গতকাল অফিসে প্রতিদিনের মতো কাজ করছিলাম। মোবাইলটা বেজে উঠল। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার কাজী হায়াতের কল। রিসিভ করতেই চাপাকান্না কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘বাবা আমার সেই পাগলী আর নেই, ও আত্মহত্যা করেছে।’ এই নির্মাতার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। বোধ ফিরে আসার পর বুঝলাম কাজী হায়াতের ‘ধর’ ছবির পাগলী শেষ পর্যন্ত আত্মহননের পথই বেছে নিল। গত রবিবার রাত ১০টার দিকে মগবাজার রেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে হতাশায় ঘেরা নিজের জীবনের করুণ ইতি টানল পাগলীটি। কাজী হায়াৎ নব্বই দশকের শেষ ভাগে দেখলেন মগবাজার এলাকায় এক পাগলী অসহায়ভাবে ঘুরে বেড়ায়। কিছুদিন পর লক্ষ্য করলেন সেই পাগলীটি অন্তঃসত্ত্বা। একসময় তার কোলজুড়ে এলো সন্তান। কে এই সন্তানের বাবা। কেউ জানে না। জীবনধর্মী চলচ্চিত্রের কারিগর কাজী হায়াতের মনে বিষয়টি গভীরভাবে রেখাপাত করল। সে ঘটনা নিয়ে ১৯৯৯ সালে নির্মাণ করলেন ছবি ‘ধর’। ছবিটি দেখে দর্শক অশ্রুসিক্ত হলো। সেই পাগলীকে মগবাজার এলাকাতেই সবসময় উদাসভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রতিদিনের শোবিজ বিভাগে ‘কাজী হায়াতের সেই পাগলী এখন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে সব শ্রেণির মানুষের মনে ঘটনাটি ফের রেখাপাত করে। কাজী হায়াৎ আক্ষেপ করে বলেন, ‘সমাজে অনেক দায়িত্ববান মানুষ আছেন, যারা জনগণের দ্বারাই ক্ষমতার চেয়ারে বসেন, তাদের এমন শিকড়হীন মানুষের প্রতি কখনো দায়িত্ব পালন করতে দেখি না। আমি আমার অবজারভেশন ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে ছবিটি নির্মাণ করেছিলাম। ভেবেছিলাম ছবিটি দেখে সমাজের বিবেক জাগ্রত হবে। ছবিটি মুক্তির পর ব্যাপক সাড়া মিললেও দুঃখের বিষয় দীর্ঘ ২১ বছর পরও সেই পাগলী বা তার সন্তানের দায়িত্ব কেউ নেয়নি। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি, জীবনমান এখনো দুঃখ-কষ্টের বৃত্তবন্দী হয়ে আছে। শুধু এ দুজনই নয়, দেশে হাজারও এমন শিকড়হীন মানুষ রয়েছে, যাদের প্রতি সমাজপতিদের নজর নেই বলে দেশে অবক্ষয় বেড়েই চলছে।’