শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : রোজিনা

প্রেম ছাড়া কোনো কাজেই সাফল্য আসে না

প্রেম ছাড়া কোনো কাজেই সাফল্য আসে না

জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজিনা সবসময়ই প্রেমে বিশ্বাসী। তাঁর মতে যে কোনো সাফল্যের মূল হলো প্রেম। এদিকে তিনি তাঁর পরিচালিত ‘মনে রেখো’ ছবিটির সেন্সর ছাড় পেয়ে এখন মুক্তি দিতে যাচ্ছেন।  এসব নিয়ে তাঁর বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আপনার পরিচালিত ‘মনে রেখো’ সেন্সর ছাড় পেল, নির্মাতা হিসেবে নিজেকে কেমন লাগছে?

ছবিটি যদি দর্শক গ্রহণ করে তাহলে অবশ্যই ভাবব আমি নির্মাতা হিসেবেও সফল। তবে পুরোপুরি আত্মবিশ্বাস নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করেছি। ছবির গল্প, অভিনয়, পরিচালনা এর কোথাও কোনো ফাঁকফোকর রাখিনি। হান্ড্রেড পার্সেন্ট একটি সমৃদ্ধ ছবি নির্মাণের চেষ্টা করেছি। আমার কাজের রায় এবার দর্শক দেবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ছবিটি মুক্তি দেব।

 

নতুন আরেকটি ছবি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন বলে শুনেছি-

ঠিকই শুনেছেন। এখনো গল্প ও অভিনয়শিল্পী ঠিক হয়নি ছবিটির। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদ এর গল্প বিন্যাস করছেন ও চিত্রনাট্য লিখছেন। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে ছবিটির ঘোষণা আসবে।

 

আপনার ছবির গল্প কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে?

আসলে আমরা বাঙালিরা সবসময়ই পরিবারকেন্দ্রিক হয়ে থাকি। পরিবারের প্রতি এমন আন্তরিকতা আর  কোথাও দেখা যায় না। তাই পারিবারিক গল্পের ছবি নির্মাণেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকি। যাতে মানুষ আমার ছবির গল্পে জীবনের ছায়া খুঁজে পেয়ে নিজের জীবনের যোগ-বিয়োগ সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধির জায়গাটি খুঁজে পায়। জীবনের যৌতুকের অভিশাপ নিয়ে আমার চলচ্চিত্রটির গল্প আবর্তিত হয়েছে। কারণ দেশ উন্নত হয়েছে, হাতে হাতে থাকা মুঠোফোনের মাধ্যমে পৃথিবী এখন বলতে গেলে সবার হাতের মুঠোয়। তারপরও অনেকে বেক ডেটেড রয়ে গেছে। যেমন কয়েক দিন আগে পত্রিকায় খবর দেখলাম এক গ্রামে এক নববিবাহিতার পরিবার ছাগল যৌতুক দিতে না পারায় গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আমার মনে হয় এসব অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে দেশের প্রধান গণমাধ্যম চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সোচ্চার হওয়া দরকার। অন্যদিকে ‘মনে রেখো’ ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীদের ওপর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এবং রাজাকারদের নির্যাতনের চিত্র মর্মস্পর্শী রূপে তুলে ধরেছি। এ ধরনের সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সুস্থ-বিনোদনমূলক গল্পেই নির্মিত হবে আমার সব ছবি।

 

আবার অভিনয়ে নিয়মিত হবেন?

অভিনয়ে নিয়মিত হতেই চাই। এর জন্য প্রয়োজন গতানুগতিক ধারার বাইরের গল্পের ছবি হলে অবশ্যই তাতে কাজ করব। এ ছাড়া মুখ্য চরিত্র, নামি নির্মাতা হলেই আমি অভিনয় করব। আমি কাজের ক্ষেত্রে কখনই কোয়ান্টিটি নয়, কোয়ালিটিকে প্রাধান্য দিই।

 

পরকীয়া, বহুগামিতা ও মাদকাসক্তির মতো অনৈতিক দিকগুলো এখন সম্পর্ক নষ্টের মূল কারণ। যে সম্পর্কে বিশ্বাস, নির্ভরতা ও একের প্রতি অপরের সর্ব নিবেদন থাকবে সেই সুন্দর সম্পর্কের কোনো  দিন মরণ হবে না।

 

চলচ্চিত্র জগতের বর্তমান অবস্থা কেমন মনে হয়?

এখন তো মনে হচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরছে। বিশেষ করে গত দুই ঈদে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলো দেখতে দর্শক সিনেমা হলমুখী হয়েছে। এটি শুভ লক্ষণ। এই সুদিন ধরে রাখতে প্রয়োজন মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবি নির্মাণ। বর্তমান সরকার চলচ্চিত্রের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তাই প্রকৃত প্রযোজক-পরিচালকদের নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে চলচ্চিত্রের দুরবস্থা অচিরেই একেবারেই কেটে যাবে।

 

শোবিজ জগতে বিয়ের ভাঙা-গড়ার খেলা এত বেশি কেন?

দেখুন, ফেসবুকের আবিষ্কারক মার্ক জোকারবার্গের ৪০ বছরের সংসার কিছুদিন আগে ভেঙে গেছে। আসলে প্রেম বলেন আর দাম্পত্য জীবন বলেন দুই ক্ষেত্রেই বিশ্বাস ও সহনশীলতা খুবই প্রয়োজন। কোনো মানুষই সবদিক থেকে পরিপূর্ণ নয়। এই অপূর্ণতা পূরণে একে অপরকে সহযোগিতা না করে যদি শুধুই খুঁত ধরে তাহলে সেই সম্পর্কে হতাশা তো নেমে আসবেই। যে যাকে ভালোবাসবে মনে-প্রাণে তা একজনের মধ্যে যদি সীমিত থাকে, তাহলে সেই সম্পর্কে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ে ও প্রেম আজীবন টিকে থাকে। পরকীয়া, বহুগামিতা ও মাদকাসক্তির মতো অনৈতিক দিকগুলো এখন সম্পর্ক নষ্টের মূল কারণ। যে সম্পর্কে বিশ্বাস, নির্ভরতা ও একের প্রতি অপরের সর্ব নিবেদন থাকবে  সেই সুন্দর সম্পর্কের কোনো দিন মরণ হবে না। সত্যি কথা বলতে প্রেম বা সংসারে অশান্তি হলো ক্যান্সারের চেয়ে অনেক বেশি যন্ত্রণার। শোবিজ জগৎ শুধু নয়, সর্বত্রই এখন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুগামিতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের শব্দ বাড়ছে।

 

প্রেমকে আপনি কীভাবে দেখেন?

পবিত্র ও প্রকৃত প্রেম মানে স্বর্গীয় সুখ। প্রেম ছাড়া জীবন অচল, সবকিছুর সাফল্যের মূলই হলো প্রেম। প্রেম ছাড়া কোনো কাজেই সাফল্য আসতে পারে না। প্রেমের কোনো বয়স নেই এবং প্রেমকে কোনো নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধও করা যায় না। জীবনে প্রেম থাকা মানে মৃত্যু পর্যন্ত সতেজ থাকা। আর প্রেমকে টিকিয়ে রাখতে একে- অপরের প্রতি কেয়ারিং হতে হবে। বিশ্বাস কখনো ভাঙা যাবে না। সেই প্রেম হোক প্রেমিক-প্রেমিকার, স্বামী- স্ত্রীর, মা-বাবা-সন্তানের কিংবা যে কোনো সম্পর্কের। প্রেমের ক্ষেত্রে আবশ্যিক কথা হলো, কেউ কাউকে ঠকানো যাবে না।  তাহলেই ‘প্রেম হলো স্বর্গীয়’ এই কথাটির মূল্য বজায় থাকবে।

সর্বশেষ খবর