মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রশংসায় ইত্যাদির ফেনী পর্ব

 শোবিজ প্রতিবেদক

প্রশংসায় ইত্যাদির ফেনী পর্ব

একটি অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তার পেছনে অনেক বিষয় কাজ করে- গবেষণা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, সততা, তীক্ষè পর্যবেক্ষণ, দর্শকদের প্রতি দায়বোধ, সর্বোপরি মেধা। আর এই বিষয়গুলো থাকে বলেই ইত্যাদি আজ দেশসেরা অনুষ্ঠান। ইত্যাদি আগে যেমন জনপ্রিয় ছিল, ৩৫ বছরে এসেও তেমন জনপ্রিয়। 

একটি অনুষ্ঠানের সার্থকভাবে দীর্ঘ পথচলা দেশের মিডিয়ার রাজ্যে এক নতুন ইতিহাস। আর অবশ্যই এই কৃতিত্বের পেছনে যেই মানুষটি নিজ দায়বোধ থেকে দিনরাত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি হচ্ছেন ইত্যাদির কিংবদন্তি কারিগর হানিফ সংকেত। ফেনীকে নিয়ে চমৎকার একটি কবিতার মাধ্যমে শুরু করলেন ইত্যাদির ফেনী পর্বের। যার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে পুরো ফেনীর পরিচিতি। পুরো অনুষ্ঠানটিই ছিল একটির পর একটি শব্দজুড়ে অনুপ্রাসিক ছন্দে গাঁথা হানিফ সংকেতের কথার জাদু। ইত্যাদির সেটেরও থাকে একটি বিশেষত্ব। এবার করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহ ১৮৮৬ সালে নির্মিত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ফেনীর সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে। এবারের প্রতিটি বিষয়ই ছিল সমসাময়িক। শুরুতেই ছিল- ফেনীকে নিয়ে শতাধিক স্থানীয় নৃত্যশিল্পীর নৃত্যগীত। ফেনীর প্রতিবেদনে বিভিন্ন তথ্যের সঙ্গে ফেনীর গুণীজনসহ ফেনীর বিভিন্ন দিঘি ও বিলোনিয়া যুদ্ধ সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানা গেল এবারের ইত্যাদিতে। একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক প্রকৃতিপ্রেমিক রফিকুল হাসানের রাষ্ট্রের পরিবেশ রক্ষায় টকশোতে বকবক না করে নিজেই স্কুল-কলেজে গিয়ে এলাকার মানুষদের জড়ো করে হাতে-কলমে দেখিয়ে দিয়েছেন পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ। এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পিলারের দ্ইু পাশে বসবাসকারী মানুষদের চমৎকার সম্পর্কের বিষয়টি হানিফ সংকেত তাঁর উপস্থাপনা নৈপুণ্যে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। রংপুরের পীরগাছার একজন অখ্যাত দরিদ্র মানুষ গনি মিয়ার নামে গড়ে উঠেছে একটি বাজার, যার নাম গনির বাজার। অথচ গনি মিয়ারই গনির বাজারে বসার কোনো জায়গা নেই। গনি মিয়া যেন গনির বাজারে একটি দোকান করতে পারেন সে জন্য তাঁকে ২ লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন থেকে ইত্যাদি এই মহৎ কাজটি করে আসছে। ইত্যাদিতে সবসময় নতুন গান করা হয়। যেখানে থাকে না কোনো মডেলের নৃত্য কিংবা অহেতুক বিষয়বর্জিত লাফালাফি। এবারে গান গেয়েছেন ইত্যাদিখ্যাত শিল্পী পান্থ কানাই এবং দীর্ঘ বিরতির পর ডলি সায়ন্তনী। গানটি লিখছেন কবির বকুল, সুরারোপ করেছেন আকাশ মাহমুদ। গানটি উপস্থিত দর্শক ও বাড়ির দর্শকও উপভোগ করেছেন। বিশ্বসেরা ক্লিনিক মেয়ো ক্লিনিকের ওপর নির্মিত প্রতিবেদনটি ছিল বেশ শিক্ষণীয়। সমসাময়িক বিষয়ের ওপর নির্মিত ডাক্তারের চেম্বারে নেতা ও তাঁর শিষ্যদের অদ্ভুত ব্যবহার, বাড়িতে এসে মোবাইল ফোন ব্যবহার রোধে এক দম্পতির গৃহে মোবাইল পকেট স্থাপন করা, ঘরে এসেই ফোন এই পকেটে রাখতে হবে, কল করা আর ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজে কেউ যেন ফোন ব্যবহার করতে না পারে। তুষার খান অভিনীত সংক্রমিত উত্তেজনার পর্ব, অফিসেই সাইনবোর্ড লাগিয়ে দালালি করার ওপর কাশেম টিভির রিপোর্টিং, শীতের পিঠার আসল স্বাদ, নিজের মা-বাবাকে বাদ দিয়ে রাস্তার অসহায় মানুষকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে ব্যবসার চিন্তা করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অত্যন্ত সময়োপযোগী ও শিক্ষণীয় নাটিকাগুলো মানবিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বরাবরের মতোই নানি-নাতির এবারের পর্বটিও ছিল উপভোগ্য। বিশিষ্ট অভিনেত্রী, ফেনীকন্যা শমী কায়সারকে মঞ্চে ডেকে এনে হানিফ সংকেত যেসব প্রশ্ন করলেন এবং শমী কায়সারও যেভাবে জবাব দিলেন তা এক কথায় উপভোগ্য এবং এখনকার শিল্পীদের জন্য শিক্ষণীয়। ভালো লেগেছে সহায় সংগঠনের মাধ্যমে মঞ্জিলা আক্তার মিমি ও তাঁর দলের অসহায় মানুষকে সহায়তা করার বিষয়টি। প্রচারবিমুখ মিমি সমাজের অসহায় মানুষ, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ, রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া আত্মপরিচয়হীন শিশুদের নিজের তত্ত্বাবধানে রেখে লালন-পালন করা, পরে তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া কিংবা ভালো মনের মানুষ পেলে তাকে দত্তক হিসেবে তুলে দেওয়ার মতো মহৎ কাজ করছে মিমি ও তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘সহায়’। সব বাধা পেরিয়ে এই শিশুরাও যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সেটিই সবার কাম্য।

 

সর্বশেষ খবর