সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যখন বিদেশি সিনেমায়

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যখন বিদেশি সিনেমায়

মুক্তিযুদ্ধের গল্প দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ভাবনার বিষয় হয়ে উঠেছে বিদেশি নির্মাতাদেরও। বিশেষ করে ভারতীয় সিনেমায় আমরা দেখি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ কিছু কাজ।  তেমনই কিছু সিনেমা নিয়ে সাজানো হলো এ বিশেষ প্রতিবেদন। লিখেছেন - আলী আফতাব

 

যুদ্ধশিশু-চিলড্রেন অব ওয়ার

সুচিত্রা সেনের নাতনি রাইমা সেন অভিনীত এ সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১৪ সালে। এটি পরিচালনা করেছেন মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত এটি বলিউডের প্রথম কোনো সিনেমা। শুরুর দিকে এ সিনেমার নাম ‘দ্য বাস্টার্ড চাইল্ড’ রাখা হয়েছিলে। তবে সেন্সর বোর্ডে ‘বাস্টার্ড’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি ওঠায় পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে ‘যুদ্ধশিশু -চিলড্রেন অব ওয়ার’ রাখা হয়।

২৫ মার্চের গণহত্যা থেকে শুরু করে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নারী নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সিনেমায়।

 

মুক্তি-বার্থ অব আ নেশন

এটি একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। মনু চোবে পরিচালিত ২২ মিনিটের এ চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে কীভাবে ভারতীয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকবের কারণে পাল্টে গিয়েছিল যুদ্ধের গতিপ্রবাহ। ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মুক্তি’ সিনেমাটিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে খুব চমৎকার করে উপস্থাপন করা হয়েছে। মিলিন্দ সোমান, যশপাল শর্মা অভিনীত এ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটিকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম তথ্যসমৃদ্ধ একটি বিদেশি নির্মাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 

১৬ ডিসেম্বর

২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি বলিউড অ্যাকশন স্পাই থ্রিলার। এটি পরিচালনা করেন মনি শঙ্কর। এতে অভিনয় করেন ড্যানি ডেনজংপা, গুলশান গ্রোভার, মিলিন্দ সোমান, দীপান্বিতা শর্মা, সুশান্ত সিং প্রমুখ। সেখানে দেখানো হয় ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী পরাজয়বরণ করে নেয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে। একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য পরাজয়ের অপমান ভুলতে না পেরে ‘কালাখানজার’ নামের একটি অপরাধী চক্র গড়ে তোলে। ভারতে এ দলটি গোপনে মানি লন্ডারিংসহ নানা অনৈতিক কাজ চালিয়ে যায়। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর চার সদস্যকে দেওয়া হয় ‘কালাখানজার’ ধ্বংস করে দেওয়ার মিশন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের দিনটির কথা মাথায় রেখেই এ তারিখ নির্ধারণ করে তারা।

 

১৯৭১

এ সিনেমাটি বলিউডে মুক্তি পায় ২০০৭ সালে। অমৃত সাগর পরিচালিত এ সিনেমায় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছয় ভারতীয় সৈন্যের পালিয়ে ভারতে আসার গল্প বলা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে লড়তে আসা ছয় ভারতীয় সৈনিক বন্দী হয় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। ছয় বছর কারাবন্দী থাকার পর ১৯৭৭ সালে জেল পালিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন তারা। এমনই এক চমকপ্রদ গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন মনোজ বাজপায়ী, রবি কিষান, কুমুদ মিশ্র, মানব কউল, দীপক দব্রিয়াল, পিযূষ মিশ্র প্রমুখ।

গয়নার বাক্স

বরাবরই বাংলাদেশ ও এদেশের মানুষ, শিল্প-সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে এসেছেন কলকাতার বিখ্যাত অভিনেত্রী ও পরিচালক অপর্ণা সেন। তিনি ২০১৩ সালে নির্মাণ করেন হরর কমেডি সিনেমা ‘গয়নার বাক্স’। এখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন অপর্ণা। সিনেমায় দেখা যায় ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পূর্ববাংলা ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমানো হিন্দু বিধবা নারী রশোমনির গচ্ছিত গহনা মৃত্যুর পর পায় তার ভাইয়ের ছেলের বউ সোমালতা। তার কাছ থেকে সেগুলো পায় তার মেয়ে চৈতালী। আধুনিক যুগের মেয়ে চৈতালী যখন বড় হয় তখনই পূর্ববঙ্গে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। ২৫ মার্চের নির্মম গণহত্যার পর পূর্ববঙ্গ থেকে ভারতে পালিয়ে আসে অসংখ্য শরণার্থী। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে শুরু হয় মুক্তিবাহিনী গঠন। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে চৈতালী তার সমস্ত গহনা দান করে দেন মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করতে। এ সিনেমায় ভূত রশোমনি ও সোমালতা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতেন অভিনেত্রী মৌসুমী চ্যাটার্জি ও কঙ্কনা সেন শর্মা।

গুণ্ডা

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, রণবীর সিং, অর্জুন কাপুর, ইরফান খান অভিনীত এ সিনেমাটি মুক্তিযুদ্ধের ভুল তথ্য উপস্থাপন করে বেশ বিতর্কের জন্ম দেয়। ২০১৪ সালে নির্মিত এ সিনেমায় দেখানো হয় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পূর্ববাংলা থেকে ভারতে পালিয়ে আসা দুই এতিম শিশু বিক্রম ও বালার গুন্ডা হয়ে ওঠার গল্প। এখানে ‘ভারত-পাকিস্তানের তৃতীয় যুদ্ধের ফসল বাংলাদেশ’- এমন সংলাপ থাকায় এ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে বাংলাদেশে। কূটনৈতিক মহলেও এ নিয়ে বেশ উত্তেজনা দেখা যায়। নানা প্রতিবাদের মুখে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয় ছবিটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘যশরাজ ফিল্মস’।

দ্য গাজী অ্যাটাক

এ সিনেমাটি ২০১৭ সালে মুক্তি পায়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত ও পাকিস্তান বাহিনীর নৌ-যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘দ্য গাজী অ্যাটাক’। করণ জোহরের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধর্ম প্রডাকশনের ব্যানারে নির্মিত এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন রানা দগ্গুবতী, অতুল কুলকার্নি, তাপসী পান্নু, কে কে মেনন প্রমুখ। বিজয় নিশ্চিত হওয়ার অল্প কিছু দিন আগে ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যায় পাকিস্তানি সাবমেরিন পিএনএস গাজী। এ নিয়ে ছবির গল্প।

খেল খেল ম্যায়

তৎকালীন পাকিস্তানি নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানে চালানো নৃশংসতা লুকাতে যে মিথ্যার বেসাতি রচনা করেছিল, তা উন্মোচন করতে চায় দেশটির নতুন প্রজন্ম। প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে ‘ইতিবাচকভাবে’ তুলে ধরা হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে।  এই বছরের ১৯ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছে ছবিটি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরের ইতিহাসে অন্যরকম একটি ছবি পাকিস্তানে মুক্তি পেল। এ ছবির প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন সজল আলি ও বিলাল আব্বাস খান।  তারা দুজনই পাকিস্তানের জনপ্রিয় তারকা।

সর্বশেষ খবর