সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার : ডলি জহুর

ভালোবাসার জন্য অভিনয় করি

ভালোবাসার জন্য অভিনয় করি

গুণী অভিনেত্রী ডলি জহুর। চার যুগেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করে রেখেছেন। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে তিনি অনবদ্য। গতকাল ছিল এই অভিনেত্রীর জন্মদিন।  তাঁর সঙ্গে সমসাময়িক বিষয়ে কথা বলেছেন - পান্থ আফজাল

 

কেমন আছেন? বিশেষ দিনটি কেমন কাটালেন?

আলহামদুলিল্লাহ! ভালো আছি। জন্মদিন? বুড়ো বয়সে আবার কীসের জন্মদিন পালন! জন্মদিন তো পালন করি না। দেখতে দেখতে বয়স গিয়ে দাঁড়াল ৬৯। মুসলমান হিসেবে এই বয়সে জন্মদিন পালন তো ঠিক না। কোরআন-হাদিস জন্মদিন পালন করাকে সমর্থন করে না। তবে বাচ্চাদের জন্য ঠিক আছে। ওরা নিষ্পাপ। আমরা করলে তো সেটা অস্বাভাবিক হবে। তাই না? তবে এদিন ঘরে বসে টেলিভিশনে সবাই মিলে গিয়াস উদ্দীন সেলিমের ‘পাপ-পুণ্য’ দেখেছি। অনেক ভালো লেগেছে সিনেমাটি, সবার অভিনয়। সবাই তো আমাদেরই ছেলে-মেয়ে।

 

অস্ট্রেলিয়া থেকে জানুয়ারিতে দেশে এসেছেন। একা থাকছেন। এই একাকিত্ব কেমন লাগে?

দুই বছর পর দেশে ফিরেছি। অস্ট্রেলিয়ায় থাকে আমার একমাত্র ছেলে রিয়াসাত। তার দুই মেয়ে-ছেলে রইসা ও রাইয়ানের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটিয়েছি। এরপর দেশে ফিরে রোজার ঈদ কেটেছে অসুস্থতার মধ্যে। আসলে একা থাকতে কার ভালো লাগে? তারপরও যদি অসুস্থ থাকি, খুব বিরক্ত হই। তিন দিন না খেয়ে থাকতে পারি, কিন্তু আর অসুস্থ হতে চাই না। গতকাল আবার আমার নাতি দুই বছরে পড়ল।

 

চার যুগেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন...

ছোট থাকতেই অভিনয় করি। অভিনয়টা এখন জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে। এই জগতের সবাই আমার পরিবারের মতো। অনেকবার মিডিয়া ছাড়তে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি। ছাড়া যায় না। তাই এখনো করছি অভিনয়। এখানে আছি বলেই সবাই আমাকে চিনে। দেশের রিকশাওয়ালাও আমাকে ডলি জহুর নামে চিনে, ডাকে। আমি খুবই প্রাউড ফিল করি।  আমি দেশের বাইরে স্যাটেল হতে চাইলে অনেক আগেই হতে পারতাম। কিন্তু কখনো চাইনি। শুধু অভিনয়ের জন্য নয়: সবার ভালোবাসার জন্য অভিনয় করি। এখানে সবার সঙ্গে দেখা হয়। অনেক আনন্দ লাগে। পরিচিত মুখদের ভোলা যায় না। আমি আসলে সবার মায়ায় কাজ করি। যদিও আমি বেড়াতে খুবই পছন্দ করি। তবে কোথাও গিয়ে থাকতে হবে, সেটা ভালো লাগে না। এ দেশের চেয়ে কি বড় কোনো দেশ আছে? কোথাও গেলে দেশের মানুষের মতো কি কেউ চিনবে আমাকে? কখনো না।

 

শুনেছি ফজলুর রহমান বাবু ভাইয়ের বিয়েতে গিয়েছিলেন। সেদিনের স্মৃতি একটু শেয়ার করবেন?

হুমম। আমরা একই দলের। বাবুর বাড়ি ফরিদপুরের পশ্চিম আলীপুরে। কী সুন্দর স্থানটি। পাশেই বয়ে গেছে নদী। মজার বিষয় হচ্ছে, বাবুর বিয়ের দিনই আমাদের বাংলা থিয়েটারের শো ছিল। নাটকের নাম ‘মানুষ’। মামুনুর রশীদের লেখা। সেদিন আমরা শোতে অভিনয় করলেও বাবু করতে পারেনি। আর ফরিদপুরের পাশেই আরেকটি সুন্দর জেলা রাজবাড়ীতে গিয়েছিলাম। সেখানকার তাজা মাছ খেয়েছি। মাংস তো চোখের বিষ আমার; তবে মাছ খুবই প্রিয়।

 

হুমায়ূন আহমেদের নাটক দিয়েই টিভি নাটকে অভিনয় শুরু। নীলু চরিত্রটি বিষয়ে জানতে চাই।

নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের প্রথম নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ দিয়ে টিভি নাটকে অভিনয় শুরু করি। এই নাটকের কথা কখনই ভুলতে পারব না। নীলু চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। নাটকটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল সবার মাঝে। ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকের নীলু ভাবির কথা এখনো দর্শকরা মনে রেখেছেন। টুনির কথাও বলেন। আরও অনেকের কথা বলেন। মোস্তাফিজুর রহমান নাটকটির প্রযোজক ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের লেখা নাটক ছিল। আমার অভিনয়জীবনের সঙ্গে এ নাটকটি জড়িয়ে আছে।

 

অসংখ্য নাটক-সিনেমায় মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এ ধরনের চরিত্র করতে কেমন লাগে?

মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের সময় প্রচন্ড ইমোশনাল হয়ে পড়ি। আসলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নাটক-সিনেমায় চরিত্র করতে হয়। মায়ের চরিত্রে অনেকবার অভিনয় করেছি। এখনো করছি। নাটকে বা সিনেমায় মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের কারণে অনেক শিল্পী আমাকে মা  ডাকেন। জন্ম না দিয়েও আমি মা। এটা তো আবেগের বিষয়। একই পরিবার আমরা। কতটা শান্তি পাই তা বলে বোঝাতে পারব না।

 

অভিনয় জীবনে পাওয়া ১০টি পুরস্কার বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের জাদুঘরে হস্তান্তর করেছেন। এটা কি সবার জন্য অনুকরণীয় নয়?

কে কী করবে জানি না। আমি মনে করি সঠিক কাজটি করেছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই উদ্যোগের মাধ্যমে কিছুটা হলেও আমাদের সম্পর্কে জানতে পারবে। নিজের কাছে থাকার চেয়ে সংরক্ষণের জন্য ওইখানে থাকাটাই শ্রেয়। অভিনয় জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। তবে এর মধ্য থেকে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ মোট ১০টি সম্মাননা স্মারক সশরীরে গিয়ে হস্তান্তর করেছি। এ ছাড়াও বৃদ্ধাশ্রমসহ দুস্থ কিছু শিল্পীকেও কাপড় দিয়েছি। এটা কতটা যে শান্তি দেয়, তা বলে বোঝানো যাবে না।

 

এখন আপনার শারীরিক অবস্থা কেমন?

আগের চেয়ে একটু ভালো। হালকা হাঁটতে পারি; তবে আর কোনো দিনই দৌড়ঝাঁপ করা বোধহয় সম্ভব হবে না।

 

নতুন কোনো কাজ করছেন?

কিছু কাজ করেছি। কিছু নির্মাতার সঙ্গে কথাও হয়েছে। আসলে ভালো কাজের জন্য এখনো মুখিয়ে থাকি। দিন শেষে অভিনয়টা ভালো করে করতে চাই। আর দেশের মাটিতেই যেন শেষ  আশ্রয় হয়, এটাই চাওয়া।

সর্বশেষ খবর