শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

‘স্বর্ণকেশী বোম্বশেল’ সেই মনরো

‘স্বর্ণকেশী বোম্বশেল’ সেই মনরো

মার্কিন অভিনেত্রী, মডেল এবং গায়ক মেরিলিন মনরো। তিনি তাঁর সময়ের একজন প্রধান যৌনতার প্রতীক হয়ে ওঠেন। নগ্ন ছবি তুলে একসময় কেলেঙ্কারির মুখে পড়েছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কেও জড়িয়েছিলেন এই স্বর্ণকেশী। মনরোর অকাল মৃত্যু আজও রহস্যঘেরা হয়ে আছে। এ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

কে এই মনরো

মেরিলিন মনরো ছিলেন মার্কিন অভিনেত্রী, মডেল এবং গায়ক। যিনি কৌতুকপূর্ণ ‘স্বর্ণকেশী বোম্বশেল’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর সময়ের একজন প্রধান যৌনতার প্রতীক হয়ে ওঠেন এবং ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাণিজ্যিকভাবে সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। মাত্র এক দশকে শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রীদের একজন ছিলেন মনরো। তাঁর চলচ্চিত্রগুলো ১৯৬২ সালে তাঁর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০১৮ সালে ২ বিলিয়ন সমমূল্যের) আয় করেছিল। অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় পর তিনি একজন জনপ্রিয় সংস্কৃতি আইকন হিসেবে এখন পর্যন্ত বিশ্ববাসীর হৃদয় দখল করে রেখেছেন।

 

শৈশব কাটে শিশুপল্লীতে

মনরোর অন্য নাম নর্মা জিন মর্টেনসন ও নর্মা জিন বেকার। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ১৯২৬ সালের পয়লা জুন তাঁর জন্ম। লস অ্যাঞ্জেলেসেই বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর বাবা গ্লাডিস কনসলিডেটেড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ফিল্ম নেগেটিভ কাটার হিসেবে কাজ করতেন। শৈশবের বেশির ভাগ সময় শিশুপল্লীতে কাটিয়েছেন মনরো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে একটি কারখানায় কাজ করছিলেন।

 

বিয়ে

১৯৪২ সালের ১৯ জুন ১৬তম জন্মদিনে এয়ার ক্রাফট প্লান্টের একজন চাকরিজীবী ‘জেমস জিম ডগার্থিকে’ বিয়ে করেন। তখন মনরো স্কুল থেকে ড্রপ আউট হয়ে গৃহিণী হয়ে যান। পরে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, বিয়ের ফলে অখুশিও হয়নি আবার সুখীও হয়নি তাঁর জীবন। তিনি বলেছিলেন, আমার স্বামী এবং আমি খুব কমই একে অপরের সঙ্গে কথা বলতাম। এটা আমরা একে অপরের ওপর রাগান্বিত ছিলাম সে জন্য নয়। আমাদের কথা বলার কিছু ছিল না। ফলে আমি অস্বস্তিতে ছিলাম।

 

অভিনয় ও প্রযোজনা

মনরোর অভিনয়জীবন শুরু হয় মডেলিং দিয়ে ১৯৪৬ সালে। এখানেই মনরো বাদামি বা ব্রাউনিস কালার চুলে প্লাটিনাম হোয়াইটের এক আভা আনেন যা তাঁর ট্রেডমার্ক বলা চলে। আর তাঁর আসল নামের পরিবর্তে নতুন নাম হয় মেরিলিন মনরো। ১৯৪৫ মনরো ফার্স্ট মোশন পিকচার ইউনিটের একজন আলোকচিত্রির সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং একজন সফল পিন-আপ মডেল হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। যা পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে তাঁকে টুয়েন্টি সেঞ্চুরি ফক্স এবং কলাম্বিয়া পিকচার্স চুক্তিবদ্ধ করে এবং দুটি মুভিতে তাঁকে প্রথমবারের মতো দেখা যায়। ১৯৪৯ সালে মনরো আবার মডেলিংয়ে ফিরেন। ১৯৫০ সালে ফক্সের সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং ‘অল অ্যাবাউট ইভ’ নামে চলচ্চিত্রে প্রথম নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায় বিখ্যাত ছবি ‘দ্য সেভেন ইয়ার ইচ’। পরের দুই বছর তিনি ‘অ্যাজ ইয়াং অ্যাজ ইউ ফিল’ এবং ‘মাংকি বিজনেস’সহ বেশ কয়েকটি হাস্যরসধর্মী চরিত্রে এবং ‘ক্লাস বাই নাইট’ এবং ‘ডোন্ট বদার টু নক’ নাট্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তাঁর কর্মজীবনে বৃহত্তম বক্স অফিস সাফল্য, ‘দ্য সেভেন ইয়ার ইচ’ (১৯৫৫) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে পেয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে নিজের চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ‘সাম লাইক ইট হট’ (১৯৫৯) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব জিতেন। তাঁর সর্বশেষ সমাপ্ত চলচ্চিত্র নাট্যধর্মী ‘দ্য মিসফিটস’ ১৯৬১ সালে মুক্তি পায়।

 

নগ্ন হয়ে কেলেঙ্কারির মুখে

মনরো নগ্ন ছবি তুলে কেলেঙ্কারির মুখে পড়েছিলেন। তারকা হওয়ার আগে তিনি নগ্ন আলোকচিত্রের মডেল হিসেবে কাজ করেছিলেন। এতে তাঁর চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শক আগ্রহ বেড়ে যায়। ১৯৫৩ সালে হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা হিসেবে মনরো ‘নোয়া নায়াগ্রা’ চলচ্চিত্রে মূল চরিত্রে উপস্থিত হন, যা মূলত তাঁর যৌন আবেদনকে কেন্দ্র করে তারকা ভাবমূর্তি ‘মূক স্বর্ণকেশী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

 

সমকামী ও বিয়েবিচ্ছেদ

মনরো ৩৬ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। তাঁর প্রেমিকদের তালিকায় ছিলেন ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা, জেমস জিম ডগার্থি, জন এফ কেনেডি প্রমুখ। তিনি মাদকে আসক্তি, হতাশা এবং উদ্বেগের সঙ্গে জীবনযাপন করেছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত বেসবল তারকা জো ডিমাগিও এবং নাট্যকার আর্থার মিলারের সঙ্গে তাঁর বিয়ের বিষয় আলোচিত হয়। মেরিলিন সমকামী ছিলেন বলে খবর রয়েছে। মেরিলিন বলেছিলেন, বান্ধবী নাতাশার সঙ্গে তাঁর যৌন সম্পর্ক ছিল।

 

মনরো-কেনেডি প্রেম পর্ব

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সঙ্গে ছিল মনরোর প্রেমের সম্পর্কের চেয়েও বেশি কিছু। আমেরিকায় প্রকাশিত ‘দিস ফিউ প্রেসাশ ডেইজ : দ্য ফাইনাল ইয়ার অব জ্যাক উইথ জ্যাকি’ বইটিতে বলা হয়, মনরো মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, প্রেসিডেন্ট তাঁর স্ত্রীকে ছেড়ে তাঁকে বিয়ে করবেন। এ কারণে তিনি তাঁর বন্ধু জেনি কারমেনকে বলেও বেড়াতেন, ‘তুমি কি আমাকে ফার্স্ট লেডি হিসেবে ভাবতে পার না?’ ওই বইয়ে দাবি করা হয়, কেনেডি পর্দার অন্তরালে কমিউনিস্টদের সঙ্গে কাজ করছিলেন মেরিলিন মনরোকে হত্যা করার জন্য। পরে মনরোর হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল।

 

হত্যা নাকি আত্মহত্যা?

১৯৬২ সালের ৪ আগস্ট, লস অ্যাঞ্জেলেসে মনরো তাঁর নিজ বাড়ি ব্রেন্টউডে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন করে আত্মহত্যা করেন বলে খবর প্রচলিত আছে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৬। প্রাথমিকভাবে আদালত তাঁর মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করলেও তাঁর মৃত্যুর পরবর্তী দশকগুলোতে বেশ কয়েকটি লেখায় এই মৃত্যুকে ষড়যন্ত্র বলে প্রকাশ হয়েছিল। এ মৃত্যুর সঙ্গে কেনেডির সংশ্লিষ্টতার কথাও প্রচার হয়। তবে এতকাল পরে এসেও মনরোর মৃত্যু শুধুই রহস্য হয়ে আছে। জট আর খুলেনি।

 

সর্বশেষ খবর