সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাণী বিনোদনে অনবদ্য ইত্যাদি

শোবিজ প্রতিবেদক

বাণী বিনোদনে অনবদ্য ইত্যাদি

মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ইদ্রাকপুর কেল্লাকে দর্শক ইত্যাদিতে অন্য রকমভাবে দেখেছেন। গত ২৯ জুলাই প্রচারিত ইত্যাদিতে কেল্লার এই ভিন্নরূপ দেখে অনেকের মতো মুন্সীগঞ্জবাসীও চমকে গেছেন। কারণ, কেল্লার বিশাল ফটকের সামনে ছোট একটি পুকুরের মাঝখানে করা হয়েছে ইত্যাদির মঞ্চ। এবারের ইত্যাদিতে অধিকাংশ নাট্যাংশই ছিল মিডিয়াকেন্দ্রিক। আর প্রতিটিতেই ছিল সমাজ সচেতনতা। টেলিভিশন, ইউটিউব ও টিভিতে প্রচারিত নাটক, গান, সিনেমার অশোভন দৃশ্য ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে ছিল তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ। ইত্যাদির এই ক্ষোভ অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। কারণ এক শ্রেণির নির্মাতা ও শিল্পীর কারণে সুস্থ দর্শকও অসুস্থ হতে চলেছেন। পরিবার নিয়ে দেখার অযোগ্য এসব দৃশ্য সংযোজনের সঙ্গে শিল্পচর্চা নয়, ব্যবসার সম্পর্ক রয়েছে। আপত্তিকর এসব দৃশ্য টিভি নাটকে, গানে, ওটিটিতে এমনকি নতুন যুগের নতুন ধারার সিনেমাগুলোতেও দেখা যায়। গালিই যেন একটি নতুন ধারা। মনে হয় অশ্লীলতাকে অনেকেই শিল্পের অলংকার হিসেবে চিন্তা করছেন। এসব ব্যাপারে নেট দুনিয়ায় সমালোচনা হলেও আমাদের টকশোগুলোতে বিদগ্ধজনের কিংবা সুধীজনের এদিকে নজর নেই। ইত্যাদি সবসময়ই এসব আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আজকালকার গান সম্পর্কে একটি স্কিডে বলা হয়েছে, ‘এখন যে যত অশ্লীল কথায়, বেসুরোভাবে গাইতে পারবেন, ফিউশনের নামে কনফিউশন করতে পারবেন, মোদ্দাকথা যে যত নেচেগেয়ে উদ্ভট, অশোভন ও অসভ্যের মতো সংগীত পরিবেশন করতে পারবেন, সেই হিট।’ একটি অফিসে বাল্যশিক্ষায় পঠিত আদর্শলিপির নীতিবাক্যগুলো মনে করিয়ে দিয়ে শপথবাক্য পাঠ করানোর বিষয়টিতে আমাদের অফিস-আদালতের বাস্তব চিত্রটি তুলে ধরা হয়েছে। কৃষকদের নিয়ে এবারের ইত্যাদিতে একটি অসাধারণ পর্ব করা হয়েছে। নাটিকার একটি অংশে কৃষকের চরিত্র বলছে, ‘আমার পরিচয় আমি কৃষক। আমি গর্ব কইরাই এই পরিচয়টা বলি। আমি আপনাগো খাওয়াই ঐটাই আমার ডিগ্রি।’ এবারের দর্শক পর্বটি ছিল জমজমাট। মুন্সীগঞ্জের বেশ কজন শিল্পীকে এবারের ইত্যাদিতে হাজির করেছেন হানিফ সংকেত। দর্শক পর্বে ছিলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ ও এই প্রজন্মের আরেক জনপ্রিয় শিল্পী বালাম। দর্শকদের দিয়ে ফেরদৌস ওয়াহিদের প্রয়াত চার বন্ধু ৭০/৮০ দশকের জনপ্রিয় শিল্পী আজম খান, ফিরোজ সাঁই, ফকির আলমগীর, পিলু মমতাজের গান গাওয়ার আইডিয়াটি চমৎকার। অনেকেই নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন হয়েছেন। দর্শক নির্বাচনের অংশেও মুন্সীগঞ্জ সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা গেছে। ইত্যাদির দর্শক পর্বে দর্শকদের কম্পিউটার, গিফট বক্স ও বইয়ের পাশাপাশি গাছের চারাও দেওয়া হয়। দর্শকদের প্রশ্ন ইত্যাদির সেই চারাগুলোর বর্তমান অবস্থা কী? আর তাই ইত্যাদির ক্যামেরায় ২০০৩ ও ২০০৪ সালে প্রচারিত ইত্যাদির দর্শক পর্বে গাছ উপহার পাওয়া মুন্সীগঞ্জ ও সাভারের দুজন দর্শককে দেখানো হলো, যারা ২০ বছর আগে পাওয়া চারা গাছ দুটি নিজেরাই লাগিয়েছেন, যা এখন বিশাল বৃক্ষে রূপান্তরিত হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী টিনের ঘরের হাট নিয়ে প্রতিবেদনটি ছিল অত্যন্ত তথ্যবহুল ও দৃষ্টি সুখকর। মুন্সীগঞ্জের সন্তান হিসেবে এবার আমন্ত্রিত সংগীতশিল্পী ছিলেন তাহসান খান। কানে বাজছে হানিফ সংকেতের শেষ বাক্যটি, ‘আমাদের মধ্যে দ্রুত জেগে উঠুক সেই বোধ’। ধন্যবাদ হানিফ সংকেতকে আবারও একটি নান্দনিক ইত্যাদি উপহার দেওয়ার জন্য।

 

সর্বশেষ খবর