সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঢাকার ছবিতে যা কিছু প্রথম

ঢাকার ছবিতে যা কিছু প্রথম

ঐতিহ্যে মোড়া বাংলাদেশের ছবি। ঢাকার ছবির রয়েছে সোনালি অতীত। নির্মাতা, অভিনয় শিল্পী, গল্প, গান থেকে শুরু করে এখানকার ছবি একসময় দেশ-বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগাত।  ১৯৫৬ সালে ঢাকায় প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তি পেলেও এটি ঢাকার প্রথম ছবি নয়। ঢাকাই ছবিতে যা কিছু প্রথম এ প্রতিবেদনে সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

ছবি : দ্য লাস্ট কিস

১৯৩১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য লাস্ট কিস’ ছিল ঢাকার প্রথম ছবি। এটি ছিল নির্বাক ছবি। ছবিটি পরিচালনা করেন অম্বুজ গুপ্ত। এ ছবির দৃশ্যধারণ শুরু হয় ১৯২৯ সালে। ১২ রিলের এই নির্বাক ছবিটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয় ১২ হাজার টাকা। ১৯৩১ সালে এটি মুক্তি পায় ঢাকার তৎকালীন মুকুল সিনেমা হলে। এই সিনেমা হলে ছবিটি প্রায় এক মাস চলেছিল। ছবির নায়ক ছিলেন খাজা আজমল আর নায়িকা লোলিটা ও চারুবালা। ছবিটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছিল ইস্ট বেঙ্গল সিনেমাটোগ্রাফ সোসাইটি।

 

সবাক ছবি : মুখ ও মুখোশ

ঢাকার প্রথম সবাক ছবি হলো ‘মুখ ও মুখোশ’। ইকবাল ফিল্মসের ব্যানারে ছবিটি নির্মাণ করেন আবদুল জব্বার খান। এর কাহিনিও লেখেন তিনি। ১৯৫৪ সালে এই ছবির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার রূপমহল এবং চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে এটি মুক্তি পায়। এতে অভিনয় করেন আবদুল জব্বার, পূর্ণিমা সেন, জহরত আরা, পিয়ারি বেগম, আমিনুল হক, সাইফুদ্দিন, গওহর জামিল, ইনাম আহমেদ প্রমুখ।

 

নির্মাতা : অম্বুজ গুপ্ত

ঢাকাই ছবির প্রথম নির্মাতা ছিলেন অম্বুজ গুপ্ত। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘সুকুমারী’ ও পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘দ্য লাস্ট কিস’-এর নির্মাতা ছিলেন তিনি। তাঁর বাড়ি ছিল ঢাকার দক্ষিণ বিক্রমপুরের মগর গ্রামে।

 

নায়ক : খাজা আজমল

ঢাকাই ছবির প্রথম নায়ক ছিলেন ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান খাজা আজমল। ‘লাস্ট কিস’ ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ১৯৪৯ সালে অনুষ্ঠান ঘোষক হিসেবে ঢাকা বেতারে যোগ দেন।

 

নায়িকা : লোলিটা

ঢাকাই ছবির প্রথম নায়িকা ছিলেন লোলিটা। তাঁর আসল নাম বুড়ি। ছবিতে তখন কোনো ভদ্রঘরের মেয়েকে অভিনয়ের জন্য পাওয়া যেত না বলে বাদামতলীর পতিতালয় থেকে বুড়িকে ‘লাস্ট কিস’ ছবির নায়িকা হিসেবে আনা হয়। নাম দেওয়া হয় লোলিটা। তাঁর বয়স ছিল ১৪ বছর। লাস্ট কিস ছবির কাজ শেষ হওয়ার পর লোলিটা আবার তাঁর পূর্ব পেশায় ফিরে যান।

 

সিনেমা হল : শাবিস্তান

পিকচার হাউস [শাবিস্তান], প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আরমেনিয়া স্ট্রিটে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম সিনেমা হল পিকচার হাউস। ১৯৫৬ সালে এই সিনেমা হলের মালিক হন মো. মোস্তফা। তিনি এর নাম বদলে রাখেন শাবিস্তান। ঢাকার প্রথম নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হয় এই সিনেমা হলে। হলিউডের গ্রেটা গার্বোর একটি ছবি এখানে প্রথম প্রদর্শিত হয়।

 

সিনেমাস্কোপ ছবি : বাহানা

ঢাকার প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি হলো ‘বাহানা’। ১৯৬৫ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। উর্দু ভাষায় এই ছবিটি নির্মাণ করেন জহির রায়হান। এতে অভিনয় করেন রহমান, কবরী প্রমুখ।

 

রঙিন ছবি : বাদশা

সংগম (১৯৬৪, পরিচালক- জহির রায়হান) ও স্বাধীন দেশে প্রথম রঙিন ছবি নির্মাণ হয় ১৯৭৫ সালে। ছবির শিরোনাম ‘বাদশা’। আকবর কবির প্রন্টু নির্মাণ করেন তারকাবহুল এই রঙিন ছবিটি। অভিনয় করেন খসরু, শাবানা, নূতন প্রমুখ। বাদশা দিয়েই শুরু হয় রঙিন ছবির যাত্রা।

 

মুক্তিযুদ্ধের ছবি : ওরা ১১ জন

প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণ হয় ১৯৭২ সালে। ‘ওরা ১১ জন’ শিরোনামের এই ছবিটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। আর প্রযোজনা করেন মাসুদ পারভেজ।

 

জাতীয় পুরস্কার : ১৯৭৬ সাল

১৯৭৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি এই পুরস্কারের আওতায় আসে। ১৯৭৬ সালের ৪ এপ্রিল বঙ্গভবনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণ করেন। সেরা ছবির পুরস্কার পায় ‘লাঠিয়াল’। সেরা পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা [লাঠিয়াল], সেরা অভিনেতা আনোয়ার হোসেন [লাঠিয়াল], সেরা অভিনেত্রী ববিতা [বাঁদী থেকে বেগম]। সেরা পার্শ্বঅভিনেতা ফারুক। সেরা পার্শ্বঅভিনেত্রী রোজী সামাদ।

সর্বশেষ খবর