শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

এখনো নজরকাড়া সেই রেখা

এখনো নজরকাড়া সেই রেখা

বলিউডের ডিভাখ্যাত অভিনেত্রী রেখার বয়স এখন ৬৮ বছর। কিন্তু বয়স তাঁকে ছুঁতে পারেনি। কারণ এ বয়সেও জনপ্রিয় ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদকন্যা হলেন তিনি। মানে ষাটের দশকে বড় পর্দায় আসা অভিনেত্রী রেখা তাঁর গ্লামার দিয়ে এ বয়সেও আবেদনের ঝড় তুলছেন। তাই তাঁকে বলিউডের চিরসবুজ আবেদনময়ী অভিনেত্রী বললে কোনোভাবেই ভুল হবে না। পর্দায় তাঁর আকর্ষণীয় উপস্থিতি আর রূপের মোহে বাঁধা পড়েনি এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য। তাঁর একঝলকের অপেক্ষায় থাকত সবাই। আবেদনময়ী রেখার জীবনের যত ঘটনা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

কে এই রেখা

রেখার আসল নাম ছিল ভানুরেখা গনেশন এবং তিনি দক্ষিণি অভিনেতা জেমিনি গনেশন এবং তেলেগু অভিনেত্রী পুষ্পাভালির কন্যাসন্তান। ভারতের চেন্নাইয়ে ১০ অক্টোবর ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। রেখার ছোটবেলা ছিল বিষাদে ভরা। ছেলেবেলায় রেখার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন রেখার বাবা। শুধু তাই নয়, রেখা যে তারই ঔরসজাত সন্তান তাও মেনে নেননি। তবে এর পেছনে কারণ হিসেবে দেখা হয় যে, রেখার মা-বাবার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় অভিনয়ে এসেছিলেন রেখা।

 

বিমানবালা হতে চেয়েছিলেন

রেখার দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর প্রবল ইচ্ছা ছিল ছোটবেলা থেকেই। তাই বিমানবালা হতে চেয়েছিলেন, অভিনেত্রী নন। আর এ ইচ্ছা থেকেই বিমানবালার চাকরির জন্য চেষ্টা করলে অল্প বয়সের কারণে বাদ পড়ে যান।

 

পরে হতে চান নান

রেখার জীবনে এমন একপর্যায় আসে যখন রেখা নান হতে চেয়েছিলেন। মূলত আইরিশ নান স্কুলে পড়াশোনার কারণে তাঁর মনে এমন ভাবনার উদয় হয়। শেষ পর্যন্ত নানও হতে পারলেন না তিনি।

 

আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন

চরম হতাশায় একসময় আত্মহত্যা করতে যান রেখা। এ হতাশার কারণ তাঁর গায়ের রং ছিল কালো। একদিকে মা-বাবার অনাদর, অন্যদিকে অভাবের সংসার, তার ওপর তাঁর গায়ের রং কালো বলে কারও মন আকৃষ্ট করতে পারছিলেন না তিনি। ফলে সিদ্ধান্ত নেন এ হতাশার জীবন আত্মহত্যার মাধ্যমেই সাঙ্গ করবেন। কিন্তু তাঁর সৎ বোনেরা তাঁকে খুব ভালোবাসত। তারাই তাঁকে সাহস জুগিয়ে এবং বুঝিয়ে সেই পথ থেকে ফেরায়।

 

অভিনয়ে হাতেখড়ি

১৯৬৬ সালে ‘রাঙ্গোলা রত্নাম’ নামে একটি তেলেগু ছবির মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁর চলচ্চিত্র জীবন শুরু। নায়িকা হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু ১৯৬৯ সালে। কান্নাডা ফিল্ম অপারেশন ‘জ্যাকপট নাল্লি সিআইডি-৯৯৯’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। ১৯৭০ সালে ‘সাওয়ান ভাদন’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে তিনি প্রথম নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন।

 

হিন্দি ভাষায় অদক্ষতা

হিন্দিতে খুব একটা ভালো ছিলেন না রেখা। ক্যারিয়ারের প্রথম ১০ বছর তাই অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তাঁকে। অনেক ছবি থেকে এ কারণে বাদও পড়েছেন তিনি।

 

গানেও পারদর্শী

অভিনয়ের পাশাপাশি রেখা খুব সুন্দর গানও করেন। ‘খুবসুরত’ সিনেমার গানে চমৎকার প্লেব্যাক করেন তিনি। তবে অভিনয়ে বেশি ব্যস্ততা আর অভিনয়কে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসে ফেলায় গানের প্রতি তাঁর দুর্বলতা কমে যায়।

 

যে কষ্ট ভুলতে পারেননি

রেখার জীবনে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেছে যা আজও ভুলতে পারেননি রেখা। বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর। অভিনয়ে আসার পরই যৌন লালসার শিকার হয়েছিলেন অভিনেত্রী। কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় জোর করে চুমু খেয়েছিলেন অভিনেত্রীকে। ‘আনজানা সফর’-এর শুটিং চলাকালে ঘটনাটি ঘটে। হঠাৎ করে তাঁকে জড়িয়ে ধরে গভীর চুম্বন করেছিলেন অভিনেতা। চলচ্চিত্রে নবাগত বলে ভয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি। এ কষ্ট দীর্ঘ বছর পরও ভোগায় তাঁকে।

 

১১ পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক

পুরুষকে আকৃষ্ট করতে রেখার জুড়ি মেলা ভার। বলি আইকনের ক্যারিশমার জাদুতেই মুগ্ধ আট থেকে অষ্টাদশী।

সত্তর থেকে নব্বই-অসংখ্য নায়কের বিপরীতে অভিনয় করে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন রেখা। অক্ষয় কুমার আর সালমান খানও রয়েছেন সেই তালিকায়। জানা যায়, একজন নয়, ১১ জনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন রেখা। প্রথম জীবনে মেহবুব খানের ছেলে সাজিদ খানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান রেখা। সাজিদ খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নভিন নিশ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় রেখার। ‘শাওন ভাদো’ ছবির সেটেই নাকি নভিনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন রেখা। কিন্তু বিবাহিত নভিনের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

‘আনজানা সফর’ ছবির সময় নাকি বিশ্বজিতের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়ান রেখা। সেই সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি বেশি দিন। একসময় বলিউডে প্লেবয় হিসেবে খ্যাত জিতেন্দ্রের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়ান। তাঁদের রসায়নও বেশি দিন টেকেনি। এরপর অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহার প্রেমে পড়েন রেখা। যদিও সেই সম্পর্কও টেকেনি বেশি দিন। এরপর বিনোদ মেহরার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। বিনোদের মায়ের জন্য সেই সম্পর্কও ভেঙে যায়। এরপর দেব আনন্দের ভাইপো যশ কোহলির সঙ্গেও রেখা সম্পর্কে জড়ান বলে শোনা যায়। যশের সঙ্গে রেখার বিয়ের গুঞ্জনও রয়েছে। নানা কারণে সে বিয়ে ভেঙে আলাদা হয়ে যান রেখা। এরপর কিরণ কুমারের সঙ্গেও রেখার সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। তারপর অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে রেখা সম্পর্কে জড়ান। বলিউডে বরারবরই এই জুটি প্রেমের অনন্য যুগল হিসেবে পরিচিত ও সমাদৃত।

 

বলিউডের একমাত্রডিভা

একসময় দক্ষ অভিনয়, মনকাড়া সৌন্দর্য, আকর্ষণীয় ফিগার আর চির আবেদনময়ী আমেজ নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারার কারণে বলিউডের একমাত্র ডিভা উপাধি লাভ করেন তিনি।

 

৪০ বছরে ১৮০ ছবি

৪০ বছরেরও বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ারে ১৮০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছবি হলো- ‘আলাপ’, ‘ঈমান ধরম’, ‘গঙ্গা কি সুগন্ধ’, ‘সোহাগ’, ‘রাম বলরাম’, ‘খুবসুরত’, ‘বসিরা’, ‘উৎসব’, ‘খুন ভারি মাং’, ‘ইজাজাত’, ‘কামসূত্র’, ‘জুবায়দা’, ‘সিলসিলা’, ‘মুকাদ্দর কা সিকান্দর’, ‘ঘর’ ইত্যাদি।

 

যত সম্মাননা

দক্ষ অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন তিনবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। এবং ১৯৮২ সালে ‘উমরাও জান’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কারও জেতেন তিনি।

 

৬৮ বছরে ভোগের কভারে

রেখার বয়স এখন ৬৮ বছর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে এসে প্রথমবার ভোগ ম্যাগাজিনের কভারগার্ল হলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী। ৬৮ বছর বয়সে ভোগ অ্যারাবিয়ায় রাজকীয়বেশে কভারগার্ল হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রেখা। ভোগ ম্যাগাজিনে নানারূপে ফ্রেমবন্দি হয়েছেন তিনি। একটি ছবিতে রেখার মাথায় জরির কাজ করা টুপিসহ সোনালি জরি এবং ছোট পাথরের কাজ করা পোশাকে দেখা যায় তাঁকে। উইংগড লাইনার, মেরুন লিপস্টিকের সঙ্গে খোঁপা, জড়োয়ার গয়নায় নজর কেড়েছেন তিনি। আরেকটি ছবিতে তাঁকে ইজিপশিয়ান রানির বেশে দেখা যায়। তাঁর মাথায় ময়ূরের পেখমের মতো মুকুট, কানে পেল্লাই সাইজের একটি দুল। পরনে মুকুটের সঙ্গে ম্যাচ করা সোনালি পোশাক, যেখানে নীল- সোনালি জরির কাজ করা কলার এবং হাতা দেখা যাচ্ছে। আরব দেশের রানির বেশেও ধরা দিয়েছেন রেখা। এ ছবিতে তাঁর মাথায় টিকলি, ফুলস্লিভ ব্লাউজের সঙ্গে সোনালি রঙের শাড়িতে যেন তাঁর রূপ আরও ফেটে পড়ছে। পায়ে পড়েছেন স্টিলেটো। এ ছবি দেখে কে বলবে তাঁর বয়স ৬৮ বছর? সাদা আনারকলি, নাগরা জুতার সঙ্গে ম্যাচিং গয়না পরিহিত অবস্থায় আরেকটি ছবিতে ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন রেখা। তবে অন্য একটি ছবিতে পশ্চিমা পোশাকে চমক দেখিয়েছেন রেখা। সাদা কলার এবং হাতাওয়ালা কালো গাউনে নজর কেড়েছেন তিনি। এ লুকে তাঁর মাথায় রয়েছে ব্রিটিশ টুপি। রেখার সাজসজ্জার পেছনের কারিগর হলেন মনীশ মালহোত্রা। তিনি বলেন, এই ফটোশুটের জন্য তাঁর স্টাইলিং এবং ডিজাইনিংয়ের অভিজ্ঞতা আমার কাছে স্মরণীয়। এই কাজটি করতে গিয়ে তাঁর উচ্ছ্বাস আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে। কস্টিউম ফিটিংস নিয়ে তাঁর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করেছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর