বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

যেমন আছেন বৈজয়ন্তীমালা

যেমন আছেন বৈজয়ন্তীমালা

বৈজয়ন্তীমালা, বলিউডের স্বর্ণযুগে কিংবদন্তিতুল্য অভিনেত্রী। চল্লিশের দশকে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে তাঁর। সত্তরের দশক পর্যন্ত অভিনয়ে সক্রিয় ছিলেন তিনি। এরপর রাজনীতিতে যুক্ত হন। এক সময় অভিনয় এবং রাজনীতি ছেড়ে সংসারে থিতু হন তিনি।  পদ্মশ্রীতে ভূষিত এই অভিনেত্রী এখন কেমন আছেন। সেই কথাই তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

যেমন আছেন এখন

বলিউডের প্রথম সুপারস্টার-খ্যাত অভিনেত্রী বৈজয়ন্তীমালা এখন ভালোই আছেন। একমাত্র পুত্র সুচিন্দ্রমর সঙ্গে থাকেন চেন্নাইয়ে। সঙ্গে আছেন পুত্রবধূ নন্দিনী ও নাতনি সারা। ১৯৪৯ সালে তামিল ভাষায় নির্মিত বাঝকাই চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অভিষেক ঘটে তাঁর। এরপর ১৯৫০ সালে  তেলেুগু চলচ্চিত্র জিভিথামে অভিনয় করেন  বৈজয়ন্তীমালা। পরবর্তীকালে দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেত্রীর মর্যাদা লাভসহ বলিউডের স্বর্ণযুগে প্রবেশ করেন তিনি। দক্ষিণ ভারতীয় এই অভিনেত্রী তাঁর অনিন্দ্য চেহারা আর অভিনয় প্রতিভায় বলিউডের সিনেমা জগৎকে উচ্চমাত্রায় সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর পুরো নাম বৈজয়ন্তীমালা বালি। জন্ম ১৩ আগস্ট, ১৯৩৬ তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি ত্রিপলিক্যান এলাকায়। বৈজয়ন্তীমালা একাধারে ভারতীয় চলচ্চিত্রাভিনেত্রী, ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী, কর্ণাটক গায়িকা, নৃত্য নির্দেশিকা ও সংসদ সদস্য।

 

চলচ্চিত্রে অভিষেক

১৯৫৪ সালে নাগিন চলচ্চিত্রে সফলতা লাভের পর বৈজয়ন্তীমালা নিজেকে বলিউডের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে তোলেন। পাশাপাশি তামিল ও তেলেুগু চলচ্চিত্রেও সফলতা পান। বাণিজ্যিকধর্মী চলচ্চিত্রে সফলতা লাভের পর  দেবদাস চলচ্চিত্রে চন্দ্রমুখীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এতে তার প্রথম নাটকীয় চরিত্রের জন্য চতুর্থ ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের প্রথম সেরা সহঅভিনেত্রী হিসেবে মনোনীত হন। কিন্তু তিনি ওই পুরস্কার নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তার মতে, তিনি  কোনো সহকারীর ভূমিকায় অভিনয় করেননি।  প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। এ ঘটনার পর নিউ দিল্লি, নয়া দৌড় ও আশার মতো ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৫৮ সালে খ্যাতির তুঙ্গে পৌঁছেন তিনি। সাধনা ও মধুমতী এ দুটি ছবি ব্যাপকভাবে আলোচনায় স্থান পায় ও বাণিজ্যিকভাবে সফলতা লাভ করে। এ দুটি চলচ্চিত্রই ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার বিভাগের জন্য মনোনীত হয়েছিল এবং প্রথমটির জন্য পুরস্কার পান। এ সময়েই তিনি তামিল চলচ্চিত্রে ফিরে আসেন। ভঞ্জিকোত্তাই বলিবান, ইরুম্বু থিরাই, ভগবৎ থিরুদান ও থেন নীলাভুর মতো বাণিজ্যিকধর্মী চলচ্চিত্রে সাফল্য লাভ করেন। ১৯৬১ সালে দিলীপ কুমারের গঙ্গা যমুনায়  ভোজপুরী সংলাপ সমালোচকদের কাছে অদ্যাবধি সেরা হয়ে আছে। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি তাঁর দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে সঙ্গম চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি খ্যাতির স্বর্ণশিখরে পৌঁছেন। এক আধুনিক ভারতীয় মেয়ে হিসেবে স্বল্পবসন ও সুইমস্যুট পরে পর্দায় নিজেকে উপস্থাপন করেন। সঙ্গমে রাধা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের কারণে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর মর্যাদা লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি আম্রপালির বৈশালীর নাগ্রাবাদুর জীবনীকে ঘিরে রচিত ঐতিহাসিক নাটক আম্রপালির চলচ্চিত্রায়ণে অভিনয় করেন।  বৈশ্বিকভাবে ব্যাপক সহায়তা পেলেও বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। এর ফলে বৈজয়ন্তীমালা ব্যাপকভাবে নিরাশ হন ও চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এতে তিনি চলচ্চিত্র জীবনের ইতি ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে তাঁর বর্ণাঢ্যময় চলচ্চিত্র জীবনের কারণে তাঁকে ‘নুমেরো ইউনো অভিনেত্রী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

 

রাজনীতিতে

বৈজয়ন্তীমালার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৮৪ সালে। ওই বছর তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের মনোনীত প্রার্থীরূপে তামিলনাড়ুর সাধারণ নির্বাচনে দক্ষিণ চেন্নাই সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটে বৈজয়ন্তীমালা প্রায় ৪৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেন। ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে সরাসরি নির্বাচিত হয়ে জানুয়ারি, ১৯৮৫ সালের শেষ দিকে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে প্রবেশ করেন তিনি। ১৯৮৯ সালে অনুষ্ঠিত তামিলনাড়ু সাধারণ নির্বাচনে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তিনি ছয় বছর মেয়াদে মনোনীত হন। ১৯৯৯ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের প্রাথমিক সদস্য পদ বাতিল করেন। ১৯৯৯ তারিখে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন।

 

নৃত্যকলায়

চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বৈজয়ন্তীমালার প্রধান আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রধান শাখা ভরতনাট্যম। চলচ্চিত্র জীবন ত্যাগ করার পরও নৃত্যকলায় অংশ নেন তিনি। ১৯৮২ সালে শিল্পকলায় অসামান্য অবদান রাখার পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ ভারতীয় সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া গলফ খেলায়ও আগ্রহ রয়েছে তাঁর। চেন্নাইয়ের অন্যতম বয়োঃবৃদ্ধের মর্যাদাও উপভোগ করছেন তিনি।

 

বিয়ে ও সংসার

১৯৬৮ সালে চমনলাল বালির সঙ্গে বিয়ে হয় বৈজয়ন্তী মালার। বিয়ের পর অভিনয় জীবনের সমাপ্তি ঘটে তাঁর এবং চেন্নাইয়ে চলে যান। সেখানে সুচিন্দ্র বালি নামের এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। এই বলিউড অভিনেত্রী সিনেমাপ্রেমীদের অন্তরে চিরজাগরূক হয়ে থাকবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর