বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : আঁখি আলমগীর

লিয়াজোঁ মেনটেইন করে গাইতে চাই না

লিয়াজোঁ মেনটেইন করে গাইতে চাই না

দেশের একজন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর। সংগীতশিল্পীর বাইরেও আঁখির আরেকটি পরিচয় তিনি কিংবদন্তি অভিনেতা আলমগীর ও গীতিকার খোশনূর আলমগীরের কন্যা। দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই তারকা সারা বছরই একক গান ও স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।  তাঁর সঙ্গে সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

কেমন আছেন? মনে হচ্ছে বাসায়...

জি, ভালো আছি। আজ (গতকাল) বাসায় রয়েছি।

 

বাবার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ৫০ বছর যাত্রা নিয়ে অনুভূতি কেমন?

আমার জীবনের পুরোটাই বাবাকে দেখা অভিনেতা হিসেবে। তা জন্মের পর থেকে, বুঝ হওয়ার পর থেকেই বলা যায়। আমার বেড়ে ওঠা, মনমানসিকতা-সবকিছুই কালচারাল। তিনি মানুষ হিসেবে যেমন সফল, তেমনি বাবা হিসেবেও। মানুষের জীবন ব্যালান্সড হওয়া প্রয়োজন। সেদিক থেকে আমার আব্বু অনেকটাই ব্যালান্সড করে চলেছেন। তাঁর মধ্যে অন্যরকম ম্যাজিক আছে। তিনি সবকিছুই ম্যানেজ করতে পারেন। তাই জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত আব্বুকে সবসময়ই কাছে পেয়েছি। বছরের প্রতিটি ছুটিতে তিনি আমাদের নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কখনো লংড্রাইভে নিয়ে গেছেন, কখনো আমাকে ও মাকে নিয়ে একসঙ্গে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে গেছেন। আসলে আমি খুবই লাকি। কারণ, আমি দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা আলমগীরের মেয়ে। সৃষ্টিকর্তা আমাকে একজন সৎ, গুণী অভিনেতা, একজন অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী মানুষের ঘরে পাঠিয়েছেন। তাঁর জন্যই আজ আমি এখানে।

 

এ দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি নায়ক আলমগীরের মূল্যায়ন করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে আপনার কী অভিমত?

অভিনেতা আলমগীরের মূল্যায়ন করা যায় না। তবে মেয়ে হিসেবে আমি বলতে চাই, আব্বু সবদিক থেকেই অলরাউন্ডার। তিনি অসাধারণ একজন বাবা। অনেক প্রফেশনাল। শর্টকাট রাস্তায় তাঁকে কখনো চলতে দেখিনি। আব্বু আমাকে আমার মতো করে জীবনের পথে লড়াই করতে বলেছেন। ৫০ বছর পেরোনার পরও আমি চাই আব্বু নিয়মিত স্ক্রিনে থাকুক। একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যস্ত থাকলেও যেন কিছু চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন-এটাই চাওয়া।

 

কলকাতা গিয়েছিলেন। স্টেজ শো ছিল কি?

না, তা নয়। চেকআপ করাতে গিয়েছিলাম। এরপর দেশে ফিরেই একটি স্টেজ শোতে অংশ নিয়েছিলাম।

 

এই শোতে আপনার পারফরমেন্সে শ্রোতারা মুগ্ধ...

১৭ তারিখে বসুন্ধরা আইসিসিবিতে অনুষ্ঠিত এই শোটি করেছিলাম। আমার অন্যান্য শো যেমন হয় তেমনই। আমি সবসময় শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি। অনুষ্ঠানে আমার গানের সঙ্গে সবাই একসঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছে, নেচেছে। অর্গানাইজারও অনেক খুশি।

 

বছরের শুরু থেকেই দেশ-বিদেশে প্রচুর স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। শো নিয়ে বাইরে টানা কয় মাস ছিলেন?

ব্যস্ত থাকা আর কি! নিজেকে ব্যস্ত রাখার ব্যাপার থাকে। ব্যস্ততা আছে বলেই এখনো বেঁচে আছি। (২-৩) মাস তো বাইরে টানা শো করেছি, লন্ডনে। এখন দেশ ও দেশের বাইরে স্টেজ শো করছি পুরোদমে।

 

বাংলার গায়েন (ইউএসএ) সিজন-১ এর বিচারক ছিলেন। সিজন-টুতে কেন থাকলেন না?

দুই ইমনের (শওকত আলী ইমন ও ইমন সাহা) সঙ্গে বিচারক ছিলাম। তবে সিজন টুতে থাকতে পারিনি। একই ডেটে দেশের বাইরে অনেক শো পড়ে যায়। যদিও থাকার খুবই ইচ্ছা ছিল।

 

বাবা আলমগীরের ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রে (প্রয়াত) গাজী মাজহারুল আনোয়ার রচিত গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন। তাঁকে নিয়ে কোনো স্মৃতি রয়েছে?

গাজী আংকেলের সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। তিনি আমার জন্য গান লিখেছেন; গান দিয়েও গেছেন। তাঁর সঙ্গে সম্পর্কটা পারিবারিক। অনেক আদর করতেন। তাঁকে নিয়ে অনেক স্মৃতি রয়েছে। যেমন তাঁর লেখা অন্য একজন শিল্পীর গাওয়া একটি গান আমার খুবই পছন্দ হয়েছিল। মেল ভার্সন ছিল। আমি গানটি গাওয়ার জন্য শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে অনুমতি নিই। এরপর গাজী আংকেলের সঙ্গে দেখা করি। সে সময় উপলও ছিল। খাওয়া-দাওয়া পর্বের পর যখন আংকেলকে আমার ইচ্ছার কথা বলি, তখন তিনি বলেন, ‘তোমার পারমিশন কেন লাগবে? তুমি গাও’। গাজী আংকেল এমনই অসাধারণ ছিলেন! তাঁর হঠাৎ চলে যাওয়া, আমাদের জন্য, সংগীতাঙ্গনের জন্য বিশাল শূন্যতা, ক্ষতি। ভীষণ দুঃখ পেয়েছি।

 

‘ভাত দে’তে অভিনয়ের দীর্ঘ ৩০ বছর পর বাবার সঙ্গে আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন...

সেটি মনে হয় ‘এক কাপ চা’। তবে অভিনয় বলতে যা বোঝায়, তেমনটি করিনি। একটি দৃশ্যে গানের সঙ্গে হালকা উপস্থিতি ছিল। কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে ‘লিলুয়া বাতাস’ গানটির দৃশ্যে ফেরদৌস, মৌসুমীর সঙ্গে অনেকেই অংশ নিয়েছিলেন।

 

কিংবদন্তি রুনা লায়লার সঙ্গে কয়টি কাজ করেছেন?

রুনা আন্টির সঙ্গে এ পর্যন্ত দুটি কাজ করেছি। একটি সিনেমার গানে, অন্যটি ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের জন্য। তিনি তো বিশাল মাপের শিল্পী। তাঁর গান গাওয়ার ধরনই অন্যরকম। তাঁর মতো গাইতে যাওয়া তো দুঃসাহসের ব্যাপার। অনেক চ্যালেঞ্জিং। তাঁর কাছে শেখাটা অনেক উপভোগ্যের বিষয়।

 

নতুন কোনো সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কি?

না, করা হয়নি। নতুন সিনেমা হচ্ছে, অনেক গান হচ্ছে। তবে আমি লিয়াজোঁ মেনটেইন করে কখনো গান গাইতে চাই না। আমার সঙ্গে সেটা যায় না। আলাউদ্দিন আলী, আলম খান, সত্য সাহা, সুবলদা, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলসহ অনেক লিজেন্ডের সুরে গান করেছি। তাঁরা ফোন করে গান গাইতে আসতে বলতেন। আমার তো গান গাওয়ার জায়গার অভাব নাই! নতুনরা ভালো গায়। কিন্তু নতুন মিউজিক ডিরেক্টররা বোঝে না, কাকে দিয়ে করালে গানটি ভালো হতে পারত। তবে যদি কেউ ভালো গানের জন্য নক দেয়, সবসময় তৈরি আছি।

 

‘মখমল বাই আঁখি আলমগীর’ কেমন চলছে?

সব আমার ডিজাইন করা। এক বছর হয়েছে। রেসপন্স অনেক ভালো। অল্প সময়ে মানুষ এতটা পছন্দ করবে ভাবিনি। এর ফলে উৎসাহটা আরও বেড়ে গেছে। তবে অনেক দিন সময় দিতে পারিনি এটিতে। তাই নতুন কোনো ডিজাইন আসেনি। নতুন করে অর্ডারও নিইনি। আগের সব সোল্ডআউট।  তবে দুই সপ্তাহ পর নতুন ডিজাইন নিয়ে আসার প্ল্যান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর