শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

হলিউডে দাপুটে বডি বিল্ডাররা

হলিউডে দাপুটে বডি বিল্ডাররা

সিলভেস্টার স্ট্যালন

হলিউডি সিনেমায় দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পেলেও এমন অনেক তারকা রয়েছেন, যাঁদের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল রেসলার হিসেবে। অভিনয়ের বাইরেও যাঁরা আকর্ষণীয় শারীরিক কাঠামো দিয়ে ভক্তদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার থেকে শুরু ডোয়াইন জনসন- এরা সবাই হলিউডে প্রবেশই করেছেন তারকাখ্যাতি নিয়ে।  তাঁদের নিয়ে আজকের আয়োজন সাজিয়েছেন- পান্থ আফজাল

 

ডোয়াইনদ্য রক জনসন

জনপ্রিয় অভিনেতা ডোয়াইন জনসন। আগেও প্রো-রেসলার হিসেবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন তিনি। ‘দ্য রক’ নামে দীর্ঘদিন ডব্লিউডব্লিউই দাপিয়ে বেড়ানোর পর সিনেমায় নাম লেখান জনসন। ডোয়াইন রুপালি পর্দায় অভিষেক ইউনিভার্সাল পিকচার্সের দ্য মামি রিটার্নস সিনেমার মাধ্যমে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি তাঁকে নিয়ে বানায় দ্য স্করপিয়ন কিং। এর প্রায় এক দশক পর একই প্রতিষ্ঠানের ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ফ্রাঞ্চাইজের কিস্তিতে অভিনয় করে ফের দর্শকের মন জিতে নেন দ্য রক। বর্তমানে হলিউডের সবচেয়ে দামি এই অভিনেতা অভিনয় করেছেন মোয়ানা, জার্নি টু, জুমানজি, স্কাইস্ক্রিপার, র‌্যামপেজ, হারকিউলিস, সান অ্যানড্রেস, দ্য টুথ ফেয়ারি, দ্য গেম প্ল্যানের মতো সিনেমাগুলোতেও।

 

জন সিনা

পুরো নাম জন ফিলিক্স অ্যান্টনি সিনা। ১৬ বারের ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়ন জন সিনা একাধারে রেসলার, অভিনেতা ও র‌্যাপার। ‘মাই টাইম ইজ নাউ’ থিম সংয়ের সঙ্গে রিংয়ে ওঠেন তিনি। এই গানে তিনি নিজেই কণ্ঠ দিয়েছেন। এ ছাড়া সিনা অনেক জনসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। মেইক-আ-উইশ ফাউন্ডেশনের সঙ্গেও কাজ করেন তিনি। তিনি বেশ কিছু ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সুইসাইড স্কোয়াড, প্লেয়িং উইথ ফায়ার, দ্য মেরিন, টুয়েলভ রাউন্ড, দ্য রিইউনিয়ন, ড্যাডিস হোম, দ্য ওয়াল, বামবেল বি, ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস, স্কুবিডু। পিসমেকার নামক টিভি সিরিজ নিয়ে হাজির হয়েছেন।

 

হাল্ক হোগান

পেশাদার রেসলিং জগতের প্রথম সুপারস্টার হাল্ক হোগান। আসল নাম টেরি ইউজিন বোলে। হোগানের পেশাদার রেসলিং ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৭৭ সালে। ১৯৮৩ সালে ডব্লিউডব্লিউএফে নাম লেখানোর পর বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। টানা দুবার (১৯৯০ ও ১৯৯১) ‘রয়্যাল রাম্বল’ ম্যাচ জেতা প্রথম রেসলার হাল্ক হোগান। হাল্ক হোগান ছয়বারের ডব্লিউডব্লিউএফ চ্যাম্পিয়ন এবং ছয়বারের ডব্লিউসিডব্লিউ হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন। ২০০৫ সালে তিনি ডব্লিউডব্লিউই হল অব ফেমে জায়গা করে নেন। রেসলিংয়ের পাশাপাশি হোগান অভিনয়ও করেছেন। ১৯৮২ সালে রকি তিন ছবিতে খলচরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় তাঁর। নো হোল্ডস বারড, মি. ন্যানি-সহ বেশ কিছু ছবিতে দেখা গেছে তাঁকে। এ ছাড়া হোগান নোজ বেস্ট, থান্ডার ইন প্যারাডাইজসহ কিছু টেলিভিশন শোতেও কাজ করেছেন হোগান।

 

স্টিভ অস্টিন

আসল নাম স্টিভেন জেমস অ্যান্ডারসন। সবচেয়ে জনপ্রিয় রেসলারদের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবে তাঁর নাম। ১৯৯০-এর দশকে অ্যান্টিহিরো হিসেবে বিপুল জনপ্রিয় হন। অ্যাটিচিউড এরার পোস্টার বয়ও হন তিনি। প্রতিপক্ষ রেসলারের কথার মাঝখানে ‘হোয়াট’ বলে বাধা দেওয়ার প্রচলন শুরু করেন স্টিভ অস্টিন। এই শব্দটি দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অস্টিন ১৯টি চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। ২০০৯ সালে তিনি ডব্লিউডব্লিউই হল অব ফেমে জায়গা করে নেন। এ ছাড়া বেশ কিছু ছবিতেও অভিনয় করেছেন স্টিভ অস্টিন।

 

বাতিস্তা

জনপ্রিয় রেসলার, অভিনেতা, মিক্সড মার্শাল আর্টিস্ট এবং বডিবিল্ডার বাতিস্তা। ২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রিংয়ের জনপ্রিয় মুখ ছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারে চারবার ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ ও দুবার ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। ২০০৫-এর ‘রয়্যাল রাম্বল’ জিতে রেসলম্যানিয়া ২১-এর মূল ইভেন্ট করেন তিনি। ২০০৬ সালে বাতিস্তা অভিনয় শুরু করেন। দ্য ম্যান উইথ দ্য আয়রন ফিস্ট, জেমস বন্ড সিরিজের স্পেক্টার, ব্লেড রানার ২০৪৯সহ বেশ কিছু ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে বাতিস্তা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের ড্র্যাক্স চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি, গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম ২ এবং অ্যাভেঞ্জার্স : ইনফিনিটি ওয়ার ছবিতে তিনি এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

 

আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার

আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার

অস্ট্রিয়ান-আমেরিকান বডিবিল্ডার, অভিনেতা, মডেল, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার। শোয়ার্জনেগার ১৫ বছর বয়স থেকে ভারোত্তোলন শুরু করেন। তিনি ২০ বছর বয়সে মিস্টার ইউনিভার্স হন। এ ছাড়া তিনি সাতবার মিস্টার অলিম্পিয়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।  শোয়ার্জনেগার হলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। দ্য টারমিনেটর, কোনান দ্য বার্বারিয়ান, প্রিডেটর তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্র।

শোয়ার্জনেগার রিপাবলিকান পার্টির একজন পদপ্রার্থী হিসেবে দুই-দুইবার ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচিত হন।

 

সিলভেস্টার স্ট্যালোন

সিলভেস্টার এনজিও স্ট্যালোন। রেসলিংয়ে নাম না লেখালেও তাঁর বডি দেখে ভক্তদের বোঝার উপায় নেই তিনি রেসলার ছিলেন না। স্ট্যালোনের সিনেমায় অভিষেক হয় সত্তর দশকের গোড়ায়। তিনি তখন খুব ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করতেন। ১৯৬৯ সালে ‘ডাউনহিল রেসার’ নামের একটি সিনেমায় তিনি একজন রেস্টুরেন্ট কাস্টমারের চরিত্রে অভিনয় করেন। সেটিই ছিল স্ট্যালোনের প্রথম সিনেমায় অভিনয়। স্ট্যালোন প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্র পান একটি সফটকোর পর্ন সিনেমায়। এর নাম ছিল ‘দ্য পার্টি অ্যাট কিটি অ্যান্ড স্টুডস’। আন্তর্জাতিকভাবে স্ট্যালোন পরিচিতি পান ১৯৭৬ সালে ‘রকি’ সিনেমা দিয়ে। এই সিনেমা তাঁকে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলে। এই সিনেমার জন্য তিনি অস্কারে দুটি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পান। একটি সেরা অভিনেতা, অন্যটি সেরা অরজিনাল স্ক্রিনপ্লের জন্য। সিলভেস্টার স্ট্যালোন অভিনীত সবচেয়ে সফল দুটি ফ্রাঞ্চাইজি রকি ও র‌্যাম্বো। সবকটি সিনেমাই হয়েছে দর্শকনন্দিত ও ব্যবসাসফল। যা স্ট্যালোনের ক্যারিয়ারকে করেছে সমৃদ্ধ। এ পর্যন্ত সিলভেস্টার স্ট্যালোন অন্তত ৭১টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে ‘রকি’ ও ‘র‌্যাম্বো’ সিরিজ ছাড়া রয়েছে- ‘এফআইএসটি’, ‘নাইটহকস’, ‘এসকেপ টু ভিক্টোরি’, ‘স্ট্যায়িং অ্যালাইভ’, ‘কোবরা’, ডেমোলিশন’, ‘দ্য স্পেশালিস্ট’, ‘জাজ ড্রেড’, ‘ডেলাইট’, ‘মেন ইন ব্ল্যাক’ ইত্যাদি।

 

আন্দ্রে দ্য জায়ান্ট

‘কোনান দ্য ডেস্ট্রয়ার’, ‘মিকি প্লাস মড’ এবং ‘দ্য প্রিন্সেস ব্রাইড’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া অভিনেতা ‘দ্য জায়ান্ট’ নামে পরিচিত আন্দ্রে ছিলেন একজন পেশাদার রেসলার। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আন্দ্রে, যার সঙ্গেই সমাপ্ত হয়ে যায় সম্ভাবনাময় এই অভিনেতার ক্যারিয়ার।

সর্বশেষ খবর