রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
নিয়ন্ত্রণের অভাবে থেমে নেই প্রতারণা

ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়ছে সাংস্কৃতিক সংগঠন

মোস্তফা মতিহার

ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়ছে সাংস্কৃতিক সংগঠন

সংস্কৃতির শক্তি, সুনাম ও জনপ্রিয়তাকে ভিন্ন খাতে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে মূলধারার সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো অজস্র সাংস্কৃতিক সংগঠন। সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চার নামে এই সংগঠনগুলো অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠনের বেশির ভাগেরই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক কোনো অনুমোদন নেই। নীতিমালা না থাকায় এসব সংগঠনের প্রতারণা বাড়ছে।

 

একটি জাতির পরিচয় ও জাতিসত্তার বিকাশে সংস্কৃতি সবচেয়ে শক্তিশালী নিয়ামক। সংস্কৃতির প্রতি সাধারণ মানুষের রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ ও অনুরাগ। সংস্কৃতির শক্তি, সুনাম ও জনপ্রিয়তাকে ভিন্ন খাতে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে মূলধারার সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো অজস্র সাংস্কৃতিক সংগঠন। সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চার নামে এই সংগঠনগুলো অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। ধামাকা নাচ-গানের নামে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল নাচ-গানের মাধ্যমে যুবসমাজের নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন ঘটাচ্ছেন এসব সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই রাজধানীর কোনো না কোনো মিলনায়তনে থাকছে এদের তৎপরতা। অনুষ্ঠান আয়োজনের আগে পোস্টার ও ব্যানারে দেশের প্রথম শ্রেণির তারকাদের নাম ও ছবি জুড়ে দিয়ে প্রতারণা করছে রাজধানীর এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠন। পোস্টারে ছবি ছাপানো প্রথম শ্রেণির বেশ কয়েকজন তারকা এই প্রতিবেদককে জানান, তারকাদের দেখার লোভে দর্শক ও ভক্তরা অনুষ্ঠানে গিয়ে তারকার দেখা পায় না বলে হতাশ হয়ে ফিরে আসে। বিভিন্নজন ফোন করে তাদের জানানোর আগ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলেও জানান ঢালিউডের কয়েকজন তারকাশিল্পী। টিকিট বিক্রির জন্য অপরিচিত ও আনকোড়া উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের নামের সঙ্গে চিত্রনায়ক, চিত্রনায়িকা, মডেল, অভিনেত্রী, গায়ক, গায়িকার খেতাব যুক্ত করে দিয়ে দর্শকদের সঙ্গেও প্রতারণা করছেন তারা। নব্য ও উঠতি ধনীদের প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি করা হয় এসব অনুষ্ঠানে। আলোচনা ও সেমিনারে তারা বক্তব্য রাখবেন, সে সব অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় প্রচারের কথা বলেন আয়োজকরা। টাকার বিনিময়ে এসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হয়ে এসে বক্তব্য রাখলেও সে সব কোনো গণমাধ্যমে প্রচার হয় না। একবার যে ব্যক্তি এসব সংগঠনের অতিথি হয়ে থাকেন দ্বিতীয়বার আর ওই পথে পা বাড়ান না। এতে আয়োজকদের প্রতারণা থেমে থাকে না। এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে ঘুরে বেড়ান তারা। তাদের টার্গেট থাকে অল্প সময়ে খ্যাতিমান হতে চাওয়া বিভিন্ন ব্যবসায়ী। অনুসন্ধানে জানা যায়, একই ব্যক্তি ১৬টি সংগঠন চালাচ্ছে। আর এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমে একেক সময় একেক উপলক্ষে আয়োজন করছে নানা অনুষ্ঠানের। ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় থাকতে এই সংগঠনগুলো তাদের কর্মকান্ডে রাজনীতিকে ব্যবহার করছে।

যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের গুণগান গেয়ে পাড়া-মহল্লার এসব সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের আখের গুছিয়ে নেন। রাজনৈতিক সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দিনের পর দিন এসব সংগঠন ফায়দা লুটতে থাকলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে এদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। একাধিক সংস্কৃতিকর্মী জানান, ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা এসব সংগঠনের বেশির ভাগেরই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক কোনো অনুমোদন নেই। কখনো কখনো সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারাও অননুমোদিত এসব অবৈধ সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে আসেন। নীতিমালা না থাকায় এসব সংগঠনের প্রতারণা বাড়ছে।

সর্বশেষ খবর