সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিশ্বব্যাপী উন্মাদনায় ‘জেলার’

৭৩ বছরেও অপ্রতিরোধ্য রজনীকান্ত

আলাউদ্দীন মাজিদ

৭৩ বছরেও অপ্রতিরোধ্য রজনীকান্ত

‘জেলার’ নিয়ে রজনীকান্ত, অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়া ও ছবির টিমের আনন্দ আয়োজন

ভারতের দক্ষিণী সিনেমার খ্যাতিমান তারকা ৭৩ বছর বয়সী অপ্রতিরোধ্য রজনীকান্তকে নিয়ে ভক্তদের উন্মাদনার শেষ নেই। রজনীকান্তের ‘জেলার’ মুক্তির প্রথম দিনই ভোর ৫টা থেকে দর্শকদের দীর্ঘ সারি। দুই বছর পর আবার বড় পর্দায় ফিরেছেন ভারতের দক্ষিণী সুপারস্টার রজনীকান্ত। ১০ আগস্ট মুক্তি পেয়েছে তাঁর ১৬৯তম সিনেমা ‘জেলার’। বিশ্বজুড়ে ৪ হাজার স্ক্রিনে মুক্তি পায় সিনেমাটি। এই ৪ হাজার স্ক্রিনের মধ্যে ৮০০টি শুধু তামিলনাড়ুর। তামিলে হলের সামনে সামনে চলছে উৎসব। মুক্তির আগেই একেকটা রেকর্ড গড়ছে রজনীকান্তর ‘জেলার’। এই ছবিটি ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া তামিল সিনেমার প্রি-বুকিংয়ের সব রেকর্ড ভেঙেছে। শুধু ভারত নয়, ‘জেলার’ সিনেমাটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে রজনীকান্তঝড়। মুক্তির দ্বিতীয় দিনেই বিশ্বব্যাপী আয় করে নিয়েছে ২০৪.১ কোটি রুপি। এটি সুপারস্টার রজনীকান্তর জন্য ১১তম চলচ্চিত্র, যা ১০০ কোটির ক্লাবে প্রবেশ করেছে।

জেলার মুক্তিতে দুই দিনের অফিস ছুটি : ‘জেলার’ মুক্তি উপলক্ষে দুই দিনের ছুটি দিয়েছে চেন্নাই-বেঙ্গালুরুর বেশির ভাগ অফিস। এর আগে রজনীকান্ত সবাইকে কথা দিয়েছিলেন এই সিনেমায় তিনি সেরা অ্যাকশন প্যাক বিনোদন দিতে চলেছেন।

আমেরিকায় ১ মিলিয়ন ডলারের অগ্রিম টিকিট : শ্রীধর পিল্লাই নামক এক ফিল্ম ট্র্যাকার জানিয়েছেন, আমেরিকায় ১ মিলিয়ন ডলারের প্রি-টিকিট বিক্রি হয়েছে। সাম্প্রতিককালের অতীতে ভারতীয় সিনেমার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা আর ঘটেনি। ২০০ কোটি রুপির বাজেটে জেলার নির্মাণ করেছেন নেলসন দীলিপ কুমার। 

‘জেলার’ দেখতে ভারতে জাপানি দম্পতি : জাপানের ওসাকার এক দম্পতি ভারতে উড়ে এসেছে কেবল জেলারের ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখবে বলে। শুধুই কি তাই? আসার সময় তাঁরা আবার সঙ্গে করে থালাইভার জন্য নিয়ে এসেছেন উপহার। একটি জাপানি শাল ও পাখা উপহার দিয়েছেন তাঁরা রজনীকান্তকে। তাঁরা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘জাপানে এক দিন পর ছবিটা মুক্তি পাবে, আর আমরা অপেক্ষা করতে চাইছি না। তা ছাড়া সেখানে হলগুলো ভীষণই চুপচাপ। কিন্তু ভারতে লোকজন সিটি দেবে, চিৎকার করবে। আমরা সেই উন্মাদনাটা মিস করতে চাইনি।’ ইয়াশুদা হিদেতোশি জাপানের ‘রজনীকান্ত ফ্যান ক্লাব’-এর নেতা। ২০ বছর ধরে রজনীভক্ত তিনি। রজনীকান্তের ছবি কোনো পরিস্থিতিতে মিস করতে চান না ইয়াশুদা। তাই থালাইভার ছবি দেখার জন্য নিজের স্ত্রীকে নিয়ে চেন্নাইয়ে এসে পৌঁছেছেন তিনি। ছবি নিয়ে যে জাপানি এই দম্পতি ভীষণ উত্তেজিত, তা স্পষ্ট তাঁদের সাজপোশাক থেকেই। রজনীকান্তের ছবি দেওয়া শার্ট পরেই ছবি দেখছেন তাঁরা।

নায়িকা তামান্না ৪০ বছরের ছোট রজনীকান্তের : সিনেমায় রজনীকান্তের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তামান্না ভাটিয়া। তাঁদের বয়সের ব্যবধান প্রায় ৪০ বছর। তারপরও শুধু রজনীকান্তজ্বরে ‘জেলার’ কাঁপাচ্ছে বিশ্ব।

সর্বোচ্চ আয়ের ৭ সিনেমা : রজনীকান্তের সবচেয়ে বেশি আয় করা সাত সিনেমা হলো- ২.০, এনথিরান, কাবালি, পেট্টা, দরবার, কালা ও লিঙ্গা।

ছিলেন বাস কন্ডাক্টর : সুপারস্টার রজনীকান্ত কিন্তু সিনেমা জীবনের আগে ছিলেন বাস কন্ডাক্টর। সে সময় কর্ণাটক বাস সার্ভিসের আরেক সহকারী ছিলেন পি রাজ বাহাদুর। যার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে রজনীর। এ বন্ধুটিই মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতেন রজনীকে। কারণ রজনীর মধ্যে ছিল অভিনয়সহ নানা গুণ। সেই সঙ্গে তাঁদের বিনোদিতও করতেন রজনী। আর এ গুণকে কাজে লাগাতে চাইতেন বন্ধু বাহাদুর। বন্ধু বাহাদুরের উৎসাহে চেন্নাইয়ের একটি অভিনয় একাডেমিতে ভর্তি হয়ে যান রজনীকান্ত। কিন্তু কোচিংয়ের জন্য বেশিক্ষণ কাজ করতে পারেন না বলে সে মতো পয়সাও উপার্জন করতে পারেন না তিনি। ফলে দুই বছর মেয়াদে যে অভিনয়ে কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছেন তার খরচ মেটানোও দায় হয়ে পড়ে। কিন্তু এবারও পাশে দাঁড়ান সেই বন্ধু বাহাদুর। কোর্স শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত রজনীকান্তকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন তিনি।

যেভাবে সিনেমায় : ১৯৭৫ সালে তামিল নির্মাতা কে বালাচন্দন ‘অপূর্ব রাগাঙ্গল’ নামের সিনেমায় প্রথমবার কাস্ট করেন রজনীকে। নিজের প্রথম সিনেমায়ই মাত করে দেন রজনীকান্ত। সিনেমাটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। আর পিছু ফিরতে হয়নি তাঁকে। অভিনয়ে যে ঝড় তার মধ্যে নির্মাতারা দেখেন তা আর বাকি ক্যারিয়ারে হতাশ করেনি রজনীকে। তাঁর দুর্দান্ত অভিনয়েও মানুষ মগ্ন হয়ে যায়। একের পর এক সিনেমার প্রস্তাব পেতে থাকেন তিনি। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলচ্চিত্রসহ অন্য দেশের সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। রজনীকান্তের ছবি মুক্তি মানে শুধু ছবি মুক্তি নয়। একটা উৎসবের ব্যাপার। কারণ থালাইভার ছবি মুক্তি মানেই তামিলে সব বন্ধ। অফিস আর কাজ ফেলে বা ছুটি নিয়ে সবাই হলে ছোটেন বলে অনেক অফিস ছবি মুক্তির দিনে বন্ধ রাখা হয়। দক্ষিণী এই সুপারস্টার এমন এক অভিনেতা, যিনি ২০১৯ সালে বয়স প্রায় সত্তরের কোঠায় পৌঁছানোর পরও ‘কালা’ ও ‘টু জিরো’র মতো ব্লকবাস্টার ছবি উপহার দিতে পারেন। তামিল, হিন্দি, মারাঠি, এমনকি মার্কিন ছবি নিয়ে রজনীকান্ত অভিনয় করেছেন ১৭৫-এরও বেশি ছবিতে।

পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মান : অনবদ্য দক্ষ অভিনয়ের কারণে ভারত সরকার রজনীকান্তকে ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মবিভূষণ’ দিয়ে সম্মানিত করেছে। অভিনয় জীবনে জাতীয়সহ নানা উল্লেখযোগ্য সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি।

সর্বোচ্চ পেইড অ্যাক্টর : ২০০৭ সালে ‘শিবাজি’ ছবিতে অভিনয় করে ২৬ কোটি টাকা উপার্জন করেন রজনী। সেই সময় জ্যাকি চ্যানের পর, তিনিই ছিলেন এশিয়ার সর্বোচ্চ ‘পেইড অ্যাক্টর’। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কোচাদাইয়া’ অ্যানিমেটেড ছবিতে রজনী অভিনয় করেন তিনটি চরিত্রে।

সর্বশেষ খবর