মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্কুলে যাওয়ার সময় বাবা বেণি বেঁধে দিতেন

স্কুলে যাওয়ার সময় বাবা বেণি বেঁধে দিতেন

দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিজরী বরকতুল্লাহ। শিল্প-সংস্কৃতিমনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এই তারকা নৃত্যশিল্পী ও উপস্থাপিকা হিসেবেও বেশ সুপরিচিত। তাঁর সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন - পান্থ আফজাল

 

মা কেমন আছেন?

কী বলব! ভালো নেই তো। রোজার শুরুর সময় ২০-২১ দিন তো তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। তখন আইসিইউতে ছিলেন। অবস্থার উন্নতি নেই। এ অবস্থায় হাসপাতালে আর চিকিৎসা নেই, বাসায় নিয়ে এসেছি। বাসাই এখন হসপিটাল বানিয়ে ফেলেছি। তাঁকে ২৪ ঘণ্টা আমরা দেখাশোনা করছি। সার্বক্ষণিক দেখাশোনার জন্য একজন লোকও রেখেছি। তিনি কথা বলতে পারেন না। উঠে বসতেও পারেন না। শুধুই তাকিয়ে থাকেন। তবে তিনি খুবই সেনসেটিভ। এভরি উইকে তাঁর ব্লাড টেস্ট করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি ওষুধ খাওয়ানো, কীভাবে কী করব- এসব নিয়ে ডাক্তারের মাথা খারাপ করে ফেলছি আর কী। এসব করতে করতে আমিই পুরো ডাক্তার হয়ে গেছি। এখন তো এ কারণে তেমন কাজ করি না। আমার মায়ের এত কিছু পড়ে আছে, অথচ সে কিছু বুঝতেই পারছে না- ভাবতে কেমন যেন লাগে!

 

বাবাকে নিয়ে আপনার অনেক স্মৃতি রয়েছে...

বাবা যে নেই তা ভাবতেই চাই না। সব সময় মনে করি বাবা অন্য কোনো রুমে আছেন; সঙ্গে আছেন। বাবা মানেই আমার সবকিছুর প্রবলেম সলভ। ‘ওয়েটিং ফর গডো’র মতো আমিও বাবার প্রতীক্ষায়। বাবা ছিলেন আমার গডো। কোনো প্রবলেমে পড়লে একমাত্র তাঁর কাছেই সবকিছুর সমাধান থাকত। তাঁকে সবসময় মনে পড়ে। জানি না, বাবারা প্রত্যেকের জীবনে কীভাবে আছেন। তবে আমার কাছে তিনি সবকিছু। হঠাৎ করে কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন। জীবনে চলার পথে প্রচন্ড একটা ধাক্কা খেলাম। দায়িত্ব বেড়ে গেল, যা জীবনে কোনো দিনই ভাবিনি। আসলে বাবা ভাবতে দেননি কখনো। বাবাকে নিয়ে তো অনেক স্মৃতি রয়েছে, কোনটা রেখে কোনটা বলব। আমি স্কুলে গেলে দুটো বেণি করে যেতাম। বাবা বেণি দুটো বেঁধে দিতেন। তবে একটা বেণি বড়, আরেকটা ছোট হয়ে গেলে তাঁর সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দিতাম। বেণি একটু উঁচু-নিচু হলে রাগ করে বাবাকে বলতাম, ‘তুমি বেণি করতে পার না’।

 

বন্ধু তাজিন আহমেদ জলের প্রয়াণ দিবস ছিল। বন্ধুকে এখনো মিস করেন?

সব সময়। ওর সঙ্গে স্কুলে থাকতেই পরিচয়। তখন সেভেনে পড়ি। আমরা একই সঙ্গে প্রাইভেট পড়তাম। ও পড়ত অগ্রণীতে আর আমি ভিকারুন নেসায়। সে সময় আমি একজন টিচারের কাছে নাচ শিখতাম। ও নাচ শিখতে চাইত। তবে ও সবকিছুই করতে চাইত। একসময় বলত নাচ শিখব, আবার বলত নারে নাচ শিখব না। এরমধ্যে একসঙ্গে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিলাম। যখন কলেজে উঠলাম তখন অনেক কমন ফ্রেন্ড হলো। তারপরও প্রত্যেকটি জায়গায় ওর সঙ্গে দেখা হতো। ওর অনেক কিছুই আমি জানতাম। তবে শেষের দিকে জীবনটা খুবই ব্যস্ত হয়ে গেল। ও মারা যাওয়ার আগেও অনেক ফোন দিয়েছি, তবে কল রিসিভ করত না। জানি না কেন! মারা যাওয়ার তিন-চার মাস আগেও চয়নিকা দির একটি নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করেছি। ও দুই সিকোয়েন্সের একটি গেস্ট অ্যাপারেন্স করেছিল। সেই চরিত্রটি ছিল নাটকের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। ও বাই হার্ট ভালো মানুষ ছিল। তবে ইমোশনালি বায়াস ছিল। আসলে ছোটবেলা থেকে গার্ডিয়ানশিপ তাজিন তেমন করে পায়নি। এখনো ভাবলে কষ্ট লাগে যে, ও মারা গেলে ওর গোসল আমি করিয়েছি। 

 

ইমোশনাল হয়ে গেছেন। অন্য প্রসঙ্গে আসি। সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফরমে অন্য এক বিজরীকে দেখেছে দর্শক। এই জার্নি নিয়ে কিছু বলবেন?

বাবা মারা যাওয়ার পর কোনো কাজ করিনি। এরপর শাওকীর সঙ্গে কাজের বিষয়ে কথা হলো। আমি কনভেন্সড হলাম। কারণ শাওকীর আগের কাজ ‘তাকদীর’ দেখেছিলাম। এরপর তো কারাগার সেকেন্ড সিজন করলাম। যদিও প্রথমদিকেই করার কথা ছিল। তবে ওর সঙ্গে কাজ করে আমি খুবই হ্যাপি। কাজটি করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কয়েকদিন তো হোল ডে হোল নাইট একটানা কাজ করেছি। তবে কারাগার টু এ আমার চরিত্রের কিছু সিকোয়েন্স কেটে ফেলেছিল, যেগুলো দেখানো হয়নি। তবে হ্যাঁ, কাজ করে অনেক ভালো লেগেছে। আর ভিকি জাহেদের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করলাম। ‘সাইলেন্স’ দেখে সবাই ভালো বলেছে। নতুন একটা কাজের কথা চলছে। চরকির একটি ফিল্মের। তবে ডিটেইলস এখনই বলতে চাই না। আগেভাগে বলার পর যদি কাজটি না হয়!

 

নাটক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার অভিমত?

টিভি তেমন দেখছে না। ইউটিউব-ওটিটির জন্য যা বানাচ্ছে, তাই দেখছে। পারিবারিক গল্প নিয়ে নাটক কম হচ্ছে। মা আর প্রেমিকা ছাড়া নারীকেন্দ্রিক নাটক তেমন হচ্ছে না। ভিউয়ার চেঞ্জ হয়ে গেছে। ভিউ চায় সবাই। ক্রিসপি জিনিস সবাই দেখতে চায়, ভালো জিনিস দেখতে চায় না। ভিউ কাউন্ট করে জনপ্রিয়তা নির্ধারিত হচ্ছে। তবে এখন ওটিটি ভালো করছে। ভালো বাজেট, ভালো মেকার ও গল্প নিয়ে কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে।

 

সিনেমায় দেখা যাবে?

ভালো গল্প ও চরিত্র হলে তো কাজ করার ইচ্ছা রয়েছেই। একসময় তো প্রচুর অফার পেতাম। ইচ্ছা করত না বা রুচির সঙ্গে যেত না বলে করিনি। আসলে তখন পড়াশোনাটা শেষ করাটা জরুরি ছিল। এরপর হঠাৎ করে নাটকে অভিনয়! তবে ভাবিনি অভিনয় করব। আর ফিল্মের যে অফারগুলো ছিল সেগুলো পছন্দের ছিল না। এরপর এলো চলচ্চিত্রের অশ্লীল সময়। তাই সবকিছু ভেবে ইচ্ছাও ছিল না। এখন ভালো কাজ হচ্ছে, অভিনয় তো করাই যায়।

 

ইন্তেখাব দিনারের সময় চলছে এখন...

ভীষণ ভালো লাগে। ওর মধ্যেও একটা স্যাটিসফ্যাকশন তৈরি হয়েছে এখন। আগে তো শুটিং শেষ করে এসে মুড ভালো থাকত না তার। এখন সেটা ভিন্ন। পুরো উৎসাহ নিয়ে কাজ করে সে। এ বিষয়টা কিন্তু খুবই জরুরি আমার কাছে। দিনশেষে ভালো থাকাটা খুবই জরুরি। তাই না?

সর্বশেষ খবর