রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : আহমেদ রুবেল

ব্যক্তিগত কিছু কারণেই অভিনয় করিনি

ব্যক্তিগত কিছু কারণেই অভিনয় করিনি

দেশের ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার জনপ্রিয় অভিনেতা আহমেদ রুবেল। এ আন্ডাররেটেড অভিনেতা সবার কাছে সুপরিচিত ঘোড়া মজিদ কিংবা বৃক্ষমানব নামে। অভিনয় আর ব্যক্তিত্বের পারফেকশনে জুড়ি নেই তাঁর। ছোট বা বড় পর্দায়-সবখানেই তিনি সফল!  বহুদিন পর তিনি ফিরেছেন চমক নিয়ে! তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে- পান্থ আফজাল

 

অক্টোবর জন্মদিনে অগণিত শুভাকাক্সক্ষীর শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন বিষয়টি কতখানি উপভোগ্য?

ভালো লাগে। যেসব মানুষ আমাকে চিনে, জানে বা ফলো করে তারা এ দিনে শুভেচ্ছা জানায়। তবে আমার কাছে জন্মদিনটি বিশেষ কিছুই নয়। আমিও তেমন করে পালন করি না, ভাবী না। তবে মানুষের এ ভালোবাসা সবসময় উপভোগ করি। ভালোবাসি এ ভালোবাসাকে।

 

বহুদিন পর এখন নিয়মিত অভিনয়ে অভিনয় থেকে দূরে থাকার কোনো কারণ ছিল? নাকি অভিমানে?

কোনো কারণ নেই। ভালো লাগেনি কিছুই। তবে নিজের ব্যক্তিগত কিছু কারণেই অভিনয় করিনি। অন্যদিকে বাবা-মা দীর্ঘ পাঁচ বছর অসুস্থ ছিলেন। এ ছাড়াও যেভাবে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ হচ্ছিল, সেটা আমার কাছে ভালো লাগেনি। তবে এখন থেকে মোটামুটি রেগুলার কাজ করছি।

 

অলাতচক্র চিরঞ্জীব মুজিব রিলিজ হয়েছে আর কোন সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায়? ওয়েব সিরিজ করছেন?

হাবিবুর রহমানের ‘অলাতচক্র’ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে নির্মিত নজরুল ইসলামের ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ মুক্তি পেয়েছে। এরপর করেছি শাহরিয়ার শাকিলের প্রযোজনায় ও নুরুল আলম আতিকের নির্মাণে ‘পেয়ারার সুবাস’, আশুতোষ সুজনের ‘দেশান্তর’ ও প্রসূন রহমানের ‘প্রিয় সত্যজিৎ’। আরও কয়েকটি সিনেমা করেছি। বিটিভির ধারাবাহিক ‘জিন্দাবাহার’-এ অভিনয় করেছি। সম্প্রতি একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। আর ওয়েব সিরিজ করছি দুই-তিনটা। আমি এমনিতেই কখনো প্রচুর কাজ করতাম না। খুব অল্প পরিমাণে কাজ করতাম। আগ্রহ প্রকাশ করলে তখন করেছি। 

 

আপনার দুর্দান্ত ভয়েজ! ভয়েজ ওভারের কাজ করছেন এখনো?

একসময় তো অনেক করেছি। তবে এখন করছি না।

 

দীর্ঘ ক্যারিয়ারের নানা লুকেই দেখা গেছে আপনাকে সম্প্রতি একটি মিউজিক্যাল ভিডিওতে ভয়ংকর লুকে দেখা গেল...

হুমম... আমি সব ধরনের চরিত্র করেছি। প্রোটাগনিস্ট, অ্যান্টাগনিস্ট সবকিছুই করেছি। চরিত্রকে চরিত্র হিসেবে দেখি আসলে। কিন্তু তার আগে চরিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড, হিস্ট্রিগুলো দেখি। যদিও আগে কখনো কোনো মিউজিক্যাল ফিল্মে কাজ করা হয়নি। এটিই প্রথমবার। এ মিউজিক্যাল ফিল্মটি ফজলে আজিম জুয়েলের ‘ডেমোক্র্যাট’ ব্যান্ডের। বছরদুয়েক আগে জুয়েল দেখা করে মিউজিক স্টোরি সম্পর্কে বলে। তখন ভালো লাগে। এরপর বারবার করে যখন বলে তখন ভাবী, করেই দেখি না কী হয়! এরপর তো হলোই কাজটি।

 

প্রিয় সত্যজিৎ- অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?

সত্যজিৎ রায়ের ওপর ট্রিবিউট করে প্রসূন রহমান এটি নির্মাণ করেছেন। গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে শুটিং শুরু হয়। এটির কাজ শেষ। সত্যজিৎ রায় নিঃসন্দেহে মাস্টার ফিল্ম মেকার। অনেক নির্মাতাই তাঁর মতো করে বা তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে আসেন, স্বপ্ন দেখেন। এ প্রসেস জেনারেশনের পর জেনারেশন চলছেই। সব জেনারেশনের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের সম্মিলন। তেমনই একজন নির্মাতার চরিত্রে অভিনয় করছি। চরিত্রটি পছন্দ হয়েছে। প্রসূনও ভালো নির্মাতা। প্রায় দেড় ঘণ্টার সিনেমা এটি। সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন উপলক্ষে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে সিনেমাটি।

 

বাংলাদেশের প্রথম ফেলুদা...

হ্যাঁ, তৌকীর আহমদের পরিচালনায় ওয়েব সিরিজ ‘নয়ন রহস্য’তে ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। ফেলুদা হিসেবে প্রথমে আমাকে পছন্দ করেন প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল, এরপর তৌকীর ভাই।

 

চিরঞ্জীব মুজিব- বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করতে কতখানি চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছিল?

বঙ্গবন্ধু চরিত্রে অভিনয় করা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। তাঁর ডাইমেনশন, বহুমুখিতা, ইমোশন, কর্ম, কণ্ঠ ধারণ করা খুবই ডিফিকাল্ট। বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতা, যিনি আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গেছেন, অবশ্যই অনেক ইমোশনাল একটি চরিত্র। আমার জন্য গৌরবের ও আনন্দের এ চরিত্রটি করা। অনেক বড় একটা ‘ইমোশনাল অ্যাচিভমেন্ট’। মূলত বঙ্গবন্ধুর জীবনের ৪৬-৫২-এর সময়ই এটিতে উঠে এসেছে। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ভালোভাবে করার।

 

হুমায়ূন আহমেদের নাটক-সিনেমায় প্রচুর কাজ করেছেন তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাই

হুমায়ূন স্যারের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা এক কথায় শেয়ার করা যাবে না। তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা অনেক গভীর। তাঁকে খুবই শ্রদ্ধা করি। তিনিও আমাকে ভালোবাসতেন, স্নেহ করতেন। তিনি যে এতটা স্নেহ করতেন, অনেক সময় আমি নিজেও বুঝতাম। আমি ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদকে যতটা ভালো চিনি, রাইটার-ডিরেক্টর হুমায়ূন আহমেদকে ততটা নয়। স্যারের সান্নিধ্য আমার সবসময়ই ভালো লাগত। মিডিয়ায় কখনো বলি না স্যারের কথা, খুবই কম বলেছি। এক কথায় তাঁর সঙ্গে আমার প্রচুর প্রিয় মেমোরিজ রয়েছে। অ্যাজ এ হিউম্যান বিং হিসেবে তাঁর উপস্থিতি, কর্ম, সঙ্গ, ব্যক্তিত্ব- সবই ভালো লাগে আমার। 

 

সিনেমার সুদিনে আপনার কাজগুলো কি ভালো রেসপন্স পাবে বলে মনে হচ্ছে?

এটা বলা মুশকিল। বলা যাচ্ছে না কেমন যাবে। মুক্তি পেলে সবকিছু দেখে বলা যাবে। হ্যাঁ, সিনেমার সুসময় চলছে। হলে মানুষ যাচ্ছে। তবে সিনেমা দেখার একই রকম মেন্টালিটি থাকলে, ফ্লো থেমে না গেলে বা বাধাগ্রস্ত না হলে সিনেমার সুদিন বইবেই।

 

বর্তমান সময়ে তারকাদের ইমেজ সংকট নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

কর্মই সব কথা বলবে। যারা পপুলার হচ্ছে বা যাকে সবাই চিনে, জানে, ফলো করে, তাদের এমন কিছু করা উচিত নয় যা দৃষ্টিকটু। তারকাদের জীবনে এমন অনেক নেগেটিভ কিছু থাকবে বা তারা করবে, তবে সেটা সবার সামনে আসা উচিত নয়। তবে অনেকেই এখন না দেখে, না বুঝে অনেক খারাপ কমেন্টস করে বসে। খারাপ কিছু না করলেও বলে ফেলে নিজের মতো ভেবে। একটা কমন কথা ‘মিডিয়া জগতের সবাই খারাপ’। কিন্তু মিডিয়ার সবাই যে খারাপ সেটা তারা কীভাবে নিশ্চিত হয়েছে? সাধারণ মানুষ যে কত কিছু করে বেড়াচ্ছে, সেটা নিয়ে কেউ বলে না বা মিডিয়ায় আসে না। তবে শিল্পীদের ভালো মানুষ হতে হবে। বিনয়, উদার মনমানসিকতা, জ্ঞান দিয়ে শিল্পী নিজেই তাকে প্রকাশ করবে।

সর্বশেষ খবর