মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

কে এগিয়ে, সালমান, আমির নাকি শাহরুখ?

কয়েক দশক ধরে বলিউডে রাজত্ব করে আসছেন এই তিন খান। তাঁদের অবদান বলিউড মনে রাখবে হাজার বছর। নানাবিধ পরিবর্তনের মধ্যে যাওয়া কয়েক দশক পরও বলিউডের তিন খানের জনপ্রিয়তা কী করে বজায় রইল

কে এগিয়ে, সালমান, আমির নাকি শাহরুখ?

বলিউডের তিন খান আমির, সালমান, শাহরুখ। এই তিনজন যেন বলিউডের এক মায়ের তিন সন্তান। কোন সন্তান প্রিয়? এমন প্রশ্নে মা যেমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন, ঠিক তেমনি খানভক্তদের কাছেও এমন প্রশ্ন বিব্রতকর। এ সময়ও কার দাপট কেমন তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন - পান্থ আফজাল

  বলিপাড়ার অনেকটা অংশজুড়েই রয়েছে তিন খান। শাহরুখ, সালমান ও আমির খান। বলতে গেলে বলিউডের একচেটিয়া ব্যবসাসফল সিনেমার তারকাও তাঁরা। তিনজনের সাফল্যের শুরু কিন্তু একসঙ্গে নয়। তবে সাফল্যের কথা বললে শুরুতেই নাম আসে শাহরুখ খানের। সেই ১৯৯৩ সালে, নিজের সিনেমা জীবনের শুরু। যশ চোপড়ার ‘ডর’ সিনেমায় ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করলেও তাঁর মায়াবী চোখের চাহুনি দিয়ে তিনি জয় করে নেন কোটি ভক্তের প্রাণ। সিনেমা মুক্তির পর শাহরুখই হয়ে ওঠেন বলিউডের নতুন স্টার। এর বছর দুই পর ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ সিনেমা দিয়ে বলিউডের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা সিনেমার তকমা পান। এ ছাড়াও সিনেমাটি হিন্দি রোমান্টিক ধারার  মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বলিউড পায় তার নতুন রোমান্টিক মাস্কট শাহরুখ খান। ৯০ এবং নতুন শতকের শুরুর দিকে বলিউডের সিনেমার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠেন কিং খান। তাঁর সমসাময়িক সালমান খান, আমির খান অনেকটাই ঢাকা পড়ে যান শাহরুখ খানের দ্যুতির আড়ালে। শুধু ব্যবসায়িক সফলতাই নয়, নিজের অভিনয়ের জন্য স্বীকৃতিও পেয়েছেন বহুবার। সর্বোচ্চ ১৪ বার জিতেছেন ভারতের অস্কারখ্যাত ‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কার। অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমা প্রযোজনায়ও তিনি সফল। তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত হয়েছে ‘রা ওয়ান’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘দিলওয়ালে’-এর মতো ব্যসবাসফল ছবি। কিন্তু এ ধারা বজায় থাকেনি বেশি দিন। অন্য দুই খানের তোপের মুখে পড়েন একসময়ের তুখোড় এই তারকা। আসলে সব সময় সবার ভাগ্য একরকম থাকে না, আর সেটিই হয়েছিল শাহরুখের বেলায়ও। হঠাৎ করেই যেন তাঁর সাফল্যের মোড় ঘুরে গেল। শাহরুখ খানের সিনেমা বছরের সেরা ব্যবসাসফল সিনেমা হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শাহরুখ অভিনীত সিনেমা হলো- ফ্যান, এ্যা ডিল হে মুশকিল, ডিয়ার জিন্দেগি, রইস, টিউবলাইট, জাব হ্যারি মিট সেজল, দ্য জোয়া ফ্যাক্টর, রোকেটরি, লাল সিং চাড্ডা, ব্রহ্মাস্ত্র। ‘জিরো’ সিনেমায়ও ব্যর্থতার ছাপ দেখা গেছে শাহরুখের। আর ২০২৩ সালে মুক্তি পাবে তাঁর নতুন সিনেমা পাঠান, জোয়ান, টাইগার থ্রি ও ডানকি- যেগুলো নিয়ে আলোচনায় শাহরুখ।

তবে ২০১৩ সালে শাহরুখের ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ সিনেমা ২০৩ কোটি টাকা আয় করলেও, সেই বছর আমির খানের ‘ধুম ৩’ ২৭৫ কোটি টাকা আয় করতে সক্ষম হয়। সালমান খান এবং আমির খান যেখানে প্রত্যেক সিনেমা দিয়ে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছেন সেখানে শাহরুখ খানের সিনেমা ১০০ কোটি আয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ২০০৮ সালে ‘গাজনি’ সিনেমা দিয়ে প্রথম ১০০ কোটির মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন আমির খান। ঠিক তার পরের বছরই আবার ‘থ্রি ইডিয়টস’ দিয়ে ২০০ কোটির মাইলফলক স্পর্শ করেন আমির। ১০০ আর ২০০ কোটির মতো ৩০০ কোটির মাইলফলকও প্রথম স্পর্শ করেন মি. পারফেকশনিস্ট আমির খান। ২০১৪ সালে রাজকুমার হিরানির ‘পিকে’ সিনেমা দিয়ে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন এ তারকা। ধুম থ্রি, পিকে, দঙ্গল ব্যবসাসফল হলেও আমিরের গত কয়েক বছর ফ্লপ যাচ্ছে। তাঁর সিক্রেপ সুপারস্টার, থাগস অব হিন্দুস্থান, কোই জানে না, দিল ধাদকানো দো তেমন ব্যবসাসফল হয়নি। এরপর আমির অভিনীত ‘লাল সিং চাড্ডা’ অনেক আলোচনার জন্মও দেয়। ব্যবসাসফল না হওয়ার পর আমির প্রযোজককে টাকা ফেরত দিতেও রাজি থাকেন। অন্যদিকে ২০১০ সালে ‘দাবাং’ দিয়ে বলিউডের বক্স অফিসে পুনর্জন্ম পান সালমান খান। এরপরই একের পর এক ১৫০ কোটির ব্লকবাস্টার উপহার দিয়ে গেছেন বলিউডের ভাইজান। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দাঙ্গাল’ সিনেমা দিয়ে বলিউডের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমার রেকর্ড গড়েন আমির খান। অন্যদিকে সালমান খান তিনবার ৩০০ কোটির মাইলফলক ছুঁয়েছেন তাঁর ‘বজরঙ্গি ভাইজান’, ‘সুলতান’ এবং ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ সিনেমাগুলোর মাধ্যমে। ভারত, দাবাং থ্রির পর রাধে, কাগজ, অন্তিম, গডফাদার তেমন করে আয় করেনি। বরং ফ্লপের তকমাই জুটেছে সাল্লুর ভাগ্যে। তবে ২০২৩ সালে শাহরুখের সঙ্গে করা পাঠান নিয়ে কিছুটা আশা তো করাই যায়। এরপর তো রয়েছে টাইগার থ্রি। তবে টিভি রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এ সালমান ব্যস্ত থাকলেও ভক্তরা চায় সিনেমায় সালমানের কাম ব্যাক। তবে নতুন কিছু সিনেমার মাধ্যমেও বক্স-অফিসে স্বরূপে ফিরবেন কি না এই তারকাদের হয়তো জানা নেই, তবে আশা তো করাই যায়। গত কয়েক দশক ধরে বলিউডে রাজত্ব করে আসছেন এই তিন খান। তাঁদের অবদান বলিউড মনে রাখবে হাজার বছর। নানাবিধ পরিবর্তনের মধ্যে যাওয়া কয়েক দশক পরও বলিউডের তিন খানের জনপ্রিয়তা কী করে বজায় রইল? তাঁরা মূলত তাঁদের দর্শকদের সাহায্যে একটি কল্পজগৎ তৈরি করেছিলেন, যার মাধ্যমে সহজেই দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণে হয়েছেন সফল। এসব কল্পকাহিনি ছিল তাঁদেরই করা সিনেমার ফলাফল।

সর্বশেষ খবর