শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সোফিয়া লরেনের সংগ্রামী জীবন

সোফিয়া লরেনের সংগ্রামী জীবন

জীবনযুদ্ধে জয়ী এক অভিনেত্রীর নাম ‘সোফিয়া লরেন’। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিশ্বসেরা অভিনেত্রীর খেতাব অর্জন করে নেন তিনি। একেবারে শূন্য থেকে জীবন শুরু করতে হয়েছিল তাঁকে। তারপরও নিজের  মনোবল, মেধা ও সৌন্দর্যের কারণে অতিদ্রুত বিশ্বের মানুষের ভালোবাসা অর্জন করে নেন তিনি। সংগ্রামী এই অভিনেত্রীর কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

জন্মের স্বীকৃতি মেলেনি

সোফিয়া লরেন। দুনিয়া কাঁপানো এক হলিউড অভিনেত্রী। জন্মের পর বাবা যাঁকে সন্তানের স্বীকৃতি দেননি। বাবার পরিচয় ছাড়া বড় হয়ে এই মেয়ে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী হয়েছেন। সোফিয়ার জন্মের আগে তাঁর মা রোমিলডা একজন পুরুষকে ভালোবাসতেন। সেই প্রেমিকের সঙ্গে মিলনের ফলেই রোমিলডা গর্ভবতী হন। লোকটি তাকে বিয়ে করতে আপত্তি জানায়। ওই সন্তানের সামাজিক স্বীকৃতি ছিল না। দশের চোখে ছিল অবৈধ। সেই শিশুকন্যাই এক দিন বড় হয়ে বিখ্যাত অভিনেত্রী হলেন।

 

চরম দারিদ্র্যতায় বেড়ে ওঠা

১৯৩৪ সালে রোমের একটি হাসপাতালের দাতব্য ওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করেন সোফিয়া। মা রোমিলডাকে বিয়ে করতে আগেই অস্বীকার করেছিলেন বাবা রিকার্ডো। তাই ২০ সেপ্টেম্বর জন্মের কদিন পরই, তাঁদের আশ্রয় নিতে হয়েছিল ইতালির একটি বস্তিতে। তখন তাঁর নাম ছিল সোফিয়া সাইক্লোন। সে সময় চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটে মা এবং মেয়ের। আর সেই অবস্থা অসহনীয় হয়ে দাঁড়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে। সোফিয়ার কথায়, ‘বেশির ভাগ সময়ই না খেয়ে কাটাতে হতো আমাদের। মা আর ছোট বোন মারিয়ার মুখে সব সময়ই থাকত বিষণ্ণতার ছায়া।’

 

অবশেষে সুদিনের দেখা

একসময় সুখের দিন ফিরে সোফিয়ার জীবনে। ১৯৪৮ সাল, সোফিয়ার তখন ১৪ বছর বয়স। সে সময় ইতালির এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লেখান তিনি। আপাদমস্তক সুন্দরী সোফিয়া সহজেই পৌঁছে যান ফাইনালিস্টদের তালিকায়। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। মজার বিষয়, ওই প্রতিযোগিতায়ই সোফিয়া দৃষ্টি কাড়েন ৩৭ বছর বয়সী চলচ্চিত্র পরিচালক কার্লো পন্টির। তিনিই সোফিয়াকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। পরবর্তীতে সেই পন্টিকেই বিয়ে করেন সোফিয়া।

 

সাইক্লোন থেকে লরেন

চলচ্চিত্রে অভিষেকের পরই সোফিয়া সাইক্লোন থেকে তিনি সোফিয়া লরেন হয়ে যান। ১৯৫২ সালে ‘লা ফ্যাভোরিটা’ এবং ১৯৫৩ সালে ‘এইডা’ নামের ছবিতে অভিনয়ের পরপরই সোফিয়ার সামনে হলিউডের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়। ১৯৫৭ সালে প্রথম আমেরিকান ছবি ‘বয় ইন আ ডলফিন’-এ অভিনয় করেন তিনি। সে সময়কার সুপারস্টার ক্যারি গ্রান্টের সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন ‘দ্য প্রাইড অ্যান্ড দ্য প্যাশন’ ও ‘হাউসবোট’ নামের ছবিতে আর ইতালীয় ছবি ‘লা সাইওসায়ারা’য় অভিনয় করে ১৯৬০ সালে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন লরেন।

 

মাকে নিয়ে ছবি নির্মাণ

সোফিয়া লরেনের মায়ের জীবন নিয়ে হলিউডে একটি ছবি  তৈরি হয়। ‘রোমিলডা’ নামের ওই ছবিতে সোফিয়া মা ও মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করে সাড়া জাগিয়েছিলেন।

 

অভিনয়ে এবং যত অর্জন

১৯৩৪ সালে ইতালিতে জন্মগ্রহণ করা সোফিয়া লরেন মাত্র ১৪ বছর বয়সে মডেল হিসেবে বিনোদন জগতে যাত্রা শুরু করেন। চলচ্চিত্র প্রযোজক কার্লো পন্টির সঙ্গে পরিচয়ের পর অভিনয় জগতে পা রাখেন সোফিয়া। ১৫ বছর বয়সে ৩৭ বছর বয়সী পন্টিকে বিয়ে করেন লরেন। ১৯৫০ সালে মুক্তি পায় সোফিয়া লরেন অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আই অ্যাম ক্যাপাটাজ’। পরে ‘সানফ্লাওয়ার’, ‘হাউসবোট’, ‘ইয়েস্টারডে’, ‘টুডে অ্যান্ড টুমরো’, ‘ম্যারেজ ইতালিয়ান স্টাইল’, ‘এল সিআইডি’, ‘দ্য ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’, ‘ম্যান অব লা মাঞ্চা’, ‘দ্য কাসান্ড্রা ক্রসিং’, ‘এ স্পেশাল ডে’সহ অসংখ্য ছবি উপহার দিয়েছেন গুণী এই অভিনেত্রী। ‘ওম্যান অব দ্য রিভার’ ছবির মাধ্যমেই সোফিয়া লরেন ১৯৫৫ সালে ইতালির সেরা অভিনেত্রীর সম্মান লাভ করেছিলেন। ‘আফ্রিকা আন্ডার দ্য সি’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক খ্যাতি পেয়েছিলেন। রানি এলিজাবেথ এ ছবিটি দেখে এতই মুগ্ধ হলেন যে, তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন।

১৯৬১ সালে বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ভেট্টোরিও ডি সিকা পরিচালিত ‘টু ওমেন’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সোফিয়া লরেন। এ ছবির জন্য অস্কার ঝুলিতে ভরেন সোফিয়া। তাঁর অস্কার জয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১২ সালে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দ্য একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস। অনুষ্ঠানটি থেকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় এই বিখ্যাত অভিনয়শিল্পীকে। ১৯৯৪ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর চলচ্চিত্র কর্মের জন্য তাঁকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। ১৯৮০ সালে এই অভিনেত্রীর জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছিল ‘সোফিয়া লরেন : হার ওন স্টোরি’। ২০০৭ সালে স্বামী কার্লো পন্টিকে হারান এই অভিনেত্রী। তাঁর দুই ছেলে কার্লো পন্টি জুনিয়র ও অ্যাডৌরা পন্টি। সোফিয়া লরেন সর্বশেষ অভিনয় করেছিলেন ২০০৯ সালে, ‘নাইন’ ছবিতে।

 

জনপ্রিতার তুঙ্গে এবং অবসর

ষাট ও সত্তর দশকে সোফিয়া লরেন ছিলেন বিশ্বের জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের অন্যতম। ইউরোপ ও আমেরিকায় তিনি সমান তালে অভিনয় করেন পল নিউম্যান, মার্লন ব্র্যান্ডো, গ্রেগরি পেক, চার্লটন হিউসটনদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে। অস্কার তো বটেই, জিতে নেন পাঁচটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য হলিউডি ছবির মধ্যে ‘এল সিড’, ‘দ্য ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’, ‘অ্যারাবেস্ক’, ‘ম্যান অব লা মাঞ্চা’ এবং ‘দ্য কাসান্ড্রা ক্রসিং’ অন্যতম। আশির দশকের শুরু থেকেই চলচ্চিত্রে অভিনয় কমিয়ে দেন সোফিয়া। সময় কাটান স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে।

 

হার ওন স্টোরি

১৯৮০ সালে সোফিয়ার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে   তৈরি হয় চলচ্চিত্র- ‘সোফিয়া লরেন : হার ওন স্টোরি’। এখানেই শেষ নয়। ১৯৯৪ সালে প্রায় ৬০ বছর বয়সে সোফিয়া অভিনয় জগতে ফিরে আসেন। ‘প্রিট-আ-পোর্টার’ নামের ছবিতে বক্স অফিস কাঁপিয়ে আবারও দশর্কদের মুগ্ধ করেন তিনি। এরপর বিচ্ছিন্ন কিছু ছবিতে অভিনয় করলেও মূলত বিরতিতে চলে যান সোফিয়া।

সর্বশেষ খবর