহুদূরে, নেটওয়ার্কের বাইরে’ সংলাপের মতো তিশাকে পালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর তেমন করে রঙিন জগতে আর দেখা যায়নি। মাঝে প্রিন্স মাহমুদের গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি।  তবে এই গায়ক হারিয়েই গেছেন বলা চলে।

সর্বশেষ খবর