বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইউটিউবে ভিউ বাণিজ্য ও ট্রেন্ডিংয়ে অশ্লীলতার জোয়ার

শোবিজ প্রতিবেদক

ইউটিউবে ভিউ বাণিজ্য ও ট্রেন্ডিংয়ে অশ্লীলতার জোয়ার

প্রতি ঈদেই টিভি চ্যানেলগুলোতে থাকে অনুষ্ঠানের রকমারি আয়োজন। সবকটি চ্যানেল মিলিয়ে প্রচারিত হয় কয়েক শত নাটক। পাশাপাশি কিছু কিছু ইউটিউব চ্যানেলও ঈদ উপলক্ষে ইদানীং নতুন নাটক প্রচার করছে। এসব ইউটিউব চ্যানেলে কিছু নির্মাতার চটকদার সব নাটক রিলিজ করা হয়। ইউটিউবে রমরমা ভিউ বাণিজ্যের কারণে এরা টিভি চ্যানেলের তোয়াক্কা করে না। কিছু কিছু প্রাইভেট চ্যানেল অবশ্য কিছু নাটক স্বত্ববিহীন শর্তে একবার প্রচারের জন্য স্বল্প মূল্যে কিনে নেয়। অন্যদিকে কিছু কিছু ইউটিউব তারকা এবং নির্মাতা যাঁরা অশ্লীলতার কারণে একসময় টিভি চ্যানেলে ততটা জনপ্রিয় ছিলেন না, তাঁরা ইউটিউবের জন্য নির্মিত এসব নাটকের উদ্ভট গল্প, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, অশ্রাব্য গালি প্রয়োগের মাধ্যমে নিম্নরুচির একশ্রেণির দর্শকের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। এই দর্শকদের বয়সসীমা ১৫ থেকে ২৫ এর মধ্যে। তবে এই বয়সের আর একশ্রেণির দর্শক রয়েছে যারা এসব দেখে না, বরং সুস্থ নাটক, অনুষ্ঠান কিংবা নেটফ্লিক্সে বিদেশি ভালো ভালো মুভি কিংবা নেটদুনিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নাটকে গালাগালি প্রদানের স্বপক্ষে এই শ্রেণির নির্মাতাদের যুক্তি-চরিত্রের প্রয়োজনে এসব গালাগালি বাস্তব। কারণ দৈনন্দিন জীবনে নাকি অনেকেই এসব গালি ব্যবহার করে। কিন্তু বাস্তব তো অনেক কিছুই। বাসর ঘর বাস্তব। মানুষের অনেক প্রাকৃতিক কর্মও বাস্তব। তাই বলে সেগুলো কী দেখাতে হবে? প্রশ্ন উঠেছে- কোথায় কারা, কোন শ্রেণির মানুষ কথায় কথায় এভাবে গালি ব্যবহার করে? ‘বিপ’ শব্দটি প্রয়োগ করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জানিয়ে দেয় এখানে গালি আছে। ‘বিপ’ শব্দের বাইরেও যেসব গালি দর্শক শুনতে পায় তাতেই টিভি বন্ধ করে দিতে হয়। এই শ্রেণির কোনো নাটকই পরিবার নিয়ে দেখা যায় না।

অথচ এই টেলিভিশনে হুমায়ূন আহমেদ, মামুনুর রশীদ, সেলিম আল দীনের মতো নাট্যকাররা নাটক করেছেন। তখন হয়তো ‘ভিউ’ জমানা ছিল না কিন্তু দর্শকরা নাটক দেখতে গিয়ে টিভি পর্দা থেকে চোখ ফেরাতে পারত না। মেনে নিচ্ছি দিন পাল্টেছে। কারিগরি দিক থেকে, ফটোগ্রাফির দিক থেকে, প্রচারের দিক থেকে টেকনোলজির অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু রুচির বিপর্যয় ঘটেছে মারাত্মকভাবে। যা শুধু দর্শক রুচিকেই নষ্ট করছে না, আমাদের সংস্কৃতিকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। যুবসমাজকে ধীরে ধীরে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। এই ঈদে প্রচারিত ভিউসর্বস্ব এবং ট্রেন্ডিংয়ে পর্যায়ক্রমে এক নম্বরে স্থান পাওয়া দুটি নাটক বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে এসব নাটক দর্শকদের কী বার্তা দিচ্ছে। এদের অর্জিত ভিউ কোন মানদণ্ডে? কারা করছে?

ঈদের দুই দিন আগে ২৭ জুন অভিনেতা নিলয় আলমগীরের ব্যক্তিগত চ্যানেলে আপলোড করা হয়েছে একটি নাটক। নাটকের নাম ‘জামাই শ্বশুরের কুরবানী’। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিলয় আলমগীর, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি ও ফখরুল মাসুম বাশার। নিলয়ের অধিকাংশ নাটকেই হিমি এবং মাসুম বাশারকে দেখা যায়। এই নাটকটি খুব দ্রুতই ট্রেন্ডিংয়ে এক নম্বরে চলে আসে এবং এই লেখাটি যখন লিখছি তখন এই নাটকের ভিউ ৬.১ মিলিয়ন এবং ট্রেন্ডিংয়ে ৭ নম্বরে চলে আসে। কেন এই নাটকটির এত ভিউ হয়েছে এবং ট্রেন্ডিংয়ে চলে এসেছে? যতই ভিউ হোক নাটকের মান বিচারে এটি একটি নিম্নমানের নাটক। নাটকের শুরু থেকেই দেখা গেছে জামাই-শ্বশুরের ভণ্ডামি, বাটপাড়ি। বাংলাদেশের সামাজিক ও পারিবারিক আবহে কোনো পরিবারেই কোনো জামাই-শ্বশুরের পারস্পরিক সম্পর্ক এত অশোভন নয়। এভাবে দেখালে জামাই-শ্বশুরের সম্পর্কে সমাজে ভুল ধারণা জন্মাবে। নকল ডাক্তার সেজে জামাইয়ের প্ররোচনায় কোনো শ্বশুর একজন অবলা নারীর সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করবে না। মাসুম বাশার একজন বয়োজ্যেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে কি করে এত নিম্নরুচির অভিব্যক্তি দিয়ে আরেকজনকে তার পশ্চাৎদেশ দেখতে বলেন? পিতার প্রতি কন্যার কটাক্ষপূর্ণ ও অপমানজনক সংলাপ, ‘এইসব ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল আগে অনেক করেছ’। বাবা কী করে সন্তানের সঙ্গে ব্ল্যাকমেইল করে? এটাও আমাদের সামাজিকতার পরিপন্থী। নাটকের আর একটি দৃশ্যে ছদ্মবেশি এক মহিলাকে জামাই বলছে, ‘আপনি যদি সুন্দর হন, তাহলে (গরু কেনার ক্ষেত্রে) বিশেষ ডিসকাউন্ট থাকবে। আর আপনি যদি ফ্রি হন, তাহলে গরুও ফ্রি।’ কোনো নারীর উদ্দেশে এমন কথা বলা দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারা মোতাবেক দণ্ডনীয় অপরাধ। সেটা ইভ টিজিংয়ের পর্যায়ে পড়ে। গল্পবিহীন সম্পূর্ণ নাটকটি ছিল ভাঁড়ামোপূর্ণ। নাটকটিতে ভাঁড়ামোপূর্ণ অভিনয়, চিৎকার, কান্নাকাটি, নায়িকা এসে বাবাকে ধমকানো, নিম্নমানের ফটোগ্রাফি-সব কিছু মিলিয়ে বোঝা গেছে অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে স্বল্প বাজেটে যে কোনো একটি লোকেশনে নির্মাণ করে আপলোড করাই মূল উদ্দেশ্য। কারণ ভিউ বাড়াতে হবে, বাণিজ্য বাড়াতে হবে। যদিও নাটকটিতে শেষে একটি বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু এ ধরনের অযৌক্তিক ও অবাস্তব চরিত্রের মুখে কোনো বক্তব্যই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে না।

এবার আর একটি ট্রেন্ডিং মার্কা নাটক ‘কিডনি’ নিয়ে আলোচনা করা যাক। এই নাটকটি আপলোড হওয়ার পর ‘জামাই শ্বশুরের কুরবানী’ দ্রুত স্থানচ্যুত হয়েছে। জায়গা দখল করেছে ‘কিডনি’। আপলোড হয়েছে ৩০ জুন। এই লেখাটি যখন লিখছি নাটকটির ভিউ ৫.৩ মিলিয়নে পৌঁছুছে এবং ট্রেন্ডিংয়ে এক নম্বরে উঠেছে। নির্মাতা অমির চিন্তাভাবনা-পরিচালনা-চিত্রনাট্যে নির্দিষ্ট কিছু শিল্পী নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে ঈদের নাটক নির্মাণ করছেন। এই দলের টিভি সিরিয়াল ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ একশ্রেণির টিভি দর্শকের কাছে বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল। আবার একশ্রেণির দর্শক ক্ষুব্ধ হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছিলেন এই নাটকের অশ্লীলতা নিয়ে। সেই একই দল নিয়ে নির্মাতা অমি এবার নির্মাণ করেছেন নাটক ‘কিডনি’। ‘কিডনি’ শব্দটি শুনলেই একটু ভয় হয়। কেন এই নামকরণ? নাটক দেখলে অবশ্য এই নামকরণের সার্থকতা পাওয়া যাবে কিন্তু নাটকের সার্থকতা পাওয়া যাবে না। ঈদ বিনোদনে এই নাটকের গুরুত্ব কী? কেন এ ধরনের একটি বিষয় নিয়ে নাটক নির্মাণ করা হলো? দর্শকদের আনন্দ দিতে? ভিউ বাড়াতে? ট্রেন্ডিংয়ে স্থান পেতে? ব্যবসাসফল হতে? কিন্তু মানুষের কিডনি বিক্রির গল্প দিয়ে ভিউ চিন্তা বা দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার চিন্তা কতটা যৌক্তিক? বলা বাহুল্য এই নাটকটিও প্রচারিত হয়েছে একটি প্রাইভেট ইউটিউব চ্যানেলে। যেখানে টিভির নিয়ম, শর্ত বা কোনো ধরাবাঁধা নির্দেশনা নেই। সুতরাং আমি যা দেব তাই প্রচার হবে এবং তাই হচ্ছে। যে কারণে যার মেধা যতটুকু ওই টুকু দিয়েই নির্মিত হচ্ছে নাটক। তাতে দেশের কি ক্ষতি হলো, সংস্কৃতির কি ক্ষতি হলো- তা নিয়ে কেউ উদ্বিগ্ন নয়, কারও ভ্রুক্ষেপ নেই।

নাটক শুরুর আগে পর্দায় যে লেখাটা ভেসে উঠেছে, সেটিই তো আপত্তিজনক। বলা হয়েছে, ‘চরিত্রের প্রয়োজনে কিছু আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।’ এ কথাটাই তো চরম আপত্তিকর। নির্মাতা যদি জানেই আপত্তিকর তাহলে তা প্রচার করবে কেন? তাহলে ধরে নেওয়া যায় চরিত্রের প্রয়োজনে নয়, আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে ‘ভিউ’-এর প্রয়োজনে। তবে মনে রাখতে হবে, মিডিয়া সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ। আরও একটি অগ্রহণযোগ্য কথা লেখা হয়েছে নাটকটি হালাল করার উদ্দেশে, ‘আপনি যদি অল্পতেই বিব্রত হন তাহলে এড়িয়ে যাবেন।’ এটা দর্শকদের অবমাননা ও ঔদ্ধত্য প্রকাশ। যেসব অশ্লীল শব্দ এবং অঙ্গভঙ্গি করা হয়েছে তা কি অল্প মাত্রার? নাটকজুড়েই তো নোংরামি।

‘কিডনি’ নিয়ে দর্শক মহলে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুসসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংযোজন বা বিযুক্তকরণের ক্ষেত্রে আইনে কিছু বিধান রাখা আছে। একটি গ্রামে কিডনি বেচাকেনার জন্য একটি হাসপাতাল হলো পুরো গ্রামবাসী জানে আর প্রশাসন জানবে না? বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা অলীক কল্পনা। কার্যক্রমের শুরুতেই তো তাদের ধরা পড়ার কথা। গ্রামের মেম্বার, যিনি অন্যের কাছে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে কাগজপত্র চাইলেন, তিনিও কিডনি বিক্রি করতে রাজি হয়ে গেলেন! দেশের সাধারণ মানুষের কাছে এতে কী মেসেজ গেল? একজন জনপ্রতিনিধিকেও বোধবুদ্ধিহীন হিসেবে প্রমাণ করা হলো। দেখে মনে হচ্ছে নাটকটিতে গ্রামের অসহায় দরিদ্র মানুষকে কিডনি বিক্রিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সবাই লাইন ধরে কিডনি বিক্রি করছে আর একদল লোক অবৈধভাবে কিডনি কিনছে, যেন কিডনি বেচাকেনা কোনো বিষয়ই নয়।

একজন বিদেশি চিকিৎসক গ্রামে এসে এসব অবৈধ কাজ করছে কীভাবে?

কিডনি ও তৎপূর্ববর্তী নাটকগুলোতে এই নির্মাতাকে এই শিল্পীদেরই ব্যবহার করতে দেখা গেছে। নাটক দেখে মনে হলো এরা সবাই গালাগালিতে বেশ পটু। গালি দিতে কারও কোনো আপত্তি নেই, নেই নিজ পরিবারের ভীতি। কথায় কথায় অশ্লীল গালি। ‘বিপ’ শব্দটিও যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। গ্রামের মহিলাকে ডাক্তার নামধারী এক মহিলা জিজ্ঞাসা করছেন- ‘আপনার সাথে ভাইয়ের শেষ মিলন কবে হইছে?’ এ-ধরনের অশ্লীল প্রশ্ন না করেও অন্যভাবে দৃশ্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়া যেত। ‘টাকা-পয়সা থাকলে বাড়িতে ফিরেই ভাই বলবে, কাছে আসো, তোমারে আগে আদর করি’-অভিনেত্রীর মুখের এই সংলাপটিও অশ্লীলতার ইঙ্গিত, শালীনতাবহির্ভূত। শুধু তাই নয়, তাকে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। যাতে তার কিডনিটিও কেনা যায়। কী ভয়ংকর! চিন্তা করলেই শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে।

নেশাখোর তো বাস্তবে কত অশালীন কথাই বলে। তাই বলে কি নাটকে হুবহু সেই ডায়ালগই দিতে হবে? নেশাখোরের ডায়ালগ- ‘আমি কি আপনার (ছাপার অযোগ্য) আঙুল দিছি?’ নেশাখোর আর একটি ডায়ালগে বলেছে, ‘সুযোগমতো পাইলে (ছাপার অযোগ্য)’। এরপর কুৎসিৎপূর্ণ ইঙ্গিত, যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু, অশোভন। যা বিকৃত রুচির ইঙ্গিতবহ। নেশা করেন কি না- এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে একজনের উত্তর : ‘গাঁজা তো সবাই খায়, গাঁজা কি নেশা?’ এখানে গাঁজাকে হালকা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে, সেখানে নাটকে গাঁজাকে হালকা করে দেখানোটা অবশ্যই আইনবিরোধী। আবার, যিনি এ কথাটি বলেছেন, নাটকে পরিণামে তার কোনো খারাপ পরিণতি দেখানো হয়নি।

পুরো নাটক থেকে কয়েকটি সংলাপ তুলে ধরছি যেমন- ‘ও শুধু তোর শালির সাথে প্রেম করে না, ঝোপে-ঝাপেও লইয়া যায়।’ এক নারীকে এক নেশাখোর কর্তৃক জড়িয়ে ধরার প্রস্তাব ও অশালীন অঙ্গভঙ্গি। নাটকের একাধিক দৃশ্যে নারীদের নিয়ে এভাবে অবমাননাকর সংলাপ ও অঙ্গভঙ্গি করা হয়েছে। ‘হি ইজ এ গ্রেট কিউরিয়াস (ছাপার অযোগ্য)।’ ‘আপনারা আমারে (ছাপার অযোগ্য) দিয়েও বুঝলেন না।’ এক নারীকে উদ্দেশ করে ডায়ালগ, ‘আমারে কি তোমার (ছাপার অযোগ্য) মনে হয়?’ ‘সে তো কিডনি বিক্রি কইরা দিছে। এরপর তো (ছাপার অযোগ্য) বিক্রি কইরা দিব।’ অশ্লীল ডায়ালগ। ‘আমার মতো শিক্ষিত লোকরে (ছাপার অযোগ্য) বানায়ে দিল।’ সবশেষে এক অভিনেতা প্যান্ট ওপরে তুলে যে ইঙ্গিত করেছেন সেটিও ছিলো চরম অশ্লীলতার বহিঃপ্রকাশ। নাটকটিতে জনবিরোধী কাজ করে কিডনি বিক্রির হাসপাতালের কার্যক্রমকে বলা হচ্ছে জনস্বার্থে আমরা।

নাটকের শেষে গোয়েন্দা বিভাগের প্রেস ব্রিফিং দেখিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে তাদের অপকর্মের জন্য পুলিশ এই ক্রিমিনালদের গ্রেফতার করেছে। অথচ ক্যাপশন দেওয়া হচ্ছে, ‘কি শিখলেন আপনার পাশের মানুষকে বলেন’। উত্তরটা যদি এভাবে কেউ দেয়, ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাকসিডেন্ট করে আহত মানুষটিকে এসে বলা হলো, ‘সরি’, ‘দুঃখিত’। দীর্ঘ ৫৪ মিনিট ধরে কিডনি বিক্রি করে অনেক জীবনকে পঙ্গু করে দিয়ে অশ্রাব্য ও অশ্লীল গালাগালি করে বাস্তবতাবিবর্জিত একটি নাটক উপহার দিয়ে ট্রেন্ডিংয়ে এক নম্বর হয়ে এই নাট্যদল অর্থ প্রাপ্তিতে খুশি হলেও, সব শ্রেণির দর্শক কি খুশি হয়েছে? তারা কী বার্তা পেয়েছে? সুতরাং পাশের মানুষকে বলতে হবে ‘কিডনি’ নাটকে যা দেখেছেন সব ভুলে যান, কারণ এসব ক্রাইম, নোংরা, অশ্লীল। এসবই ভিউ বাণিজ্যের জন্য। মিডিয়ার স্বাধীনতা মানে সমাজবিরুদ্ধ, দেশবিরুদ্ধ ও সংস্কৃতির পরিপন্থী অনুষ্ঠান নির্মাণ নয়। দর্শকদেরও এ ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সাইবার টিমকেও এসব ব্যাপারে আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর