শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার :- জাকিয়া বারী মম

অভিনয়ের মধ্যে আমার অস্তিত্ব অনুভব করি

অভিনয়ের মধ্যে আমার অস্তিত্ব অনুভব করি

জনপ্রিয় তারকা জাকিয়া বারী মম।  বছর ধরেই এই লাক্স তারকাকে নাটক, সিনেমা আর ওটিটিতে বৈচিত্র্যময় ও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে দেখেছেন দর্শক। বর্তমানেও বেশ কিছু চলচ্চিত্র-ওয়েবে কাজ করছেন। ৩ মার্চ খিজির হায়াতের ‘ওরা ৭ জন’ নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে আসছেন মম। তাঁর সঙ্গে সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘ওরা ৭ জন’র বিশেষ প্রদর্শনী হয়েছে। কেমন অনুভূতি?

এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। ছবিটি ৩ মার্চ সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।  যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা তাই শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা করে প্রদর্শনী সত্যিই অভাবনীয় বিষয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পাই এ দেশ। তাই মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জন্মের পরিচয় বহন করে। শুধু গল্প পড়ে বা সিনেমা দেখে নয়, আমার নানার কাছ থেকে ছোটবেলায় তাঁদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার নানা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর কাছ থেকে সেই সময়ের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তর শুনেছি। সেটি একটা এক্সপেরিয়েন্স। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে খিজির হায়াতের ‘ওরা ৭ জন’ এ কাজ করেছি। এটিতে মানুষের গল্প রয়েছে। নির্মাতা এই গর্বের ও সম্মানের মুক্তিযুদ্ধকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন সাত মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে। নারীদের পাওয়া-না পাওয়া ত্যাগের গল্পও ওঠে এসেছে। কাজটি করে ভালো লেগেছে। আশা করছি, দর্শকদেরও পছন্দ হবে।

 

‘রেসিডেন্ট এভিল’র বাংলা ডাবিংয়ে কণ্ঠ দিয়েছেন। অভিজ্ঞতা কেমন?

জীবনে প্রথম প্রফেশনালভাবে ডাবিং করা! এর আগে নিজের চরিত্রে ডাবিং করেছি। কিন্তু অন্য একটা চরিত্রে, তার মতো করে, তার আবেগ ধারণ করে, তার চোখের চাহনি, তার শরীরের ভাষা বুঝে ডাবিং করাটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। চরিত্রটি নিজের মধ্যে এমনভাবে ধারণ করেছি যে এক পর্যায়ে নিজেকেই মনে হয়েছে অ্যালিস। প্রতিটি ডায়ালগ ধরে ধরে আমরা এগিয়েছি। এসআরকে স্টুডিওতে রেকর্ডিং মুহূর্তে স্ক্রিপ্টের বাইরেও ইম্প্রোভাইস করেছি। অনেক কারেকশন করে এগিয়েছি। কারণ, দর্শক যেন ফিল না করেন তারা কোনো সাবটাইটেলড মুভি দেখছেন। বরং নিজের মাতৃভাষা বাংলায় মুভিটা দেখার পর তাদের জন্য যেন সর্বোচ্চ বোধগম্যতা থাকে, সেই বিষয়ে আমি আর আমার ডিরেক্টর খালিদ হাসান অভি সতর্ক থেকে আউট অব বক্স কাজ করেছি।

 

সাইফুল ইসলাম মান্নুর নির্মাণে একটি সিনেমার শুটিং করেছেন...

হ্যাঁ শুটিং শেষ করেছি। সিনেমার নাম এখনো ঠিক হয়নি। আর চরিত্র, গল্প ও আনুষঙ্গিক বিষয় এখনই বলতে চাচ্ছি না। সব ঠিকঠাক হলে বলব। পরিকল্পনা করে কথা বলাই তো ভালো, তাই না?

 

ওটিটিতেও আপনি অভিনয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন। এসব দর্শকনন্দিত হওয়ার মূল কারণ কী?

টিভি নাটকের মতো প্রতিটি ওয়েব সিরিজ খুবই যত্ন নিয়ে করেছি। কাজগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কারণ কাজগুলোর মধ্যে ডেডিকেশন, মন ও মগজের সংযোগ ছিল। এভাবে সব কাজই ভালো হয়। এখন জীবনকে আরও কাছ থেকে বলার সময় হয়েছে। শুরু থেকে অভিনয়টাই করতে চেয়েছি। অভিনয়টাকে হৃদয়ঙ্গম করতে চেয়েছি। সেই যাত্রা এখনো অব্যাহত আছে।

 

ফটোশুটেও অন্যভাবে উপস্থাপন করছেন...

কোনো রহস্য নেই। এসব আসলে ভেবেচিন্তে করা নয়। অনেক দিন ধরেই তো কাজ করছি। নানাভাবে দর্শক দেখছেন আমাকে। সবার কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ।

 

বাস্তবতার পাশাপাশি একটা ঘোর লাগা জগৎ আছে আমার। সেটা আসলে কাউকে বলে  বোঝাতে পারব না। আমি আমার প্রফেশনটাকে খুব ভালোবাসি। অভিনয়ের মধ্যে আমি আমার অস্তিত্ব অনুভব করি।  আমি আসলে এই ঘোরের মধ্যেই থাকতে চাই।

 

আপনার শিল্পী হওয়ার গল্প খুবই ইন্টারেস্টিং...

মাত্র ৩-৪ বছর বয়সে নাচ, গান, ছবি আঁকার ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলাম। সকালবেলা মাকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনে চেপে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রওনা করে ঢাকায় এসে নাচ শিখে আবার রাতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতাম। এটা চলেছে টানা ১০ বছর। শিবলী মহম্মদ ও কবিরুল ইসলাম রতন ছিলেন আমার নৃত্যগুরু। এ ক্ষেত্রে আমার মা আয়েশা আক্তারের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি।

 

‘রেডিও’তে অভিনয় করেছেন। এটি কবে আসছে?

এটা নির্মাতাই ভালো জানেন। সিনেমাটি ভালো হয়েছে।

 

এই যে অভিনয় করেই যাচ্ছেন, ছুটে চলেছেন অবিরত ক্লান্ত লাগে না?

আমি যদি ডিপ্লোমেসি করি, তাহলে বলব- না ক্লান্ত হই না। আর যদি ডিপ্লোমেসি না করি তাহলে বলতে হবে- হ্যাঁ, ক্লান্ত হই। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে ক্লান্তিটা প্রতিদিনই নতুন করে আসে এবং প্রতিদিনই নতুন করে কেটে যায়। প্রতিদিন আমি নতুন নতুন চরিত্রের মাধ্যমে নতুন একজন মমকে আবিষ্কার করি।

 

অভিনীত চরিত্র মমর ওপর ভর করেছে কখনো?

এটা আমার ক্ষেত্রে প্রায়শই হয়। চরিত্রের যুক্তি, চরিত্রের উদ্দেশ্য, চরিত্রের চারপাশের ঘটে যাওয়া বিষয়বস্তু আমাকে যদি আশ্বস্ত না করে তাহলে আমি ঠিকমতো চরিত্রটা পোর্টেট করতে পারি না।

 

আপনার নিজস্ব জগৎটা কেমন?

বাস্তবতার পাশাপাশি একটা ঘোর লাগা জগৎ আছে আমার। সেটা আসলে কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। আমি আমার প্রফেশনটাকে খুব ভালোবাসি। অভিনয়ের মধ্যে আমি আমার অস্তিত্ব অনুভব করি। আমি আসলে এই ঘোরের মধ্যেই থাকতে চাই।

 

প্রেম আপনার কাছে কেমন?

কোনো মানুষের জন্য কিংবা বস্তুর জন্য মনের মধ্যে এক প্রকার শিহরণ হওয়াটা আমার কাছে প্রেম। প্রেমটা যে শুধু মানব-মানবীর মধ্যেই হবে এমন কথা নেই।

সর্বশেষ খবর