বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ফের ববিতা

আলাউদ্দীন মাজিদ

আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ফের ববিতা

আবারও আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা। যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস সিটি থেকে এই প্রখ্যাত অভিনেত্রীকে দেওয়া হবে সংবর্ধনা ও সম্মাননা। পাশাপাশি ববিতার সম্মানে অনুষ্ঠিত হবে ববিতা অভিনীত বিখ্যাত সব চলচ্চিত্র নিয়ে ‘ডালাস বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব’। এই উৎসবের উদ্বোধন করানো হবে স্বয়ং ববিতাকে দিয়েই। উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হবে ববিতা অভিনীত ও আমজাদ হোসেন পরিচালিত ছবি ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’। এ ছাড়া এই উৎসবে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ববিতা অভিনীত ছবি ‘অশনি সংকেত’ও প্রদর্শিত হবে।

উল্লেখ্য, এই প্রথম ডালাসে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাও আবার ববিতাকেই ঘিরে। আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘সৃজনের হাট’ এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ডা. তারেক ইয়াসিন উজ্জ্বল জানান, ডালাসের এই ষষ্ঠ চলচ্চিত্র উৎসব তিন দিনব্যাপী হবে। আগামী ৪ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ৬ আগস্ট পর্যন্ত। তিনি বলেন, এই ডালাস বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব উত্তর আমেরিকার (আমেরিকা ও কানাডা) প্রথম ও সবচেয়ে বড় বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব এবং প্রখ্যাত অভিনেত্রী ববিতার সম্মানে এবারই প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। ডালাস অ্যাঞ্জেলিকা ফিল্ম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে এই প্রদর্শনী। বর্তমানে কানাডায় অবস্থানরত অভিনেত্রী ববিতা এ প্রসঙ্গে তাঁর অনুভূতি জানাতে গিয়ে মুঠোফোনে বলেন, ‘ডালাস সিটি থেকে আমাকে এই সম্মান জানানোর উদ্যোগ নেওয়ায় সতিই আমি অভিভূত। এই সম্মান আমার দেশ, জাতি ও পরিবারের। বিদেশের মাটি থেকে দেশের জন্য আবারও এমন আন্তর্জাতিক সম্মান বয়ে আনতে পারছি বলে নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করছি। তিনি বলেন, তখন দেশ স্বাধীন হয়নি। এ দেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান। এখানে তখন আবদুল জব্বার খান, জহির রায়হান, এহতেশাম, মুস্তাফিজ, মহিউদ্দিন, সালাউদ্দীন, সুভাষ দত্ত, খান আতা, আমজাদ হোসেন, আজিজুর রহমান মিতা, কামাল আহমেদ, কাজী জহির প্রমুখের মতো গুণী নির্মাতাদের হাতে শিল্পমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ হতো। সেগুলো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ পেত না। আমন্ত্রণ জানানো হতো পশ্চিম পাকিস্তানের ধুমধাড়াক্কা বাণিজ্যিক ছবিগুলোকে। আমার ছোট্ট মনে বাংলা ছবির প্রতি এই অবজ্ঞা খুব কষ্ট দিত। একসময় দেশ স্বাধীন হলো। এই বন্ধ্যত্ব কাটল। এ দেশের ছবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসার ঝড় তুলতে শুরু করল। পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘অশনি সংকেত’ ছবিতে ‘অনঙ্গ বউ’ চরিত্রে আমাকে কাস্ট করলেন। ছবিটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঝড় তুলল। ছবিটি নিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করলাম। বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে ছুটে গেলাম বুড়িগঙ্গা থেকে ভলগা হয়ে বিশ্বের আনাচে-কানাচে। সবাইকে জানালাম ববিতা বাংলাদেশের মেয়ে, এসেছি বাংলা ছবির বিশ্বজয়ে। সবাই সাদরে গ্রহণ করল এই দেশের ছবি আর ববিতাকে। রাশিয়ায় তখন বলিউড অভিনেতা রাজকাপুরের জয়জয়কার। বিমানবন্দর থেকে সব জায়গায় তাঁর ছবি ব্লোআপ হতো। একসময় অবাক চোখে দেখলাম রাজকাপুরের ছবির পাশে ববিতার ছবি স্থান করে নিয়েছে। মানে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের সম্মানজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশ্বের জনপ্রিয় পত্রিকাগুলো গুরুত্ব দিয়ে আর্টিকেল তৈরি করল সত্যজিৎ রায়ের নায়িকা ববিতাকে নিয়ে। বিশ্বের প্রধান চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে আমি হয়ে গেলাম ‘ডার্লিং অব দ্য ফেস্টিভেল’। ফেস্টিভেলের ওপেনিং আর ক্লোজিং হতো আমার হাতে। পৃথিবীর খ্যাতনামা ইউনিভার্সিটিগুলোতে বক্তব্য রাখতে হয়েছে আমাকে। এর জন্য আমি আমার পরিবার, দেশ, জাতি আর চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।

প্রসঙ্গত, ববিতা একাধারে একজন সফল অভিনেত্রী ও প্রযোজক। চলচ্চিত্রকার হিসেবে নিজেকে শুধু দেশে সীমাবদ্ধ রাখেননি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজের ভূমিকা রেখে দেশের জন্য বয়ে এনেছেন অবারিত সম্মান। মানসম্মত কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, জহির রায়হান পদক, বাচসাস পুরস্কার, বাংলদেশ প্রতিদিন পত্রিকা থেকে আজীবন সম্মাননাসহ একাধিকবার অসংখ্য দেশি-বিদেশি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৬-তে আজীবন সম্মাননা। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশি বার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি ২৫০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৬৮ সালে বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হানের উৎসাহে ‘সংসার’ চলচ্চিত্রে ববিতার অভিনয় শুরু। এ ছাড়া সামাজিক কর্মকান্ডেও রয়েছে তাঁর বিশ্বজোড়া খ্যাতি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ব শিশু অধিকারবিষয়ক সংস্থা ডিসিআইর শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ২০১২ সাল থেকে তিনি দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে নিরলস কাজ করছেন। পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান নির্মাতা সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অশনি সংকেত (১৯৭৩) চলচ্চিত্রে ‘অনঙ্গ বউ’ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেন। ববিতার একমাত্র ছেলে অনিক কানাডায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স শেষ করে সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন। গত রমজানের ঈদের পর ববিতা কানাডায় তাঁর প্রবাসী পুত্র ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী তিন ভাইয়ের কাছে অবসর সময় কাটাতে গেছেন। ৩০ জুলাই এই প্রখ্যাত অভিনেত্রীর জন্মদিন। বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার পরিবারের পক্ষ থেকে ববিতার প্রতি রইল অকৃত্রিম শুভেচ্ছা।

 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায়

কানাডায় মাছ শিকারের আনন্দে...


যুক্তরাষ্ট্রে তিন ভাইয়ের সঙ্গে...


কানাডায় আদরের পুত্র অনিকের সঙ্গে...


কানাডায় প্রকৃতিপ্রেমী ববিতা ফুল বাগানে

সর্বশেষ খবর